কলকাতা : লাগাতারভাবে নয়, তবে দু'দিন লকডাউন শুরু হয়েছে আজ থেকে । প্রত্যেক সপ্তাহে দু'দিন বন্ধ থাকবে সবকিছু। বাড়ির বাইরে পা ফেলা হবে নিষেধ। প্রায় আড়াই মাস শুটিং বন্ধ থাকার পর, অনেকরকম আলাপ-আলোচনার পর ১১ জুন থেকে শুরু হয়েছিল টলিউডের শুটিং। কিন্তু এখন বাঁধ সেধেছে টানা দু'দিনের লকডাউন। হঠাৎ করেই অনেককিছু বদলাতে হচ্ছে টলি সদস্যদের। কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধার মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তাঁদের। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জায়গাটা বেশ বড়। অনেক মানুষের রুজি-রোজগার জড়িয়ে রয়েছে সেখানে। দুদিন লকডাউন থাকা মানে দিন আনি দিন খাই মানুষগুলোর রোজগারে টানাটানি । চিন্তায় সকলেই । কেউ কেউ আবার অসুবিধা হলেও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন । দু'দিন লকডাউন থাকবে, এই ঘোষণার পর কীভাবে আগাম কাজের পরিকল্পনা করছে টলিজগৎ । ETV ভারত সিতারা কথা বলল টলিজগতের পরিচালক, অভিনেতা, টেকনিশিয়ান ও জুনিয়র টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে।
একটি দুটো এপিসোডের ওয়েব ফিল্ম বানাচ্ছিলেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। ছবিটির নাম 'ডিটেকটিভ'। শুটিং শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন তাঁরা ব্যস্ত পোস্ট প্রোডাকশনের কাজে। নিয়মিত ডাবিং চলছিল। জয়দীপ বলেন, "যা পরিস্থিতি তা আগে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। আমাদের ডাবিং গতকাল শুরু হয়েছে। চার-পাঁচ দিন ধরে চলার কথা। মাঝে দুটো দিন বন্ধ হয়ে গেল। প্রত্যেকটা মানুষই কাজের জন্য চেষ্টা করছে। যাতে নিজের কাজ ঠিকমতো করে একটা কিছু তৈরি করতে পারে। এই লকডাউনের একান্ত প্রয়োজন আছে কিনা, সেটা একমাত্র চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। নিশ্চয়ই কিছু ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । তার উপর আমাদের মতো যাঁদের ডেইলি বেসিসে কাজের উপর নির্ভর করে চলতে হয়, জুনিয়র টেকনিশিয়ানরা রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের পক্ষে খুব অসুবিধে। কাজ ঘেঁটে যাচ্ছে।"
মিমি, নুসরত ও যশ অভিনীত 'SOS কলকাতা'-র শুটিং চলছিল শহরে । আজ ও শনিবার তাঁদের শুটিং হওয়ার কথা ছিল । এই দু'দিন তো লকডাউনে সব বন্ধ রাখা হয়েছে । এ প্রসঙ্গে যশ দাশগুপ্ত বলেন, "আজ এবং শনিবার আমাদের শুটিং ছিল । লকডাউন হওয়ার পরে আমাদের পুরোটা রিশিডিউল করতে হয়েছে। লকডাউন যেদিন হবে, তার পরের দিন আমাদের শুটিং হবে। সেভাবেই ঠিক হয়েছে। তাই আমাদের শিডিউল ঘটেছে।" দুদিন ধরে লকডাউন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে কতটা সহমত হয়েছেন যশ, সেটাও আমাদের জানালেন । তিনি বলেন, "প্রত্যেকদিন 2000 করে কোভিড সংক্রমণ বাড়ছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে সপ্তাহে রবিবার এমনিতেই ছুটির দিন। আরও দুদিন ছুটি হলে 6000 সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কোরোনা বন্ধ করার জন্য না, কমিউনিটি স্প্রেডকে আটকানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
'মোহর', 'কোড়াপাখি', 'শ্রীময়ী'-এর মতো একাধিক ধারাবাহিকের প্রযোজনা এবং পরিচালনা করেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় । দু'দিন লকডাউন থাকায় টলিপাড়ায় অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সকলকে । কিন্তু লীনারা বিষয়টিকে সামলাচ্ছেন পরিকল্পনামাফিক । লীনা বলেন, "দু'দিন লকডাউনে আমাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না । আমরা এমনিতেও সপ্তাহে পাঁচদিন শুটিং করি । তাছাড়া আমাদের আগাম ব্যাঙ্কিং করা আছে।"
অন্যদিকে 'চুনিপান্না' ধারাবাহিকের মুখ্য অভিনেত্রী অভিনেত্রী অন্বেষা হাজরার কাছে বিষয়টি খুবই পরিশ্রমের । যেহেতু নিয়মিত নতুন এপিসোড দেখানো শুরু হয়েছে, অনেকবেশি চাপও তৈরি হচ্ছে । অন্বেষা বলেন, "দু'দিন লকডাউন হয়েছে তো কী হয়েছে। টেলিকাস্টের তো চাপ থাকে। আমাদের পরিশ্রম বেড়ে গেছে। অনেক বেশি সিন থাকছে এখন। তবে আমরা মিলেমিশে কাজ করছি। পরিশ্রম হলেও খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে না।"
খুব শিগগির কাজ শুরু করার কথা ছিল পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের। এখন ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে । তিনি বলেন, "অনেকেরই শুটিং হ্যাম্পার হচ্ছে । কিন্তু এছাড়া অন্যকোনও উপায়ে দেখতে পাচ্ছি না। সারাদেশের মধ্যে কলকাতার অবস্থা এখন খুব খারাপ। সরকারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের আপোষ করে চলা উচিত। এখন চেনাজানা, প্রিয়জনদেরও কোরোনা ধরা পড়ছে।"
তবে পরিস্থিতি যাই হোক টলি ইন্ডাস্ট্রির দিন মজুররাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন । এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি । তাঁরা বলেন, "লকডাউন যেভাবে মানা দরকার, সেভাবে তো মানা হচ্ছে না । এদিকে আমাদের সপ্তাহে দু'দিন অফ হওয়ার মানে দু'দিনের টাকা না পাওয়া । মাসে প্রায় আট-দশ দিন টাকা পাব না । পকেটে টান পড়বে সরাসরি । অসুবিধার মধ্যে আছি । ক্ষতিই তো হচ্ছে ।