ছিমছাম ঘরকন্নার মাঝে হারিয়ে যাওয়া মা-বউমাদের স্পটলাইটে ফিরিয়ে আনলেন চিত্রনাট্যকার ও গল্পনির্মাতা সম্রাজ্ঞী ব্যানার্জি এবং পরিচালক পৃথা চক্রবর্তী। এই ছবি দেখে হল থেকে বেরোনোর পর আমাদের ঘরের মা-বউমারা হয়তো নিজেদের মধ্যে অধিকার দখলের লড়াই থেকে এবার অবসর নেবেন। হয়তো একে অপরকে একটু বুঝবেন। একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠবেন। নারী দিবসের দিন এমন একটি ছবি উপহার দেওয়ার জন্য 'উইন্ডোজ় প্রোডাকশন হাউজ়' তথা প্রযোজক নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কথায় আছে মেয়েরা নাকি মেয়েদের সবচেয়ে বড় শত্রু। সত্যি কি তাই? নাকি এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে নারীর সঙ্গে লড়িয়ে দেওয়া হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে? যাতে তারা মেতে থাকে নিজেদের মধ্যে অধিকার দখলকে নিয়ে। সেটা কর্মস্থল হোক কিংবা আলমারির চাবি। মেয়েদের মধ্যে লড়াই বাঁধায় আমাদের সমাজই। মেয়ে বলে যা কিছু সেরা, সেসব কিছু থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা, তাঁকে সবসময় দ্বিতীয় কিংবা শেষে রাখা, এমনটাই শিখিয়েছে সমাজব্যবস্থা। এই সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর বঞ্চনার গল্প বলে গেল 'মুখার্জিদার বউ'।
![মুখার্জিদার বউ](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/images/ww_0803newsroom_00389_775.png)
না, 'মুখার্জিদার বউ' ফেমিনিজ়মের কথা বলে না। নারীবাদী হতেও শেখায় না। গল্প বলে সমান হওয়ায়। এর জন্য ছবির গল্পনির্মাতা সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিচালক পৃথা চক্রবর্তীকে বাহবা দিতেই হয়। একেবারে নতুন পরিচালক হিসেবে পৃথা বেশ পরিণত। প্রথম কাজেই একটা আলাদা স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। আগামীদিনে তাঁর থেকে আরও ভালো কাজের আশা রাখবেন দর্শক। সেইসঙ্গে কবি সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। এরপর হয়তো নিয়মিতভাবে তাঁকে ছবির চিত্রনাট্য লিখে যেতে হবে।
শাশুড়ি আর বউমার চরিত্রে অনুসূয়া মজুমদার এবং কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সারাক্ষণ দর্শকের চোখ পরদায় আটকে রাখবেন। যতটা দাপুটে কনীনিকা, ততটাই অসামান্য অনুসূয়ার অভিনয়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন অপরাজিতা আঢ্য। ওইটুকু চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আবারও প্রমাণ করলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রী তিনি। মনোবিদ আরাত্রিকা ভট্টাচার্য অর্থাৎ ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে এক মুহূর্তের জন্য মিস করা যাবে না। যেমন সুমিষ্ট তাঁর অভিনয়, তেমনই সুন্দর দেখিয়েছে তাঁকে। অভিনয়ের মধ্যে বিশ্বনাথ এবং বাদশাকেও বাহবা দিতে হয়। সবশেষে শিশুশিল্পী অ্যাডোলিনাকে ভুললে চলবে না। তাকে দেখে মনে হবে যেন ক্ষীরের পায়েসে কিশমিশ।
ছবিতে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর সংগীত পরিচালনা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। সবচেয়ে বেশি মজা লাগবে ছবির কিছু কমিক সিকোয়েন্সে। যেখানে গুরুগম্ভীর বিষয়কেও হাস্যরসে ভরিয়ে তোলা হয়েছে। 'মুখার্জিদার বউ' হয়ে উঠতে চলেছে দর্শকদের মনের খুব কাছের একটি ছবি।