ETV Bharat / sitara

ভারতের বিনোদন জগতে প্রতিভা এবং নিরপেক্ষতার পুনরুত্থান - ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উথ্থান

তাৎপর্যপূর্ণভাবেই তাই, অতীতের একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রী ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের কেরিয়ারের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পেরেছেন । ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চালিত ওয়েব সিরিজে একাধিক অভিনেতা, অভিনেত্রীর পুনরুত্থান আদপে এটাই বোঝায় যে রক্ষণশীলতার বাইরে হাঁটা চিত্রনাট্য কণ্ঠ পেয়েছে এবং সরকারি কোপে পড়ে হারিয়ে যায়নি ।

ott
ott
author img

By

Published : Feb 5, 2021, 12:57 PM IST

রুপোলি পর্দা আক্ষরিক অর্থেই লাখ লাখ মানুষের কাছে স্বপ্নের জগত । তারকাদের অভিনীত চরিত্রগুলি দর্শকদের মুগ্ধও যেমন করে, তেমনই বিষণ্ণও করে তোলে । আর অনেকেই তাদের অভিনীত চরিত্রের গুণে দর্শকদের কাছে অমর হয়ে রয়েছেন ।বড় পর্দা পরে ছোট পর্দার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে । যার ফলে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা দর্শকদের কাছে, তাদের ঘরের ভিতরে পৌঁছে যেতে পেরেছেন তাও আবার নির্দিষ্ট, নির্ধারিত সময়ে । প্রথমে একটা নব ঘুরিয়ে আর পরে রিমোট কন্ট্রোলের বোতামে আলগা একটা চাপই লাখ লাখ মানুষের বাড়ির ভিতরে ডাইনিং টেবিলে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে পারে বা বিনোদনের সেরা সম্ভার প্রদান করতে পারে ।

তবে বর্তমানে ওভার-দ্য-টপ মিডিয়ার (ওটিটি) আগমণে এই শ্রেণিবিভাগও গৌণ হয়ে পড়েছে । শীঘ্রই হয়তো এর উপস্থিতি বড় পর্দার অভিজ্ঞতাকে অতীত করে দেবে । এই নিয়োগ-নির্ভর দেখা, যা টেলিভিশন এবং ছবির জগতকে বহুবছর ধরে শাসন করে এসেছে এবং দর্শকদের মধ্যে নিজের ইচ্ছায় কিছু দেখার প্রবণতা গড়ে তুলেছে, এইভাবে অভিনেতা অভিনেত্রীদের শ্রেণিবিভাগের জেরে তাঁদের তারকাসুলভ বৈশিষ্ট্যে অবশ্যই বড়সড় বদল আনবে ।

তাৎপর্যপূর্ণভাবেই তাই, অতীতের একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রী ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের কেরিয়ারের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পেরেছেন । ভারত বর্তমানে এমন তারকাদের পর্দায় পুনরুত্থান দেখছেন, যারা নিজেদের সময়ে বিনোদন জগতে প্রতিযোগিতার ভিড়ে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিলেন । কিন্তু ওটিটি দুনিয়ায় নিজেদের অভিনব জায়গা করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন । একজন অভিনেতা যিনি এই নয়া প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছেন এবং সম্ভবত এরই সাহায্যে দ্বিতীয়বার নিজের অভিনয় জীবনের মধ্য গগনে এসে পৌঁছেছেন, তিনি সইফ আলি খান । সইফের সাম্প্রতিকতম নিদর্শন, ‘তাণ্ডব’ এবং ‘স্যাকরেড গেমস’ বিতর্কে জড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু এই দুই সিরিজের নির্মাণকারী প্রোডাকশন হাউসগুলি এই গল্প বলেছে উদারপন্থী ভাবধারার দর্শকদের জন্য । শাশুড়ি-বৌমা সিরিয়ালের দর্শকদের যেমন প্রাধান্য ছিল নব্বইয়ের দশকে, যা 2000 সালে ক্ষয়ে যায় । কিন্তু তারপর থেকে ভারতীয় দর্শকদের রুচি এবং গল্প বলার স্টাইল, দুইই বিবর্তিত হয়েছে ।

আরও পড়ুন : উচ্চমানের কনটেন্টে নতুন জীবন দিয়েছে আঞ্চলিক মালায়ালম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম

গ্রামীণ দর্শকরা রূপান্তরের আবহে রয়েছেন এবং শহুরে দর্শকদের দাবি, মিলেনিয়াম এবং মিলেনিয়াম–পরবর্তী সময়ের নতুন নতুন গল্প । তারা বাস্তবধর্মী কাহিনি চান, এদের বেশিরভাগেরই গল্প যথাযথ না হলেও চলবে, নায়কের মধ্যে খুঁত, ত্রুটি থাকলেও চলবে কিন্তু তাকে সহজ, স্বাভাবিক এবং মানবিক হতে হবে, যে বাস্তব জীবনের যাবতীয় সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে চলে । মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত ‘ফ্যামিলি ম্যান’ এমন একজন গ্ল্যামারহীন, সিক্রেট এজেন্টের গল্প বলে, যে একইসঙ্গে দেশকে সুরক্ষিত রাখে এবং একজন মধ্যবিত্ত ভারতীয় পুরুষ যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তার মোকাবিলাও করে । সুস্মিতা সেন এবং চন্দ্র সিংয়ের ‘আরইয়া'র গল্প একটি স্বাভাবিক ভারতীয় পরিবারকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে, যাদের অস্তিত্বরক্ষার স্বার্থে অপরাধের দুনিয়ায় প্রবেশ করতে হয় এবং রাজত্ব করতে হয় । ববি দেওলের ‘আশ্রম’ আবার একটি জটিল আলেখ্য, যা সত্য-উত্তর ভারতীয় দর্শকদের জন্য তৈরি হয়েছে ।

আরও পডু়ন : "মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটাও, নাহলে..", কী বললেন অর্জুন ?

গ্ল্যামারবিহীন বাস্তবতার নিজস্ব আবেদন আছে এবং পাঁচশো কোটি টাকার বিপুল বাজেটে তৈরি ছবির বড় আলো থেকে দূরে থাকা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অনেক বেশি ভাল অভিনয় করেন । তাঁরা চরিত্রের গভীরতার খোঁজ করেন এবং ওয়েব সিরিজে তাঁদের অনেক বেশি স্ক্রিন-প্রেজেন্স তথা পর্দায় উপস্থিতি থাকে । ওয়েব সিরিজ দীর্ঘমেয়াদি হয়, যার মধ্যে চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট থাকে অথচ এটি একেবারেই ব্যতিক্রমী সৃষ্টি হয়, যাকে না ছায়াছবির মতো ঘণ্টা দুই আড়াইয়ের ছাঁদে ফেলা যায় আবার না আধঘণ্টার ধারাবাহিকের স্লটে ফেলা যায়, যা টিভির পর্দায় রাজত্ব করে ।

আরও পড়ুন : 9 মাস গর্ভাবস্থাতেও চনমনে করিনা

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চালিত ওয়েব সিরিজে একাধিক অভিনেতা, অভিনেত্রীর পুনরুত্থান আদপে এটাই বোঝায় যে রক্ষণশীলতার বাইরে হাঁটা চিত্রনাট্য কণ্ঠ পেয়েছে এবং সরকারি কোপে পড়ে হারিয়ে যায়নি । বর্তমানে যদিও সরকার চেষ্টা করছে এই সমস্ত প্ল্যাটফর্মকে কোনও এক ধরনের নজরদারি কর্তৃপক্ষের আওতায় নিয়ে আসতে, যদিও সেই উদ্যোগ ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মতোই এখনও পর্যন্ত ধোঁয়াশায় ভরা । তবে বদলের যে ধারা দেখা গিয়েছে, যেখানে ইতিপূর্বে কোণঠাসা হয়ে পড়া প্রতিভা, যাদের দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার মানসিকতা ছিল, তারা আবার নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছেন । এই ইন্ডাস্ট্রি যখন স্বজনপোষণের অভিযোগে বারবার বিদ্ধ হয়েছে, অভাবনীয়ভাবে তখনই ভারতের বিনোদন জগতে এমন একটি স্তরের আবির্ভাব হয়েছে, যেখানে স্বজনপোষণ ছাড়াই, নিরপেক্ষভাবে কাজ হয় ।

ভার্গিস পি আব্রাহাম, ইটিভি ভারত

রুপোলি পর্দা আক্ষরিক অর্থেই লাখ লাখ মানুষের কাছে স্বপ্নের জগত । তারকাদের অভিনীত চরিত্রগুলি দর্শকদের মুগ্ধও যেমন করে, তেমনই বিষণ্ণও করে তোলে । আর অনেকেই তাদের অভিনীত চরিত্রের গুণে দর্শকদের কাছে অমর হয়ে রয়েছেন ।বড় পর্দা পরে ছোট পর্দার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে । যার ফলে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা দর্শকদের কাছে, তাদের ঘরের ভিতরে পৌঁছে যেতে পেরেছেন তাও আবার নির্দিষ্ট, নির্ধারিত সময়ে । প্রথমে একটা নব ঘুরিয়ে আর পরে রিমোট কন্ট্রোলের বোতামে আলগা একটা চাপই লাখ লাখ মানুষের বাড়ির ভিতরে ডাইনিং টেবিলে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে পারে বা বিনোদনের সেরা সম্ভার প্রদান করতে পারে ।

তবে বর্তমানে ওভার-দ্য-টপ মিডিয়ার (ওটিটি) আগমণে এই শ্রেণিবিভাগও গৌণ হয়ে পড়েছে । শীঘ্রই হয়তো এর উপস্থিতি বড় পর্দার অভিজ্ঞতাকে অতীত করে দেবে । এই নিয়োগ-নির্ভর দেখা, যা টেলিভিশন এবং ছবির জগতকে বহুবছর ধরে শাসন করে এসেছে এবং দর্শকদের মধ্যে নিজের ইচ্ছায় কিছু দেখার প্রবণতা গড়ে তুলেছে, এইভাবে অভিনেতা অভিনেত্রীদের শ্রেণিবিভাগের জেরে তাঁদের তারকাসুলভ বৈশিষ্ট্যে অবশ্যই বড়সড় বদল আনবে ।

তাৎপর্যপূর্ণভাবেই তাই, অতীতের একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রী ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের কেরিয়ারের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পেরেছেন । ভারত বর্তমানে এমন তারকাদের পর্দায় পুনরুত্থান দেখছেন, যারা নিজেদের সময়ে বিনোদন জগতে প্রতিযোগিতার ভিড়ে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিলেন । কিন্তু ওটিটি দুনিয়ায় নিজেদের অভিনব জায়গা করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন । একজন অভিনেতা যিনি এই নয়া প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছেন এবং সম্ভবত এরই সাহায্যে দ্বিতীয়বার নিজের অভিনয় জীবনের মধ্য গগনে এসে পৌঁছেছেন, তিনি সইফ আলি খান । সইফের সাম্প্রতিকতম নিদর্শন, ‘তাণ্ডব’ এবং ‘স্যাকরেড গেমস’ বিতর্কে জড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু এই দুই সিরিজের নির্মাণকারী প্রোডাকশন হাউসগুলি এই গল্প বলেছে উদারপন্থী ভাবধারার দর্শকদের জন্য । শাশুড়ি-বৌমা সিরিয়ালের দর্শকদের যেমন প্রাধান্য ছিল নব্বইয়ের দশকে, যা 2000 সালে ক্ষয়ে যায় । কিন্তু তারপর থেকে ভারতীয় দর্শকদের রুচি এবং গল্প বলার স্টাইল, দুইই বিবর্তিত হয়েছে ।

আরও পড়ুন : উচ্চমানের কনটেন্টে নতুন জীবন দিয়েছে আঞ্চলিক মালায়ালম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম

গ্রামীণ দর্শকরা রূপান্তরের আবহে রয়েছেন এবং শহুরে দর্শকদের দাবি, মিলেনিয়াম এবং মিলেনিয়াম–পরবর্তী সময়ের নতুন নতুন গল্প । তারা বাস্তবধর্মী কাহিনি চান, এদের বেশিরভাগেরই গল্প যথাযথ না হলেও চলবে, নায়কের মধ্যে খুঁত, ত্রুটি থাকলেও চলবে কিন্তু তাকে সহজ, স্বাভাবিক এবং মানবিক হতে হবে, যে বাস্তব জীবনের যাবতীয় সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে চলে । মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত ‘ফ্যামিলি ম্যান’ এমন একজন গ্ল্যামারহীন, সিক্রেট এজেন্টের গল্প বলে, যে একইসঙ্গে দেশকে সুরক্ষিত রাখে এবং একজন মধ্যবিত্ত ভারতীয় পুরুষ যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তার মোকাবিলাও করে । সুস্মিতা সেন এবং চন্দ্র সিংয়ের ‘আরইয়া'র গল্প একটি স্বাভাবিক ভারতীয় পরিবারকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে, যাদের অস্তিত্বরক্ষার স্বার্থে অপরাধের দুনিয়ায় প্রবেশ করতে হয় এবং রাজত্ব করতে হয় । ববি দেওলের ‘আশ্রম’ আবার একটি জটিল আলেখ্য, যা সত্য-উত্তর ভারতীয় দর্শকদের জন্য তৈরি হয়েছে ।

আরও পডু়ন : "মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটাও, নাহলে..", কী বললেন অর্জুন ?

গ্ল্যামারবিহীন বাস্তবতার নিজস্ব আবেদন আছে এবং পাঁচশো কোটি টাকার বিপুল বাজেটে তৈরি ছবির বড় আলো থেকে দূরে থাকা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অনেক বেশি ভাল অভিনয় করেন । তাঁরা চরিত্রের গভীরতার খোঁজ করেন এবং ওয়েব সিরিজে তাঁদের অনেক বেশি স্ক্রিন-প্রেজেন্স তথা পর্দায় উপস্থিতি থাকে । ওয়েব সিরিজ দীর্ঘমেয়াদি হয়, যার মধ্যে চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট থাকে অথচ এটি একেবারেই ব্যতিক্রমী সৃষ্টি হয়, যাকে না ছায়াছবির মতো ঘণ্টা দুই আড়াইয়ের ছাঁদে ফেলা যায় আবার না আধঘণ্টার ধারাবাহিকের স্লটে ফেলা যায়, যা টিভির পর্দায় রাজত্ব করে ।

আরও পড়ুন : 9 মাস গর্ভাবস্থাতেও চনমনে করিনা

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চালিত ওয়েব সিরিজে একাধিক অভিনেতা, অভিনেত্রীর পুনরুত্থান আদপে এটাই বোঝায় যে রক্ষণশীলতার বাইরে হাঁটা চিত্রনাট্য কণ্ঠ পেয়েছে এবং সরকারি কোপে পড়ে হারিয়ে যায়নি । বর্তমানে যদিও সরকার চেষ্টা করছে এই সমস্ত প্ল্যাটফর্মকে কোনও এক ধরনের নজরদারি কর্তৃপক্ষের আওতায় নিয়ে আসতে, যদিও সেই উদ্যোগ ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মতোই এখনও পর্যন্ত ধোঁয়াশায় ভরা । তবে বদলের যে ধারা দেখা গিয়েছে, যেখানে ইতিপূর্বে কোণঠাসা হয়ে পড়া প্রতিভা, যাদের দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার মানসিকতা ছিল, তারা আবার নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছেন । এই ইন্ডাস্ট্রি যখন স্বজনপোষণের অভিযোগে বারবার বিদ্ধ হয়েছে, অভাবনীয়ভাবে তখনই ভারতের বিনোদন জগতে এমন একটি স্তরের আবির্ভাব হয়েছে, যেখানে স্বজনপোষণ ছাড়াই, নিরপেক্ষভাবে কাজ হয় ।

ভার্গিস পি আব্রাহাম, ইটিভি ভারত

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.