কলকাতা, 20 জুন : ক্রিকেট মাঠে দাদাগিরি শুরুর 25 বছর পূর্ণ ৷ 1996 সালে আজকের দিনেই টেস্ট ক্রিকেটে আর্বিভাব হয়েছিল এক বঙ্গ তনয়ের ৷ এরপর ক্রিকেট বিশ্ব পেয়েছিল এক নেতাকে ৷ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি ভারতীয়দের শিখিয়েছিলেন বিদেশের মাটিতে চোখে চোখ রেখেও খেলা যায় ৷ জেতা যায় ৷ একই দিনে ভারতীয় ক্রিকেট আর্বিভাব হয়েছিল আরও এক কিংবদন্তি, রাহুল দ্রাবিড়ের ৷ বিশ্ব ক্রিকেট এমন নজির পাওয়া কঠিন, যেখানে একই দিনে টেস্টে অভিষেক করেছেন দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার ৷
সৌরভের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে আরও চার বছর আগে 1992 সালে, ওয়ানডে ক্রিকেটে ৷ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তরুণ সৌরভ করেছিলেন মাত্র 3 রান ৷ পরের ম্যাচেই প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়েন তিনি ৷ তবে অনেকের মতে সেই ম্যাচে 3 রান করার জন্য নয়, সৌরভ বাদ পড়েছিলেন ঔদ্ধত্য দেখানোর জন্য ৷ এই ঔদ্ধত্য বোধহয় তাঁর জন্মগত ৷ এই দাদাগিরি না থাকলে স্টিভ ওয়ার মতো অধিনায়ককে টসের জন্য মাঠে অপেক্ষা করানো য়ায় না ৷ এই ঔদ্ধত্য না থাকলে লর্ডসের ব্যালকনিতে টি-শার্ট খুলে ওড়ানো যায় না ৷ চোখে চোখ রেখে লড়াই করা যায় না ৷ সেই ম্যাচে চর্চায় এসেছিল, সৌরভ টিম প্লেয়ার নন ৷ তিনি মাঠে সতীর্থদের জন্য পানীয় নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন ৷ যদিও পরে তা নিজেই অস্বীকার করেন সৌরভ ৷ নিজের আত্মজীবনী ‘‘অ্যা সেঞ্চুরি ইজ নট গুড এনাফ’’ (A Century Is Not Good Enough)-এ মহারাজ এই বিষয়ে আলোকপাত করেন ৷ লেখেন, প্রথম সিরিজ়ে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় ৷ এক সিনিয়র ক্রিকেটার সৌরভকে বলেন, সেই সফরে খেলার যোগ্য তিনি নন ৷
এরপর চার বছরের অপেক্ষা ৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফের কামব্যাক হয় বাংলার মহারাজের ৷ তবে এবার টেস্ট ক্রিকেটে ৷ 1996 সালের 20 জুন ইংল্যান্ডের লর্ডসে ৷ ঐতিহাসিক লর্ডস থেকেই শুরু হয় দাদার দাদাগিরি ৷ প্রথম ইনিংসেই শতরান করে বুঝিয়ে দেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া ৷ 301 বল খেলে করেন 131 রান ৷ একই ম্যাচে আরও এক অভিষেককারী রাহুল দ্রাবিড় মাত্র 5 রানের জন্য শতরান হাতছাড়া করেন ৷ তবে লর্ডসের শতরান যে তাঁর আকস্মিক সাফল্য নয়, তা ফের প্রমাণ করেন সৌরভ ৷ টেন্ট ব্রিজে পরের ম্যাচেই 268 বলে করেন 136 রান ৷ দ্রাবিড় করেন 84 ৷ অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে অসাধারণ ড্রাইভ দেখে বিশ্ব ক্রিকেট চমকে যায় ৷ চর্চায় আসে সৌরভের নতুন নাম ‘গড অফ অফসাইড’ (God of Offside) ৷
এরপর বিশ্ব ক্রিকেটে দাদার দাদাগিরি চলতেই থাকে ৷ পরের বছরেই ওয়ানডে ক্রিকেটে আসে প্রথম শতরান ৷ সেই বছরের শেষ দিকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাহারা কাপের পরপর চারটি ম্যাচে ম্যান অফ দা ম্যাচ পুরস্কার পান ৷ গড়াপেটা বিতর্কের পর 2000 সালে অগোছালো ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেন সৌরভ ৷ ধীরে ধীরে তাঁর অধিনায়কত্ব প্রশংসিত হতে থাকে বিভিন্ন মহলে ৷ তৎকালীন ভারতীয় কোচ ও প্রাক্তন নিউজ়িল্যান্ড ক্রিকেটার জন রাইটের সঙ্গে জুড়ি বেঁধে একের পর এক সিরিজে জয় তুলে নেন ৷ সৌরভের অধিনায়কত্বে বদলে যায় ভারতীয় ক্রিকেট ৷ সৌরভের অধীনেই 2003 সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত ৷ তাঁর অধীনেই ভারতীয় দলে যোগ দেন যুবরাজ সিং, হরভজন সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি সহ একাধিক তরুণ ক্রিকেটার ৷
2005 সালে ফের খবরের শিরোনামে আসেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ জন রাইটের পরবর্তী ভারতীয় দলের কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গে তাঁর সংঘাত বিশ্ব বর্ণিত ৷ এরপর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন তিনি ৷ তবে নামটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ কামব্যাক করা তাঁর রক্তে ৷ ফের ফিরে আসেন ভারতীয় ক্রিকেটে ৷ যদিও 2008 সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজের জীবনের শেষ টেস্ট খেলেন মহারাজ ৷
তবে ভারতীয় ক্রিকেট থেকে তাঁকে দূরে রাখা যায়নি ৷ 2016 সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য হন ৷ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যও হন সৌরভ ৷ 2019 সালের 23 অক্টোবর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব নেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন : Father's day : বাবার শৈশবের স্মৃতি আগলে রেখেছেন সচিন, পাপাকে মিস করছেন হার্দিক
তিনিই প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার, যিনি ভারতীয় বোর্ডের প্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ৷ অন্যদিকে এক বর্ণাঢ্য ক্রিকেট কেরিয়ার কাটানোর পর প্রথমে ভারতীয় যুবদলের দায়িত্ব নেন রাহুল দ্রাবিড় ৷ বর্তমানে বেঙ্গালুরুর ন্যাশানাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধানের দায়িত্ব সামালাচ্ছেন তিনি ৷