কলকাতা : ১৩৫ বছর আগে, ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস উত্তর কলকাতার স্টার থিয়েটারে গিয়েছিলেন 'চৈতন্য লীলা' দেখতে। মহাপ্রভুর জীবনের উপর ভিত্তি করে ছিল সেই নাটক। নাটক শেষে তিনি দেখা করতে চেয়েছিলেন সেই অভিনেতার সঙ্গে, যিনি মহাপ্রভুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। নাট্যকার গিরীশচন্দ্র ঘোষ শ্রীরামকৃষ্ণকে জানেন, যিনি মহাপ্রভুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনি আর কেউ নন বিনোদিনী দাসী। সেদিন নটীবিনোদিনীর অভিনয়ে মুগ্ধ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁকে বলেছিলেন, "মা তোর চৈতন্য হোক"।
সেই সময়ের দক্ষিণেশ্বরের প্রধান পুরোহিত রামকৃষ্ণদেবের এই মন্তব্য প্রশংসা পায়নি মানুষের দরবারে। প্রথম প্রতিক্রিয়া আসে ব্রাহ্মসমাজ থেকে। হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত লিখেন : "এই ঘটনার পর ব্রাহ্মসমাজের অনেকেই রামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ১৮৮৪ সালের ৮ জানুয়ারি কেশব সেনের মৃত্যুর পর, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য হন। শিবনাথ শাস্ত্রী শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করেছিলেন। অনেকেই শিবনাথকে জিজ্ঞেস করতেন - আপনি তো শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য। এখন আপনি তাঁর কাছে কেন যান না? শিবনাথ বলেছিলেন, আমি কীভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাব? তিনি এখন দেহব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত, যাঁরা থিয়েটারে অভিনয় করেন। আমি আর দক্ষিণেশ্বরে যেতে পারব না।"
এর মাঝে, নাট্য মন্দিরের সম্পাদক অমর দত্ত শ্রীরামকৃষ্ণের ছবিকে তাঁর পত্রিকার প্রচ্ছদের ছবি হিসেবে ব্যবহার করলেন। এই ঘটনাতেও শোরগোল পড়েছিল। সেই সময়, থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত পত্রিকা এবং সংবাদপত্রগুলি শ্রীরামকৃষ্ণের থিয়েটারে নাটক দেখতে যাবার বিষয়টিকে খুব প্রাধান্য দিয়েছিল। কারণ, সেই সময় আমাদের সমাজ মনে করত, ভালো ঘরের ভদ্র মানুষরা থিয়েটার দেখতে যান না। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ যেদিন থেকে থিয়েটারে যাতায়াত শুরু করেন এবং সেটিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন, ধীরে ধীরে থিয়েটারকে ঘিরে এই কুসংস্কারও মিটতে শুরু করে সমাজ থেকে। জনসাধারণের কাছে থিয়েটার অনেকবেশি গ্রহণযোগ্য হতে শুরু করে।
বসন্ত কুমার ঘোষ একবার নাট্য মন্দিরে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার বিষয়বস্তু ছিল, থিয়েটারে বাঙালি মহিলা। সেই প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, 'বাঙালি মহিলাদের থিয়েটারে পাফরম্যান্স এবং শিল্পের দ্বারা মুগ্ধ শ্রীরামকৃষ্ণ এক বাইজি-অভিনেত্রীর প্রশংসা করলেন। যার জন্য থিয়েটারে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারিত হল।"
এই শ্রীচৈতন্যরূপী নটী বিনোদিনীকেই বড় পরদায় রূপ দিতে চলেছেন পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায়। যদিও এর আগে বিনোদিনীকে নিয়ে ছবি তৈরি হয়েছে, নাটক তৈরি হয়েছে, লেখা হয়েছে বই। রামকমল এবার কোন বিনোদিনীর জন্ম দেন সেটাই দেখার। দেখুন পোস্টার :