রাজকোট, 8 মার্চ : তিরিশ বছরের খরা কাটিয়ে রণজি ট্রফি ফিরিয়ে নিয়ে আসার লড়াই বাংলার ৷ সোমবার রাজকোটের ফাইনালে বাংলার সামনে চেতেশ্বর পূজারা, জয়দেব উনাদকাটদের সৌরাষ্ট্র ৷ সাম্প্রতিক অতীতে সৌরাষ্ট্রের রণজি ট্রফির পারফরম্যান্স যথেষ্ট নজরকাড়া । এমন একটি দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে কুঁকড়ে নেই বাংলা । কোচ অরুণলাল বলেছেন, দেশের সেরা বোলিং শক্তি নিয়ে নামছেন তাঁরা ৷ প্রতিপক্ষের বড় নামের চেয়ে নিজেদের শক্তি দুর্বলতা নিয়ে কাঁটাছেড়া করতে চান । তাই বাইশ গজের চরিত্র যাই হোক না কেন আগামী পাঁচদিন ট্রফির চিন্তা না করে সেরাটা নিংড়ে দেওয়াই "পাখির চোখ" মনোজ তিওয়ারিদের ।
কর্নাটককে ঘরের মাঠে হেলায় উড়িয়ে ভরপুর আত্মবিশ্বাস বাংলা শিবিরে । প্রতিপক্ষ সৌরাষ্ট্রের সাজঘরে জয়দেব উনাদকাট, চেতেশ্বর পূজারার মতো জাতীয় দলের ক্রিকেটার থাকলেও খুব একটা পাত্তা দিতে নারাজ অরুণ লালের ছেলেরা । বরং আরও বেশি করে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের জেদ বাংলার সাজঘরে । কোনও একজনের কাঁধে ভর দিয়ে রণজি জেতা সম্ভব নয় । খেলা শুরুর আগে সবার স্কোরবোর্ডে শূন্য লেখা থাকে । "রণজি ফাইনাল" কথাটির নো এন্ট্রি বাংলার সাজঘরে । প্রত্যেকেই সৌরাষ্ট্র ম্যাচটিকে আরও একটি নক-আউট ম্যাচ হিসেবে দেখতে চাইছেন । অভিমন্যুদের হেডস্যার বলছেন, "আমরা ফলাফলের কথা ভাবছি না । শুধু নিজেদের শক্তি ঝালিয়ে নিতে চাইছি ।"
ইতিমধ্যে রাজকোটের বাইশ গজ খুঁটিয়ে দেখেছে বাংলা । ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হলেও পিচ একটু শুকনো । ম্যাচের দিন উইকেটের চরিত্র কী দাঁড়ায় তা দেখে নিতে চাইছেন সবাই । আপাতত তিন পেসার এবং দুই স্পিনারে খেলার পরিকল্পনার ইঙ্গিত অরুণ লালের কথায় । ফাইনালে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা । সদ্য পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছেন ভারতীয় দলের উইকেটরক্ষক । তাঁর উপস্থিতিতে দল শক্তিশালী হয়েছে বলে মানছেন অরুণ লাল । প্রতিপক্ষের বড় নামের উপস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে বাংলার কোচ বলেছেন, "বিশেষ একজনকে নিয়ে চিন্তার চেয়ে প্রতিপক্ষের এগারোজনকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে চান তাঁরা ।"
চলতি রণজি ট্রফিতে কোনও প্রতিপক্ষই বাংলার বোলিংয়ের বিরুদ্ধে আড়াইশোর বেশি রান করতে পারেনি । ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমার, আকাশদীপরা গতি এবং সুইংয়ের তারতম্যে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করছেন । উইকেটের চরিত্র যাই হোক না কেন বাংলার পেসাররা অভ্রান্ত । অরুণ লাল বলছেন, তাদের কাজ প্রত্যাশিত ক্রিকেট মেলে ধরা । প্রথম বল থেকে প্রতিপক্ষের টুঁটি চেপে ধরার কথা অদৃশ্যভাবে ভেসে বেরাচ্ছে বাংলার প্রতিটি ক্রিকেটারের শরীরি ভাষায় । অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ জানিয়েছেন, ফাইনালের আগে দু'দিন ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলা । নিজেদের নিংড়ে দেওয়ার জন্য ছেলেরা তৈরি । উইকেট দেখে তিন পেসার দুই স্পিনার খেলানোর পরিকল্পনা ঠিক হয়েছে । তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ম্যাচের দিন সকালে নেওয়া হবে । ঋদ্ধিমান সাহার উপস্থিতিকে বোনাস বলছেন তিনি ।
অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারির চোয়াল চাপা লড়াইয়ে । বাংলাকে রণজি ফাইনালে তোলার অন্যতম কারিগর মনোজ তিওয়ারি । পঞ্জাবের বিরুদ্ধে উইকেট আঁকড়ে তাঁর অর্ধশতরান ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে ছিল । অনুশীলনে ফাইনালে ফের জ্বলে ওঠার ইঙ্গিত দিলেন মনোজ ।
তিরিশ বছর পর ভারতসেরা হওয়ার হাতছানি ৷ প্রতিপক্ষের বড় নাম নয়, নিজেদের নিংড়ে দিয়ে ট্রফি জয়ের কথা বলছেন সবাই । সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে অধিনায়ক অভিমন্যুকে ব্যাটে শান দিতেই হবে ।