কলকাতা : কিছুদিন আগেই কোরোনার মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিলেন বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ইউটিউবর 'দা বং গাই', অর্থাৎ কিরণ দত্ত । সকলের আশীর্বাদ কুড়িয়েছিলেন সেই সময় । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, কিছুদিনের মধ্যেই এই কিরণ দত্তর বিরুদ্ধে FIR করল একটি ওয়েব সংবাদ মাধ্যম । কী হয়েছিল যে এত বড় পদক্ষেপ নিতে হল সেই সংবাদ মাধ্যমকে ? কী করেছিলেন কিরণ ? থানাপুলিশের এই জটিলতাকে কীভাবেই বা সামলাবেন এখন তিনি ? পুরোটা খতিয়ে দেখল ETV ভারত সিতারা ।
জনতা কারফিউয়ের দিন ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োর দৌলতে সকলেই এখন 'চা কাকুকে' চিনে গেছে । যাদবপুরের শ্রী কলোনির সেই বাসিন্দা মৃদুল দেবের দৈনন্দিন জীবন অর্থের অভাবে কতখানি বিপন্ন এবং তাঁকে নিয়ে ভাইরাল হওয়া ট্রোলে যে তিনি কতখানি আহত, তাই নিয়ে একটি ওয়েব পোর্টাল একটি নিউজ় করে । প্রতিবেদনটি ভিজ়ুয়াল সমেত পাবলিশ করা হয়, যাতে রয়েছে মৃদুলবাবুর বক্তব্য, সাংবাদিকের প্রশ্ন এবং এক মহিলার ভয়েজ় ওভার শোনা যায় । প্রতিবেদনটির কমেন্ট সেকশনেই একটি কমেন্ট করেন কিরণ । এরপরই অভিযোগ ওঠে তিনি নাকি সেই কমেন্টের মাধ্যমে সরাসরি আক্রমণ করেছেন মহিলা সাংবাদিকটিকে । বলেছেন যে, পোর্টালটি ভিউজ় বাড়ানোর জন্য এই প্রতিবেদন করেছে । আর তারপরেই ওয়েব পোর্টালটি 7 এপ্রিল গরফা থানায় FIR করে কিরণের বিরুদ্ধে।
FIR'এর বয়ান অনুযায়ী, "এই খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর, পেশায় ইউটিউবার জনৈক কিরণ দত্ত নামে এক ব্যক্তি আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে উক্ত খবরটির প্রেক্ষিতে অত্যন্ত আপত্তিকর, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, উস্কানিমূলক ও মানহানিকর একটি মন্তব্য করেন।" মন্তব্যটির স্ক্রিনশট অভিযোগপত্রের সঙ্গে দেওয়া হয় ।
এরপর কিরণের সঙ্গে কথা বলি আমরা । ফোনের ওপারে তিনি আমাদের বলেন, "আমার আর একজন অভিনেতার (পড়ুন অঙ্কুশ হাজরা) মধ্যে যখন ঝামেলা লেগেছিল, তখন আমায় নিয়ে অনেক কুরুচিকর মন্তব্য করা হয় । সেই সময় আমি কোনও প্রতিক্রিয়া দিইনি । কিন্তু কিছুদিন আগে 'চা কাকু'কে নিয়ে যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল, সেটা নিয়ে এই পোর্টাল ড্রামাটিক মিউজিক লাগিয়ে বলে যে, ওঁকে নিয়ে ট্রোল করা ভুল হয়েছে । বলে যে, ওঁর সামাজিক জীবনে আঘাত পড়ছে । তার আগে চা কাকুর ছেলের সঙ্গে আমার কথা হয়ে গেছে । বলেছিলাম, ওঁদের কোনও সাহায্য লাগলে যেন আমাকে ফোন করে । আমি ওঁদের অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস শেয়ার করেছিলাম আমার পেজে । সেখান থেকে ওঁরা মোটামুটি ৫ লাখ টাকা পেয়েওছিল । এই ওয়েব পোর্টালের খবরের নিচে আমি একটা কমেন্ট করি । বলি যে, চা কাকুকে সবার সুইট লেগেছে বলে ট্রোল করেছে । ওঁকে আক্রমণ করতে আমি অন্তত দেখিনি ।"
বলে চলেন কিরণ, "সেখানে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এই কি সেই মহিলা সাংবাদিক যিনি আমার সঙ্গে অঙ্কুশের ঝামেলার সময়ও ছিলেন ? আমি সেখানে কারও নাম নিইনি বা ছবিও ব্যবহার করিনি । আমি 'জঘন্য সাংবাদিক' বলে সম্বোধন করি । সেটা ওঁরা বলছে, আমি নাকি অশালীন ভাষা ব্যবহার করেছি । 'জঘন্য' যদি অশালীন ভাষা হয়, তাহলে বহুকাল আগে আমাকে যেগুলো বলেছিল ওরা, সেগুলো কী? ওই নিউজ় পোর্টালে যারা কাজ করেন, তারা আমার ছবিসহ নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলে বিভিন্ন মন্তব্য করতে শুরু করেন । বলতে থাকেন আমি নাকি নেশা করে পড়ে থাকি, আমার কনটেন্টে নাকি থুতু ফেলা উচিত ।"
"আমি শুনেছি, ওরা নাকি আমার বিরুদ্ধে FIR করেছে । তবে আমায় কেউ ইনফর্ম করেনি । আমি অনেক পরে জানতে পেরেছি । আমি যতটা না পার্সোনাল অ্যাটাক করেছি, ওরা ওদের পার্সোনাল প্রোফাইল থেকে আমাকে অনেক বেশি পার্সোনাল অ্যাটাক করেছে । আমারই তো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত । আমি এবং আমার বাড়ির লোক এখন আমাদের আইনজীবীর সঙ্গেই কথা বলছি এই বিষয় নিয়ে ।", জানালেন কিরণ ।