ETV Bharat / sitara

শর্বরী দত্তর মৃত্যুতে শোকের ছায়া টলিউডে

author img

By

Published : Sep 18, 2020, 11:18 AM IST

Updated : Sep 18, 2020, 11:39 AM IST

গভীর রাত থেকেই ঘুম উড়ে গিয়েছে টলি তারকাদের । সকলের ফোন খোলা । কেউ ঘুমোতে পারছেন না খবরটি পাওয়ার পর থেকে । কলকাতার বিখ্যাত সেলিব্রিটি ফ্যাশন ডিজ়াইনার শর্বরী দত্তর রহস্যজনক ও আকস্মিক মৃত্যু তাঁদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে । তাঁদেরই কেউ কেউ কথা বললেন ETV ভারত সিতারার সঙ্গে।

Tollywood mourns over sharbari dutta's death
Tollywood mourns over sharbari dutta's death

কলকাতা : শর্বরী দত্তর বিজনেস পার্টনার রেশমি গভীর রাতেই সকলকে খবরটি জানাতে শুরু করেন । রাত দুটোর সময় পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলির কাছ থেকে একটি মেসেজ পান পরিচালক অরিন্দম শীল । শর্বরী দত্ত ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল অরিন্দমের । শর্বরী দত্তর চলে যাওয়া তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি । আমাদের জানালেন সেই কথাই ।

অরিন্দম বললেন, "আমার খবরটা হজমই হচ্ছে না । এর থেকে শকিং কিছু হতে পারে না । এইভাবে একটা অবহেলার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না । একজন মহিলা নাকি মাঝদুপুরে পড়ে গেলেন টয়লেটে, এবং রাত পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল না, এটা মেনেই নেওয়া যায় না । শর্বরীদির মত একজন মানুষ, যিনি সকলের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, সকলকে ভালোবাসতেন, আমি মানতেই পারছি না । খুব একা হয়ে পড়েছিলেন । আমি রেশমি এবং সৌরভের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, যে অন্তত তাঁরা ওঁর দেখভাল করেছেন । হয় শর্বরীদির 'শূন্য'তে গিয়ে আমি আড্ডা মারতাম, নাহলে শর্বরীদি আর রেশমি চলে আসত আমার অফিসে । আমাদের কি সুন্দর সম্পর্ক ছিল । ওঁর মতো একজন সুন্দর মানুষ , তাঁর এই ভাবে চলে যাওয়া, এটা কাম্য নয় । শর্বরী দত্তর মূল্যায়ন কিন্তু এখনও হয়নি । বাংলার শিল্পকে নিজের শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন । 'শূন্য' তৈরি করেছিলেন । আর এখন সবকিছু 'শূণ্য' করে দিয়ে চলে গেলেন ।"

পরপর দুঃসংবাদে মন বিস্বাদ হয়ে রয়েছে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর । সুদূর সিঙ্গাপুরে বসে একে একে মানুষের চলে যাওয়ার খবর শুনে তিনি রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন । শর্বরী দত্তর মৃত্যু তাঁকেও নাড়িয়ে দিয়েছে ।

সিঙ্গাপুর থেকেই ঋতুপর্ণা আমাদের বললেন, "আমি এখন আর কোনও সুসংবাদের অপেক্ষা করি না । এত বড়ো একটা শক পেলাম । এত বড় একটা যুগের পতন হয়ে গেল । শর্বরীদি নেই, এই কথাটাই নিতে পারছি না । ওই হাসি, ওই কপাল জোড়া টিপ, অত সুন্দর কথা বলতেন উনি । সব মিলিয়ে এক পরিপূর্ণ নারী । আন্তর্জাতিক মানের ডিজ়াইনার তো বটেই । সেখানে তাঁর কোনও বিকল্প নেই । একজন খুব সুন্দর মানুষ ছিলেন উনি । সবকিছুর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেতেন । আমার বহু সিনেমা দেখে উনি এত সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন, বুঝেছি কত গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন । আমার জীবনের দুটো গুরুত্বপূর্ণ আবেগের সঙ্গে রয়েছেন তিনি । আমার স্বামীর বিয়ের দুটো পাঞ্জাবী, বিয়ের এবং বউভাতের, দুটোই শর্বরীদির করা । এবং আজও সেটা পরে ও খুব গর্ববোধ করে । এই পৃথিবী থেকে গুণী মানুষেরা কেন চলে যাচ্ছেন ঠিক জানি না । পৃথিবীতে এর পরে কী হতে চলেছে, তাও জানি না ।"

শর্বরীদিকে ঠাকুরবাড়ির পুরুষদের পোশাকের আদলে একটি কুর্তা বানিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন বাচিকশিল্পী সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় । তা বহু বছর আগের কথা । টাকা জমিয়ে সেই ডিজ়াইনার পোশাক কিনেছিলেন তিনি শর্বরীর থেকে । তারপর থেকেই একেবারে পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে যায় সুজয়-শর্বরীর । তিনিও ভেঙে পড়েছেন এই আকস্মিক সংবাদে । আমাদের বলেন, "যে কোনও মানুষের স্বপ্ন ছিল শর্বরীদির পোশাক পরব । আমারও সেরকম একটি স্বপ্ন ছিল । সেটা হয়েওছিল । টাকা জমিয়ে ওঁর কাছে প্রথম গিয়েছিলাম । সেই থেকেই বন্ধুত্ব এবং অদ্ভুত সম্পর্ক । আমাকে খুব স্নেহ করতেন । সেই থেকে শুরু । উনি খুব উষ্ণভাবে কথা বলতেন, যেটা মানুষের মধ্যে এখন কমে গেছে । এত সৃজনশীল ছিলেন । ফ্যাশন দুনিয়ায় ছেলেদের পোশাকে একটা ম্যাসকিউলিন অ্যাপিল তৈরি করেছিলেন । পুরুষের পোশাক যে সাদামাটার বাইরে বেরিয়ে রংবেরঙেরও হতে পারে সেটা প্রথম উনি দেখিয়েছিলেন । আমার সত্যি কিছু বলার নেই । ওঁর চলে যাওয়া স্তব্ধ করে দিয়েছে আমাকে ।"

পুরুষদের পোশাকেও যে বৈচিত্র আনা যায়, তা দেখিয়েছিলেন শর্বরী দত্ত । তাঁর হাত ধরে দুই যুগের মিল হয়েছিল । পুরোনোর ছোঁয়ায় নতুন যুগের উপযুক্ত করে পোশাক বানাতেন তিনি । কথায় বলে, ভালো শিল্পী হতে গেলে ভালো মনের মানুষ হতে হয় । এই মৃত্যুর পর ডিজ়াইনার শর্বরীর থেকেও বেশি করে সেই ভালো মানুষটিকেই খুঁজছেন তাঁর প্রিয়জনেরা । শোকজ্ঞাপন করছেন মনে মনে ।




কলকাতা : শর্বরী দত্তর বিজনেস পার্টনার রেশমি গভীর রাতেই সকলকে খবরটি জানাতে শুরু করেন । রাত দুটোর সময় পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলির কাছ থেকে একটি মেসেজ পান পরিচালক অরিন্দম শীল । শর্বরী দত্ত ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল অরিন্দমের । শর্বরী দত্তর চলে যাওয়া তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি । আমাদের জানালেন সেই কথাই ।

অরিন্দম বললেন, "আমার খবরটা হজমই হচ্ছে না । এর থেকে শকিং কিছু হতে পারে না । এইভাবে একটা অবহেলার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না । একজন মহিলা নাকি মাঝদুপুরে পড়ে গেলেন টয়লেটে, এবং রাত পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল না, এটা মেনেই নেওয়া যায় না । শর্বরীদির মত একজন মানুষ, যিনি সকলের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, সকলকে ভালোবাসতেন, আমি মানতেই পারছি না । খুব একা হয়ে পড়েছিলেন । আমি রেশমি এবং সৌরভের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, যে অন্তত তাঁরা ওঁর দেখভাল করেছেন । হয় শর্বরীদির 'শূন্য'তে গিয়ে আমি আড্ডা মারতাম, নাহলে শর্বরীদি আর রেশমি চলে আসত আমার অফিসে । আমাদের কি সুন্দর সম্পর্ক ছিল । ওঁর মতো একজন সুন্দর মানুষ , তাঁর এই ভাবে চলে যাওয়া, এটা কাম্য নয় । শর্বরী দত্তর মূল্যায়ন কিন্তু এখনও হয়নি । বাংলার শিল্পকে নিজের শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন । 'শূন্য' তৈরি করেছিলেন । আর এখন সবকিছু 'শূণ্য' করে দিয়ে চলে গেলেন ।"

পরপর দুঃসংবাদে মন বিস্বাদ হয়ে রয়েছে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর । সুদূর সিঙ্গাপুরে বসে একে একে মানুষের চলে যাওয়ার খবর শুনে তিনি রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন । শর্বরী দত্তর মৃত্যু তাঁকেও নাড়িয়ে দিয়েছে ।

সিঙ্গাপুর থেকেই ঋতুপর্ণা আমাদের বললেন, "আমি এখন আর কোনও সুসংবাদের অপেক্ষা করি না । এত বড়ো একটা শক পেলাম । এত বড় একটা যুগের পতন হয়ে গেল । শর্বরীদি নেই, এই কথাটাই নিতে পারছি না । ওই হাসি, ওই কপাল জোড়া টিপ, অত সুন্দর কথা বলতেন উনি । সব মিলিয়ে এক পরিপূর্ণ নারী । আন্তর্জাতিক মানের ডিজ়াইনার তো বটেই । সেখানে তাঁর কোনও বিকল্প নেই । একজন খুব সুন্দর মানুষ ছিলেন উনি । সবকিছুর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেতেন । আমার বহু সিনেমা দেখে উনি এত সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন, বুঝেছি কত গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন । আমার জীবনের দুটো গুরুত্বপূর্ণ আবেগের সঙ্গে রয়েছেন তিনি । আমার স্বামীর বিয়ের দুটো পাঞ্জাবী, বিয়ের এবং বউভাতের, দুটোই শর্বরীদির করা । এবং আজও সেটা পরে ও খুব গর্ববোধ করে । এই পৃথিবী থেকে গুণী মানুষেরা কেন চলে যাচ্ছেন ঠিক জানি না । পৃথিবীতে এর পরে কী হতে চলেছে, তাও জানি না ।"

শর্বরীদিকে ঠাকুরবাড়ির পুরুষদের পোশাকের আদলে একটি কুর্তা বানিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন বাচিকশিল্পী সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় । তা বহু বছর আগের কথা । টাকা জমিয়ে সেই ডিজ়াইনার পোশাক কিনেছিলেন তিনি শর্বরীর থেকে । তারপর থেকেই একেবারে পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে যায় সুজয়-শর্বরীর । তিনিও ভেঙে পড়েছেন এই আকস্মিক সংবাদে । আমাদের বলেন, "যে কোনও মানুষের স্বপ্ন ছিল শর্বরীদির পোশাক পরব । আমারও সেরকম একটি স্বপ্ন ছিল । সেটা হয়েওছিল । টাকা জমিয়ে ওঁর কাছে প্রথম গিয়েছিলাম । সেই থেকেই বন্ধুত্ব এবং অদ্ভুত সম্পর্ক । আমাকে খুব স্নেহ করতেন । সেই থেকে শুরু । উনি খুব উষ্ণভাবে কথা বলতেন, যেটা মানুষের মধ্যে এখন কমে গেছে । এত সৃজনশীল ছিলেন । ফ্যাশন দুনিয়ায় ছেলেদের পোশাকে একটা ম্যাসকিউলিন অ্যাপিল তৈরি করেছিলেন । পুরুষের পোশাক যে সাদামাটার বাইরে বেরিয়ে রংবেরঙেরও হতে পারে সেটা প্রথম উনি দেখিয়েছিলেন । আমার সত্যি কিছু বলার নেই । ওঁর চলে যাওয়া স্তব্ধ করে দিয়েছে আমাকে ।"

পুরুষদের পোশাকেও যে বৈচিত্র আনা যায়, তা দেখিয়েছিলেন শর্বরী দত্ত । তাঁর হাত ধরে দুই যুগের মিল হয়েছিল । পুরোনোর ছোঁয়ায় নতুন যুগের উপযুক্ত করে পোশাক বানাতেন তিনি । কথায় বলে, ভালো শিল্পী হতে গেলে ভালো মনের মানুষ হতে হয় । এই মৃত্যুর পর ডিজ়াইনার শর্বরীর থেকেও বেশি করে সেই ভালো মানুষটিকেই খুঁজছেন তাঁর প্রিয়জনেরা । শোকজ্ঞাপন করছেন মনে মনে ।




Last Updated : Sep 18, 2020, 11:39 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.