মনুদা মানুষ হিসেবে খুব ভালো ছিলেন । অত সিনিয়র ছিলেন, কিন্তু আমাদের সঙ্গে যেভাবে মিশতেন, সে একেবারে বন্ধুর মতো । ওঁর সঙ্গে অনেক কাজ করেছি । ধারাবাহিকে কাজ করেছি, সিনেমাতে কাজ করেছি । প্রথম কাজ করেছি "পাতালঘর" ছবিতে ।
"পাতালঘর"-এ মনুদা অপয়া চরিত্রটি করতেন । মছলিবাবার পর অপয়া চরিত্রটা মনুদার জীবনের একটা অন্যতম চরিত্র । যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা এটাকে মনে রাখবেন । আসলে চরিত্রটি তিনি এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন যে তা বলার নয় ।
এটিকে ঘিরে একটা মজার স্মৃতি আছে । আমাদের শুটিং ছিল বোলপুরে । তাঁর দু'দিন আগে মনুদা বোলপুরে এসেছিলেন । যখন বোলপুরে এসে পৌঁছলেন, আমাদের ইউনিটের সঙ্গে কিছু ঘটনা ঘটেছিল । প্রথমে আমাদের একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয় । আমাদের একজন সহকারী পরিচালকের অসম্ভব জ্বর আসে । শুটিংয়ের ক্যামেরাতে ব্লার আসতে শুরু করে । সেই নিয়েও অনেক ঝামেলা শুরু হয় । তখন আমরা বললাম, মনুদা করছেন অপয়ার চরিত্র । লোকটা এখনও সশরীরে আমাদের ইউনিটে আসেননি, তাতেই যদি ইউনিটে এইসব ঘটনা ঘটে, তাহলে আসলে কী হবে । এইসব নিয়ে খুব হাসি-ঠাট্টা হল এবং মনুদা আসার পর তাঁকে স্বাগত জানানো হল । তারপর শুরু হল মনুদার পারফরম্যান্স । সে একেবারে আগুন জ্বেলে দেওয়া পারফরম্যান্স ।
যেমন চরিত্র পেয়েছিলেন, পাঠও করেছিলেন তেমনই । মানুষটা বড় ভালো ছিলেন । আমার অভিনয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি । শুটিংয়ে এলে ওঁর বাড়ির লোক বলতেন খরাজ তোমার দায়িত্বে দিলাম । তার উপর তিনি ছিলেন আমার শিক্ষাগুরুও । মানুষটির থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
বিশ্বাস করুন, মানুষের মৃত্যুর পর আমি তাঁদের গিয়ে দেখতে পারি না । আমার অন্তরে ভীষণ কষ্ট হয় প্রাণবন্ত মানুষগুলোর নিথর দেহ দেখলে । সৌমিত্রদার বেলাতেও যাইনি । মনুদাকেও দেখতে যাইনি ।