কলকাতা, 1 অক্টোবর : তিনি সঙ্গীতের জগতে একটা প্রতিষ্ঠান ৷ কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক ৷ তাঁর সুরের জাদুতে মোহিত হয়ে যায় বর্তমান প্রজন্মও ৷ শচীন দেববর্মন (SD Burman Birthday) ৷ আজ তাঁর 115তম জন্মবার্ষিকী ৷ আজও তিনি সমান প্রাসঙ্গিক ৷ গানের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও ভালোবাসার নানা নিদর্শন নানা সময়ে শ্রোতাদের সামনে এসেছে ৷ আজকের বিশেষ দিনে সে রকমই একটি তথ্য তুলে ধরব ৷
বাজি, সিআইডি, পেয়াসা, গাইড-সহ নানা ফিল্মে তাঁর তৈরি গান হিন্দি মুভির স্বর্ণযুগের সাক্ষী ৷ তাঁর সুরের সেই এভারগ্রিন গান আজও গুনগুন করেন সঙ্গীতপ্রেমীরা ৷ সঙ্গীতের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন শচীন দেববর্মন ৷ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও তিনি জড়িয়ে রেখেছিলেন গানকেই ৷ তাঁর জীবনের শেষ কম্পোজিসন মিলির সুর শুনতে শুনতেই চিরঘুমের দেশে চলে যান এসডি বর্মন ৷
1975 সালে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ফিল্ম মিলির গান রেকর্ড করেন তিনি ৷ একদিন তিনি ওই ফিল্মেরই অত্যন্ত জনপ্রিয় গান কিশোর কুমারের (Kishore Kumar) 'বড়ি সুনি সুনি হ্যায়' (Badi Sooni Sooni Hai)-এর মহড়ায় ছিলেন ৷ তখনই তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ তড়িঘড়ি এসডি বর্মনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় ৷ সেই দিনটির কথা স্মরণ করে একবার ঘটনার বিবরণী দিয়েছিলেন কিশোর কুমার ৷
এক রেডিয়ো অনুষ্ঠানে তিনি জানান, মহড়া চলাকালীনই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন শচীন দাদা ৷ গায়কের কথায়, "আমি মহড়া দিচ্ছিলাম ৷ কিন্তু তাঁর চোখটা কেমন খালি হয়ে আসছিল ৷ তিনি শান্তভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং গানটা শুনে যাচ্ছিলেন ৷" মহড়া শেষ হওয়ার পর কিশোর এসডির বাড়ি থেকে চলে যান ৷ এর মিনিট 20-25 পরই মাটিতে পড়ে যান সঙ্গীত পরিচালক ৷ তড়িঘড়ি ডাক্তারকে ডাকা হয় ৷ তিনি এসডিকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন ৷ কিন্তু এসডি সাহেব নাকি তখন হাসপাতালে যেতে রাজি হননি ৷
আরও পড়ুন: Kolkata Chalantika : পাভেলের নতুন ছবি 'কলকাতা চলন্তিকা'
কিশোর কুমারের কথায়, "তিনি তখনও বলছেন, তিনি হাসপাতালে যেতে পারবেন না ৷ কারণ আগামিকাল কিশোরকে এই গানটি রেকর্ড করতে হবে ৷ তিনি ডাক্তারবাবুকে বলেন, 'একবার গানটার রেকর্ডিং হয়ে যাক, তারপর আপনি আমাকে যেখানে খুশি নিয়ে যেতে পারেন..'৷"
এই কথা শুনে এসডি বর্মনের ছেলে রাহুল দেববর্মন নাকি কিশোর কুমারের বাড়িতে ছুটে যান ৷ তাঁকে পঞ্চমদা বলেন, "কিশোর এখনই চল ৷ বাবাকে বোঝাও ৷ রেকর্ডিং পরেও হতে পারে ৷" এরপর শচীন দেববর্মনকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য কিছুটা নাটক করতে হয় কিশোর কুমারকে ৷ তিনি ভাঙা ভাঙা গলায় বলেন, "দাদা, শুনুন আমার গলার অবস্থা এখন ঠিক নেই ৷ রেকর্ডিংটা কয়েকদিন পিছিয়ে দিন ৷ আপনি এখন হাসপাতালে যান ৷ আপনি ফিরতে ফিরতে আমার গলাও ঠিক হয়ে যাবে ৷ তখন আমরা রেকর্ড করব ৷" তখন পারফেকশনিস্ট এসডি তাঁকে বলেছিলেন, "কিশোর, গানটা ভাল হওয়া চাই ৷ যখন তোমার গলা ঠিক হবে, তখনই এই গানের রেকর্ড কর ৷ আর আমি যদি রেকর্ডিংয়ে আসতে না-পারি, তাহলে মনে করবে যে আমি তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি ৷ আমি যে ভাবে তোমাকে গানটা গাওয়াতে চেয়েছিলাম, সে ভাবেই গাইবে ৷"
আরও পড়ুন : Prosenjit Chatterjee: বুম্বাদার জন্মদিনে বহরমপুরের বাড়িতে কেক কাটতেন ঐন্দ্রিলা
কিশোর দুঃখের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, "শচীন দাদা এরপর হাসপাতালে গেলেন ৷ আর যেটা আশঙ্কা করা হচ্ছিল তাই হল ৷ তিনি আর রেকর্ডিংয়ে আসতে পারেননি ৷ তাঁর কথা মেনেই গানটি রেকর্ড করি, মনে মনে ভেবে নিই যে দাদা আমার সামনেই আছেন ৷" সেই রেকর্ডিং-এর টেপ পঞ্চমদা তাঁর বাবাকে শোনাতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ গানটি শুনে চোখে জল চলে আসে এসডি সাহেবের ৷ তিনি নাকি বলেছিলেন, "পঞ্চম, আমি জানতাম ৷ কিশোর এ ভাবেই গানটা গাইবে ৷" সেই গান শোনার কিছু পরেই কোমায় চলে যান শচীন দেববর্মন ৷ এরপর সে বছরই 31 অক্টোবর 69 বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Raj Subhashree: মালদ্বীপে রাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিয়ো পোস্ট শুভশ্রীর