কলকাতা : 'আর্কিমিডিসের মৃত্যু' নাটকটির নির্দেশনা দিচ্ছেন চন্দন সেন। আর্কিমিডিসের মৃত্যু কি কোথাও গিয়ে সভ্যতার অপচয়? উত্তর খুঁজবে এই নাটক।
চন্দন সেন বলেন, "আর্কিমিডিস একটি যুদ্ধের অস্ত্র তৈরি করেছিলেন। সেই অর্থে প্রথম মিসাইল। সেটা দিয়ে তাঁরা রোমকে যুদ্ধে আটকে দেয়। অত বড় একটা রাষ্ট্র শুধুমাত্র একটা অস্ত্রের কারণে পরাজয় মেনে নেয়। সেই জায়গাটার নাম সিরাকিউজ। রাজা বলে রোমের সঙ্গে তো পারবে না। তাই সন্ধি করতে এসেছিলেন, যাতে বিষয়টা বেশি দূর না গড়ায়। শান্তি চুক্তির শর্ত হয় যে, যে সমস্ত যুদ্ধাস্ত্র আর্কিমিডিস বানিয়েছেন, সেগুলির কারিগরি কৌশল সব তাদের দিয়ে দিতে হবে। তাহলে রোম আর আক্রমণ করবে না। তাতে আর্কিমিডিস রাজি হয় না। সেখানকার যে বণিক সঙ্ঘ, চাপ দিতে থাকে যাতে আর্কিমিডিস ওদের হাতে সব তুলে দেন। যাতে তারা অস্ত্রের বাজার ধরতে পারে। তবে আর্কিমিডিস তাদের না বলে দেন। ভেঙে ফেলা হয় আর্কিমিডিসের অস্ত্র। রোমকে বলে ঢুকে আসতে। রোমান সেনাপতি এসে আর্কিমিডিসকে বলেন, হয় আপনি অস্ত্র দিয়ে দিন না হয় রোমে এসে থাকুন। এদিকে আর্কিমিডিসের ধারণা, হেলেনীয় সভ্যতার যাঁরা মাথা, তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁকে সম্মান করবেন। কিন্তু আর্কিমিডিস বুঝতে পারে সেটা তাদের আসল উদ্দেশ্য নয়। আসল উদ্দেশ্য যুদ্ধাস্ত্রগুলো দখল করা। আর্কিমিডিস তাতেও রাজি হন না। প্রাণ দিতে হয়। এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে, যুদ্ধাস্ত্রের নামে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতে গিয়ে বিজ্ঞানীর মেধাকে অপচয় করা, আর সেই অপচয় সভ্যতার অপচয়।"
আরও পড়ুন : ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে আমার নাম নিয়ে টাকা চাইছে : রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত
নাটকের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে চন্দন সেন বললেন, "কারণ আজকের দিনে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ব্যবসার নাম যুদ্ধ। তার সঙ্গে দেখানো হবে বিজ্ঞানকে কীভাবে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে। আরেকটা বিষয় হল, আমরা সংখ্যাগুরু, তাই আমরাই নির্ধারণ করব কী হবে, তাতে যদি আজকের দিনে কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। এটা ভীষণ সিরিয়াস একটা নাটক। সমাজের সবচেয়ে বড় বড় মেধা চলে গেছে যুদ্ধাস্ত্র বানানোর কাজে। এই যে বিজ্ঞানকে শুধুমাত্র ব্যবসার কাজে লাগানো হচ্ছে, সেটা যে কিছুতেই সাধারণ মানুষের উন্নতির কাজে লাগানো হয় না, সেই জায়গাটাই আমরা ধরতে চেয়েছি এই নাটকে।"
নাটকটি লিখেছেন নবেন্দু সেন। বহু পুরনো একটি নাটক, তাঁরা বহু আগে মঞ্চস্থ করেছিলেন। স্বয়ং শম্ভু মিত্র দেখেছিলেন নাটকটি। অনেক বছর পর অশোকনগর নাট্যআননের হাত ধরে নাটকটি ফিরছে মঞ্চে। যা স্ক্রিপ্ট ছিল, সেটাকেই রাখা হয়েছে। নাটক নির্দেশনার পাশাপাশি আর্কিমিডিসের চরিত্রেও অভিনয় করতে দেখা যাবে চন্দন সেনকে। রোমের সেনাধক্ষ মার্সিলিউসের চরিত্রে দেখা যাবে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়কে। যে ব্যবসায়ী গোটা যুদ্ধের পরিসংখ্যানকে ঘুরিয়ে দেয়, সেই ব্যবসায়ীর চরিত্রে অভিনয় করছেন পঞ্চানন ব্যানার্জি।