কলকাতা : এক ওয়েদার রিপোর্টার। ৯ বছর ধরে শহরের একটি বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক 'দ্য সেন্টিনেল'-এ কাজ করে সে। ওয়েদার রিপোর্টারদের জীবন যেরকম হয়, তারও সেরকমই থোর-বরি-খাড়া-খাড়া-বরি-থোর জীবন। আবহাওয়া কোনদিকে ঘুরছে - কতখানি বৃষ্টি, কতখানি রোদ, কতটা গরম, কতটা ঠান্ডা, এর বাইরে ব্রেকিং বলতে সুনামি, আয়লার মতো গুরুত্বপূর্ণ খবর বছরে এক-দুবার বাইলাইন। এহেন ওয়েদার রিপোর্টার শান্তিলালের (ঋত্বিক চক্রবর্তী) হাতে আসে দুরন্ত ব্রেকিং। এক অন্য ঝড় তুলে দেওয়া খবর। এবং সেই খবরকে ঘিরেই সাদামাটা শান্তিলালের ক্যারিয়ারে শুরু হয় উল্লেখযোগ্য অধ্যায় - যেটাকে সংলাপের মাধ্যমে পরিচালক প্রতিম দাশগুপ্ত বলেছেন, "প্রত্যেক সাংবাদিকের একটা দিন থাকে"।
ছবির নামকরণের মধ্যে সাংবাদিক শান্তিলালের উল্লেখ আছে। আরও একটি শব্দ রয়েছে রহস্যের মতো - প্রজাপতি। যে শব্দটি শুনলে সাধারণ বুদ্ধিতে মানুষ প্রথমেই ভেবে নেবে ব্রহ্মার কথা। যিনি প্রণয়ের দেবতা, অর্থাৎ বিবাহের। আগেই বলে রাখি, এখানে বিবাহের কোনও লেশমাত্র নেই। এখানে প্রজাপতি সম্পূর্ণ অন্য একটি বিষয়। যেটার মধ্যে রোম্যান্স নেই, কিন্তু আছে বাকিটা। মানেটা বুঝে নিন। এর বেশি বলা বারণ। না হলে সেটা স্পয়লার হয়ে যাবে ।
আমাদের জীবনে কিছু অন্ধকার দিক আছে। সেই দিকগুলো আমরা আড়ালে রাখতে পছন্দ করি। কিন্তু সেটা দিকটা থেকে যায়। ভীষণ বাস্তবভাবেই। সেটা একটা অপরাধ জগতের আয়তায় পড়ে। হারিয়ে যাওয়া সারল্যের নিষ্ঠুর জগৎ। একসময় সেই জগতের অংশীদার ছিল ছবির অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নন্দিতা। মানে, যে চরিত্রে পাওলি দামকে দেখবে দর্শক। পাওলি ছবিতে একজন সফল অভিনেত্রী। একেবারে সেরা। এই সাংবাদিকের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে সাক্ষাৎ হয় নন্দিতার। তারপর ঘটে পরিণতি।না না প্রেম নয়। এই পরিণতি অত্যন্ত মানবিকভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক। সাংবাদিকদের একটা বদনাম আছে। তাঁরা নাকি নির্মম। তাঁদের খবর মানুষের জীবন ওলটপালট করে দিতে পারে। কিন্তু এখানে অদ্ভুতভাবে শান্তিলাল, নন্দিতার জীবনের কালো অধ্যায়কে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। কেন দেয়? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে 'শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য'।
ছবিটি মেদহীন। যথাযথ চিত্রনাট্য। প্রতিমকে বলতে হয়, তিনি এই ছবিতে আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত। শুধু মনে হবে, রূঢ় বাস্তবকে সাহসিকতার সঙ্গে সেলুলয়েডে তুলে ধরেছেন প্রতিম। কিন্তু কোথাও বাড়াবাড়ি মনে হয়নি। বাংলার মধুর ভান্ডারকার যাঁকে বলে! প্রতিমের একসময়কার সাংবাদিকতার জীবনের ছায়া আছে এই ছবিতে। অনেক সাংবাদিকই নস্টালজিক হয়ে পড়বেন। আমজনতা আঁচ পাবেন তাঁদের জীবনের।অভিনয় প্রসঙ্গে বলতে চাই, ঋত্বিক, পাওলি, চিত্রাঙ্গদা অম্বরিশ, গৌতম ঘোষ সকলেই যথাযথ পাঠ করেছেন। তবে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর আরও ভালো হতে পারত। গানের প্রাদুর্ভাব কমানো যেত। সব মিলিয়ে 'শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য' একটি ভালো থ্রিলার ছবি। যেখানে প্রতিমের সাংবাদিক চরিত্র শান্তিলাল এক উহ্য থাকা গোয়েন্দা, দর্শক যার সিকুয়েলের অপেক্ষায় থাকবে।