ETV Bharat / sitara

৫০-এ পা 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'-এর

আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগেকার কথা। 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' ছবিটি মুক্তি পায় কলকাতার বিভিন্ন সিনেমা হলে। কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় এই ছবি আজ এক অনন্য ইতিহাস।

সংগৃহীত ছবি
author img

By

Published : May 8, 2019, 2:46 PM IST

Updated : May 8, 2019, 2:52 PM IST

সত্যজিৎ রায় তাঁর প্রথম ছবি "পথের পাঁচালী" তৈরি ঠিক ১০ বছর পর মুক্তি পায় গুপী গাইন বাঘা বাইন। এই ১০ বছরের ব্যবধানে সত্যজিৎ তৈরি করে ফেলেছিলেন ১৩টি ছবি। তৈরি করে ফেলেছেন চারুলতা, অপু ট্রিওলজির সবকটি ছবি। তাঁর ছবির তালিকায় জুড়েছে মহানগর, নায়ক, জলসাঘর, দেবী, কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিন কন্যার মতো ছবি।

গুপী বাঘার পরিকল্পনা সত্যজিতের অনেকদিনের। ছবি মুক্তির দু'বছর আগে থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন চিন্তাভাবনা। অতিজাগতিক বিষয়বস্তুকে ধরতে চেয়েছিলেন সেলুলয়েডে। ১৯৬৭ সালেই লিখে ফেলেন চিত্রনাট্য। সত্যজিৎ চেয়েছিলেন গুপী গাইন বাঘা বাইন কালার ছবি হয়। সেই বাজেট আকাশ ছুঁয়েছিল। ইতিমধ্যেই তখন কান-বার্লিনের মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে গিয়ে সম্মান পেয়েছেন সত্যজিৎ। তা সত্ত্বেও, অতিরিক্ত বাজেট বাড়ার জন্য কোনও প্রযোজক 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' তৈরি করতে রাজি হচ্ছিলেন না। প্রথম কারণ বাজেট এবং দ্বিতীয় কারণ ছোটদের জন্য তৈরি ছবি থেকে তেমন লাভ করা যায় না। সত্যজিৎ ভাবলেন আর সেই ছবি তৈরি করবেন না। সেই সময় এগিয়ে এলেন পূর্ণিমা পিকচার্সের নেপাল দত্ত এবং অসীম দত্ত। ৬ লক্ষ টাকায় তৈরি হল 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'। তবে কালারে ছবি করার স্বপ্ন ত্যাগ করতে হল সত্যজিৎকে। যদিও ছবির শেষ দৃশ্যটি কালারেই করা হয়। এটাই যে সান্ত্বনা।

শুরু হয় প্রস্তুতি। কিন্তু কে হবে গুপী এবং বাঘা? সত্যজিতের প্রথম পছন্দ ছিল যাঁদের, তাঁদের এই ছবিতে পাননি। তিনি চেয়েছিলেন মার্লোন ব্র্যান্ডো এবং পিটার সেলার্স এই ছবিতে অভিনয় করবেন গুপী বাঘার চরিত্রে। কিন্তু, কলম্বিয়া পিকচার্সের সঙ্গে সত্যজিতের সম্পর্ক সেই সময় ভালো জায়গায় ছিল না। ছবিটি প্রযোজনা করা থেকে পিছিয়ে আসে প্রযোজনা সংস্থা। সেই সঙ্গে হলিউডে একটি ফ্যান্টাসি তৈরি করার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় সত্যজিতের। হলিউডে ছবি তৈরি হলে আরও অনেক দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারত 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'। সেই দুঃখ শেষ বয়স পর্যন্ত তাড়া করে বেরিয়েছিল পরিচালককে। পিছিয়ে এসেছিলেন আর ডি বানসালও। তবে নেপাল দত্ত এবং অসীম দত্ত তাঁকে হতাশ করেননি। ঠিক হল, অভিনেতা তপেন চট্টোপাধ্যায় গুপীর চরিত্রে অভিনয় করবেন এবং বাঘা করবেন রবি ঘোষ। হাল্লা রাজার চরিত্রের জন্য তিনি প্রিয় সন্তোষ দত্তকেই ভেবে রেখেছিলেন। যাঁকে পরবর্তীকালে "জয় বাবা ফেলুনাথ" এবং "সোনার কেল্লা"এ জটায়ুর চরিত্রে দেখেছে দর্শক। অন্যান্য চরিত্রের জন্য বাছা হল হরিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,জহর রায়, শান্তি চট্টোপাধ্যায় এবং চিন্ময় রায়কে।

'গুপী গাইন বাঘা বাইন' সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা গল্প অবলম্বনে তৈরি। লেখাটি প্রকাশিত হয় সন্দেশ পত্রিকায়, ১৯১৫ সালে। ছোটো থেকেই সত্যজিৎ রায় এই গল্পের ভক্ত। মনে মনে ঠিক করেছিলেন ছবি তৈরি করবেন। তা শেষমেশ শুরু হল শুটিং। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে। 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' ছবিটি দেখেননি এমন কোনও বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবুও বলে রাখা ভালো, এই গল্পের দুই প্রধান চরিত্র গুপী এবং বাঘা। একজন গান গায়। অন্যজন ঢোল বাজায়। একজনের বাড়ি আমলকি গ্রামে অন্যজনের হরিতকী। তারা এত খারাপ গান গায়, আর এত খারাপ ঢোল বাজায়, যে গ্রামের লোকে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন তাদের গ্রাম ছাড়া করল গাধার পিঠে চাপিয়ে। দু'জনের দেখা হল বাঁশবনে। এবং রাত্রে এসে দেখা দিল ভূতের রাজা। ভূতের রাজার তিন বরে পালটে গেল তাদের জীবন।

সংগৃহীত ছবি
সংগৃহীত ছবি

আর সেই বাঁশবন থেকেই ফুটে উঠতে শুরু করে সত্যজিতের ক্যারিশমা। সত্যজিতের নির্মিত ভূতের রাজা বাঙালিদের কাছে নস্টালজিয়ার অন্য এক নাম। আইকনিক ফিগারও যেতে পারে। ভূতের এমন চেহারা আগে কখনও বাংলা চলচ্চিত্রে নির্মিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও নির্মিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এই ছবিতে ভূতকে দেখে দর্শকের বিন্দুমাত্র ভয় করবে না। বরঞ্চ মনে হবে ভূতের মধ্যে ভালো কিছু আছে, যা ভালো মানুষের জীবন খারাপ থেকে ভালোয় পরিণত করতে পারে। ঠিক যেমনটা ঘটে গুপি বাঘার ক্ষেত্রে।

ভূতের রাজার সেই রূপ, একটি তারার টিমটিমে আলোর মধ্যে ক্রমশ এগিয়ে আসছে টোপর পরা এক ভূত রাজা। অদ্ভুত তার কণ্ঠস্বর। এই কণ্ঠস্বরও এক অনন্য নজির। কণ্ঠস্বরটি সত্যজিৎ রায় নিজেরই। ছড়ায় কথা বলে ভূতের রাজা। পরবর্তীকালে হীরক রাজার দেশে ছবিতেও ফিরে আসে এই ভূতের রাজা। ফিরে আসে "গুপি বাঘা ফিরে এল" ছবিতেও। যদিও সেই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়। বাবার এই অনন্য সৃষ্টি কে ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন সন্দীপ। ETV BHARATকে সন্দীপ রায় বললেন, "যখন গুপি বাঘা ফিরে এল তৈরি করলাম, বাবার তৈরি ভূতের রাজাকে কীভাবে উপেক্ষা করি বলুন? এটা একটা অনন্য সৃষ্টি। এর কোনও বিকল্প নেই। বাবাই পারতেন এই ধরনের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে।"

তারপর উল্লেখযোগ্য, ভূতের সেই নাচ। যেখানে রোগা-মোটা, লম্বা-বেটে, বাঙালি, বিদেশি, ফরাসি, জার্মানি সবধরনের ভূতেরা একটি কোরিওগ্রাফি করে। এই নাচের জন্য সত্যজিৎ এসভি রাওকে প্রশংসা করেছিলেন। নাচে এমন এক টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়, যা সেই সময় দাঁড়িয়ে চিন্তা করা বহুদূর। সেই নাচটি ছিল সাড়ে ৬ মিনিটের। চার ধরনের ভূতকে চারটে লাইনে দাঁড় করিয়ে নাচিয়ে ছিলেন একই সঙ্গে। এর কারণ, সমাজের বৈষম্যকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। ১২টি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

হাল্লা এবং সুন্ডির রাজার যুদ্ধের সময় প্রয়োজন ছিল কিছু দুস্থ চেহারার সৈনিকের। সবকিছু তো আর মেকআপে করা যায় না। আর সেই সময় মেকআপ তত উন্নত ছিল না, যে ভালো চেহারার মানুষকে মেকআপে দুস্থ বানানো যাবে। তাই সত্যজিতের মাথায় বেরিয়ে আসে এক আইডিয়া। তিনি আফগানিস্তানের দুস্থ মানুষদের এই ছবিতে অভিনয় করার করানোর জন্য রাজি করান। এমন কিছু মানুষকে যাঁরা ঠিকমতো খেতে পায় না। বলা হয় দুবেলা ভালোমতো খেতে দেওয়া হবে। তাঁরা সকলেই রাজি হয়ে যান। তাঁদের পেট ভরে খাইয়েছিলেন সত্যজিৎ।

ছবি মুক্তির পর শুধু ছোটোদেরই নয়, বড়দেরও অসম্ভব পছন্দ হয়েছিল ছবিটি। সেই সঙ্গে জিতে নেয় অসংখ্য পুরস্কার। ১৬তম জাতীয় পুরস্কারে দুটি বড় অ্যাওয়ার্ড পায়। একটি সেরা ফিচার ফিল্ম হিসেবে এবং অন্যটি সেরা পরিচালকের। বিদেশের মাটিতে চারটে পুরস্কার পায়। অ্যাডিলেডে দা সিলভার ক্রস, অকল্যান্ড ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার, মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা ছবির পুরস্কার এবং টোকিওতে মেরিট অ্যাওয়ার্ড। বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালে গোল্ডেন বিয়ের জন্য মনোনীত হয়েছিল 'গুপী বাইন বাঘা বাইন'।

সংগৃহীত ছবি
সংগৃহীত ছবি


সত্যজিতের পরিচালনায় এবং উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভাবনায় গুপী গাইন বাঘা বাইন আজও ভারতীয় চলচ্চিত্রকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করছে। ছবির সিক্যুয়াল তৈরি হয়েছে হীরক রাজার দেশে। পুত্র সন্দ্বীপ রায় তৈরি করেছেন গুপি বাঘা ফিরে এল। ছবির হিন্দিতে রিমেক হয়েছে গুপি গাওয়াইয়া বাঘা বাজাইয়া। ছবিটি পরিচালনা করেছেন শিল্পা রানাডে। সেই ছবিটি ও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হয়েছে এবং পুরস্কৃত হয়েছে।

সন্দীপ রায় জানিয়েছেন, চতুর্থ ছবিটি তিনি তৈরি করতে চলেছেন। তিনি বলেছেন, যদিও রবি ঘোষ এবং তপেন চট্টোপাধ্যায় ছাড়া বাঘা গুপি চিন্তাই করা যায় না। তিনি চান, গুপী ও বাঘা ছেলেদের নিয়ে ছবি তৈরি করতে। হীরক রাজার দেশের শুরু সেই লাইন, "মোরা দুজনাই রাজার জামাই... আর আছে পোলাপান একখান একখান" সেই সূত্র ধরেই তিনি চতুর্থ সিক্যুয়াল তৈরি করবে।

আজ বাদে কাল, অর্থাৎ ১০ মে মুক্তি পাচ্ছে নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি কণ্ঠ। সেখানেও দর্শক দেখে নিয়েছে ছবিতে ভূতের রাজার ঝলক।

সত্যজিৎ রায় তাঁর প্রথম ছবি "পথের পাঁচালী" তৈরি ঠিক ১০ বছর পর মুক্তি পায় গুপী গাইন বাঘা বাইন। এই ১০ বছরের ব্যবধানে সত্যজিৎ তৈরি করে ফেলেছিলেন ১৩টি ছবি। তৈরি করে ফেলেছেন চারুলতা, অপু ট্রিওলজির সবকটি ছবি। তাঁর ছবির তালিকায় জুড়েছে মহানগর, নায়ক, জলসাঘর, দেবী, কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিন কন্যার মতো ছবি।

গুপী বাঘার পরিকল্পনা সত্যজিতের অনেকদিনের। ছবি মুক্তির দু'বছর আগে থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন চিন্তাভাবনা। অতিজাগতিক বিষয়বস্তুকে ধরতে চেয়েছিলেন সেলুলয়েডে। ১৯৬৭ সালেই লিখে ফেলেন চিত্রনাট্য। সত্যজিৎ চেয়েছিলেন গুপী গাইন বাঘা বাইন কালার ছবি হয়। সেই বাজেট আকাশ ছুঁয়েছিল। ইতিমধ্যেই তখন কান-বার্লিনের মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে গিয়ে সম্মান পেয়েছেন সত্যজিৎ। তা সত্ত্বেও, অতিরিক্ত বাজেট বাড়ার জন্য কোনও প্রযোজক 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' তৈরি করতে রাজি হচ্ছিলেন না। প্রথম কারণ বাজেট এবং দ্বিতীয় কারণ ছোটদের জন্য তৈরি ছবি থেকে তেমন লাভ করা যায় না। সত্যজিৎ ভাবলেন আর সেই ছবি তৈরি করবেন না। সেই সময় এগিয়ে এলেন পূর্ণিমা পিকচার্সের নেপাল দত্ত এবং অসীম দত্ত। ৬ লক্ষ টাকায় তৈরি হল 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'। তবে কালারে ছবি করার স্বপ্ন ত্যাগ করতে হল সত্যজিৎকে। যদিও ছবির শেষ দৃশ্যটি কালারেই করা হয়। এটাই যে সান্ত্বনা।

শুরু হয় প্রস্তুতি। কিন্তু কে হবে গুপী এবং বাঘা? সত্যজিতের প্রথম পছন্দ ছিল যাঁদের, তাঁদের এই ছবিতে পাননি। তিনি চেয়েছিলেন মার্লোন ব্র্যান্ডো এবং পিটার সেলার্স এই ছবিতে অভিনয় করবেন গুপী বাঘার চরিত্রে। কিন্তু, কলম্বিয়া পিকচার্সের সঙ্গে সত্যজিতের সম্পর্ক সেই সময় ভালো জায়গায় ছিল না। ছবিটি প্রযোজনা করা থেকে পিছিয়ে আসে প্রযোজনা সংস্থা। সেই সঙ্গে হলিউডে একটি ফ্যান্টাসি তৈরি করার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় সত্যজিতের। হলিউডে ছবি তৈরি হলে আরও অনেক দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারত 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'। সেই দুঃখ শেষ বয়স পর্যন্ত তাড়া করে বেরিয়েছিল পরিচালককে। পিছিয়ে এসেছিলেন আর ডি বানসালও। তবে নেপাল দত্ত এবং অসীম দত্ত তাঁকে হতাশ করেননি। ঠিক হল, অভিনেতা তপেন চট্টোপাধ্যায় গুপীর চরিত্রে অভিনয় করবেন এবং বাঘা করবেন রবি ঘোষ। হাল্লা রাজার চরিত্রের জন্য তিনি প্রিয় সন্তোষ দত্তকেই ভেবে রেখেছিলেন। যাঁকে পরবর্তীকালে "জয় বাবা ফেলুনাথ" এবং "সোনার কেল্লা"এ জটায়ুর চরিত্রে দেখেছে দর্শক। অন্যান্য চরিত্রের জন্য বাছা হল হরিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,জহর রায়, শান্তি চট্টোপাধ্যায় এবং চিন্ময় রায়কে।

'গুপী গাইন বাঘা বাইন' সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা গল্প অবলম্বনে তৈরি। লেখাটি প্রকাশিত হয় সন্দেশ পত্রিকায়, ১৯১৫ সালে। ছোটো থেকেই সত্যজিৎ রায় এই গল্পের ভক্ত। মনে মনে ঠিক করেছিলেন ছবি তৈরি করবেন। তা শেষমেশ শুরু হল শুটিং। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে। 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' ছবিটি দেখেননি এমন কোনও বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবুও বলে রাখা ভালো, এই গল্পের দুই প্রধান চরিত্র গুপী এবং বাঘা। একজন গান গায়। অন্যজন ঢোল বাজায়। একজনের বাড়ি আমলকি গ্রামে অন্যজনের হরিতকী। তারা এত খারাপ গান গায়, আর এত খারাপ ঢোল বাজায়, যে গ্রামের লোকে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন তাদের গ্রাম ছাড়া করল গাধার পিঠে চাপিয়ে। দু'জনের দেখা হল বাঁশবনে। এবং রাত্রে এসে দেখা দিল ভূতের রাজা। ভূতের রাজার তিন বরে পালটে গেল তাদের জীবন।

সংগৃহীত ছবি
সংগৃহীত ছবি

আর সেই বাঁশবন থেকেই ফুটে উঠতে শুরু করে সত্যজিতের ক্যারিশমা। সত্যজিতের নির্মিত ভূতের রাজা বাঙালিদের কাছে নস্টালজিয়ার অন্য এক নাম। আইকনিক ফিগারও যেতে পারে। ভূতের এমন চেহারা আগে কখনও বাংলা চলচ্চিত্রে নির্মিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও নির্মিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এই ছবিতে ভূতকে দেখে দর্শকের বিন্দুমাত্র ভয় করবে না। বরঞ্চ মনে হবে ভূতের মধ্যে ভালো কিছু আছে, যা ভালো মানুষের জীবন খারাপ থেকে ভালোয় পরিণত করতে পারে। ঠিক যেমনটা ঘটে গুপি বাঘার ক্ষেত্রে।

ভূতের রাজার সেই রূপ, একটি তারার টিমটিমে আলোর মধ্যে ক্রমশ এগিয়ে আসছে টোপর পরা এক ভূত রাজা। অদ্ভুত তার কণ্ঠস্বর। এই কণ্ঠস্বরও এক অনন্য নজির। কণ্ঠস্বরটি সত্যজিৎ রায় নিজেরই। ছড়ায় কথা বলে ভূতের রাজা। পরবর্তীকালে হীরক রাজার দেশে ছবিতেও ফিরে আসে এই ভূতের রাজা। ফিরে আসে "গুপি বাঘা ফিরে এল" ছবিতেও। যদিও সেই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়। বাবার এই অনন্য সৃষ্টি কে ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন সন্দীপ। ETV BHARATকে সন্দীপ রায় বললেন, "যখন গুপি বাঘা ফিরে এল তৈরি করলাম, বাবার তৈরি ভূতের রাজাকে কীভাবে উপেক্ষা করি বলুন? এটা একটা অনন্য সৃষ্টি। এর কোনও বিকল্প নেই। বাবাই পারতেন এই ধরনের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে।"

তারপর উল্লেখযোগ্য, ভূতের সেই নাচ। যেখানে রোগা-মোটা, লম্বা-বেটে, বাঙালি, বিদেশি, ফরাসি, জার্মানি সবধরনের ভূতেরা একটি কোরিওগ্রাফি করে। এই নাচের জন্য সত্যজিৎ এসভি রাওকে প্রশংসা করেছিলেন। নাচে এমন এক টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়, যা সেই সময় দাঁড়িয়ে চিন্তা করা বহুদূর। সেই নাচটি ছিল সাড়ে ৬ মিনিটের। চার ধরনের ভূতকে চারটে লাইনে দাঁড় করিয়ে নাচিয়ে ছিলেন একই সঙ্গে। এর কারণ, সমাজের বৈষম্যকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। ১২টি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

হাল্লা এবং সুন্ডির রাজার যুদ্ধের সময় প্রয়োজন ছিল কিছু দুস্থ চেহারার সৈনিকের। সবকিছু তো আর মেকআপে করা যায় না। আর সেই সময় মেকআপ তত উন্নত ছিল না, যে ভালো চেহারার মানুষকে মেকআপে দুস্থ বানানো যাবে। তাই সত্যজিতের মাথায় বেরিয়ে আসে এক আইডিয়া। তিনি আফগানিস্তানের দুস্থ মানুষদের এই ছবিতে অভিনয় করার করানোর জন্য রাজি করান। এমন কিছু মানুষকে যাঁরা ঠিকমতো খেতে পায় না। বলা হয় দুবেলা ভালোমতো খেতে দেওয়া হবে। তাঁরা সকলেই রাজি হয়ে যান। তাঁদের পেট ভরে খাইয়েছিলেন সত্যজিৎ।

ছবি মুক্তির পর শুধু ছোটোদেরই নয়, বড়দেরও অসম্ভব পছন্দ হয়েছিল ছবিটি। সেই সঙ্গে জিতে নেয় অসংখ্য পুরস্কার। ১৬তম জাতীয় পুরস্কারে দুটি বড় অ্যাওয়ার্ড পায়। একটি সেরা ফিচার ফিল্ম হিসেবে এবং অন্যটি সেরা পরিচালকের। বিদেশের মাটিতে চারটে পুরস্কার পায়। অ্যাডিলেডে দা সিলভার ক্রস, অকল্যান্ড ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার, মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা ছবির পুরস্কার এবং টোকিওতে মেরিট অ্যাওয়ার্ড। বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালে গোল্ডেন বিয়ের জন্য মনোনীত হয়েছিল 'গুপী বাইন বাঘা বাইন'।

সংগৃহীত ছবি
সংগৃহীত ছবি


সত্যজিতের পরিচালনায় এবং উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভাবনায় গুপী গাইন বাঘা বাইন আজও ভারতীয় চলচ্চিত্রকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করছে। ছবির সিক্যুয়াল তৈরি হয়েছে হীরক রাজার দেশে। পুত্র সন্দ্বীপ রায় তৈরি করেছেন গুপি বাঘা ফিরে এল। ছবির হিন্দিতে রিমেক হয়েছে গুপি গাওয়াইয়া বাঘা বাজাইয়া। ছবিটি পরিচালনা করেছেন শিল্পা রানাডে। সেই ছবিটি ও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হয়েছে এবং পুরস্কৃত হয়েছে।

সন্দীপ রায় জানিয়েছেন, চতুর্থ ছবিটি তিনি তৈরি করতে চলেছেন। তিনি বলেছেন, যদিও রবি ঘোষ এবং তপেন চট্টোপাধ্যায় ছাড়া বাঘা গুপি চিন্তাই করা যায় না। তিনি চান, গুপী ও বাঘা ছেলেদের নিয়ে ছবি তৈরি করতে। হীরক রাজার দেশের শুরু সেই লাইন, "মোরা দুজনাই রাজার জামাই... আর আছে পোলাপান একখান একখান" সেই সূত্র ধরেই তিনি চতুর্থ সিক্যুয়াল তৈরি করবে।

আজ বাদে কাল, অর্থাৎ ১০ মে মুক্তি পাচ্ছে নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি কণ্ঠ। সেখানেও দর্শক দেখে নিয়েছে ছবিতে ভূতের রাজার ঝলক।

Intro:আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগেকার কথা। গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবিটি মুক্তি পায় কলকাতার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে। বলাই বাহুল্য, কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় এই ছবি আজ এক অনন্য ইতিহাস।


Body:সত্যজিৎ রায় তাঁর প্রথম ছবি "পথের পাঁচালী" তৈরি ঠিক ১০ বছর পর মুক্তি পায় গুপী গাইন বাঘা বাইন। এই ১০ বছরের ব্যবধানে সত্যজিৎ তৈরি করে ফেলেছিলেন ১৩টি ছবি। তৈরি করে ফেলেছেন চারুলতা, অপু ট্রিওলজির সবকটি ছবি, মহানগর, নায়ক, জলসাঘর, দেবী, কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিন কন্যার মতো ছবি।

গুপী বাঘার পরিকল্পনা সত্যজিতের অনেকদিনের। ছবি মুক্তির দু'বছর আগে থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন চিন্তাভাবনা। অতিজাগতিক বিষয়বস্তুকে ধরতে চেয়েছিলেন সেলুলয়েডে। ১৯৬৭ সালেই লিখে ফেলেন চিত্রনাট্য। সত্যজিৎ চেয়েছিলেন গুপী গাইন বাঘা বাইন কালার ছবি হয়। সেই বাজেট আকাশ ছুঁয়েছিল। ইতিমধ্যেই তখন কান-বার্লিনের মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে গিয়ে সম্মান পেয়েছেন সত্যজিৎ। তা সত্ত্বেও, অতিরিক্ত বাজেট বাড়ার জন্য কোনও প্রযোজক গুপী গাইন বাঘা বাইন তৈরি করতে রাজি হচ্ছিলেন না। প্রথম কারণ বাজেট এবং দ্বিতীয় কারণ ছোটদের জন্য তৈরি ছবি থেকে তেমন লাভ করা যায় না। সত্যজিৎ ভাবলেন আর সেই ছবি তৈরি করবেন না। সেই সময় এগিয়ে এলেন পূর্ণিমা পিকচার্সের নেপাল দত্ত এবং অসীম দত্ত। এবং ৬ লক্ষ টাকায় তৈরি হল গুপী গাইন বাঘা বাইন। তবে কালারে ছবি করার স্বপ্ন ত্যাগ করতে হল সত্যজিৎকে। যদিও ছবির শেষ দৃশ্যটি কালারেই করা হয়। এটাই যে সান্ত্বনা।

শুরু হয় প্রস্তুতি। কিন্তু কে হবে গুপি এবং বাঘা? সত্যজিতের প্রথম পছন্দ ছিল যাঁদের, তাঁদের এই ছবিতে পাননি। তিনি চেয়েছিলেন মার্লোন ব্র্যান্ডো এবং পিটার সেলার্স এই ছবিতে অভিনয় করবেন গুপী বাঘার চরিত্রে। কিন্তু কলম্বিয়া পিকচার্সের সঙ্গে সত্যজিতের সম্পর্ক সেই সময় ভালো জায়গায় ছিল না। ছবিটি প্রযোজনা করা থেকে পিছিয়ে আসে প্রযোজনা সংস্থা। সেই সঙ্গে হলিউডে একটি ফ্যান্টাসি তৈরি করার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় সত্যজিতের। হলিউডের ছবি তৈরি হলে আরও অনেক দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারত গুপী গাইন বাঘা বাইন। সেই দুঃখ শেষ বয়স পর্যন্ত তাড়া করে বেরিয়েছিল পরিচালককে। পিছিয়ে এসেছিলেন আর ডি বানসালও। তবে নেপাল দত্ত এবং অসীম দত্ত তাঁকে হতাশ করে না। ঠিক হল, অভিনেতা তপেন চট্টোপাধ্যায় গুপির চরিত্রে অভিনয় করবেন এবং বাঘা করবেন রবি ঘোষ। হাল্লা রাজার চরিত্রের জন্য তিনি প্রিয় সন্তোষ দত্তকেই ভেবে রেখেছিলেন। যাঁকে পরবর্তীকালে "জয় বাবা ফেলুনাথ" এবং "সোনার কেল্লা"এ জটায়ুর চরিত্রে দেখেছে দর্শক। অন্যান্য চরিত্রের জন্য বাছা হল হরিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,জহর রায়, শান্তি চট্টোপাধ্যায় এবং চিন্ময় রায়কে।

গুপী গাইন বাঘা বাইন সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা গল্প অবলম্বনে তৈরি। লেখাটি প্রকাশিত হয় সন্দেশ পত্রিকায়, ১৯১৫ সালে। এবং ছোটো থেকেই সত্যজিৎ রায় এই গল্পের ভক্ত। মনে মনে ঠিক করেছিলেন ছবি তৈরি করবেন। তা শেষমেশ শুরু হল শুটিং। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে। গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবিটি দেখেননি এমন কোন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবুও বলে রাখা ভালো, এই গল্পের দুই প্রধান চরিত্র গুপী এবং বাঘা। একজন গান গায়। অন্যজন ঢোল বাজায়। একজনের বাড়ি আমলকি গ্রামে অন্যজনের হরিতকী। তারা এত খারাপ গান গায়, আর এত খারাপ ঢোল বাজায়, যে গ্রামের লোকে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন তাদের গ্রাম ছাড়া করল গাধার পিঠে চাপিয়ে। দুজনের দেখা হলো বাঁশবন। এবং রাত্রে এসে দেখা দিল ভূতের রাজা। ভূতের রাজা দিল বরে পাল্টে গেল বিভাগের জীবন।

আর সেই বাঁশবন থেকেই ফুটে উঠতে শুরু করে সত্যজিতের ক্যারিশমা। সত্যজিতের নির্মিত ভূতের রাজা বাঙালিদের কাছে নস্টালজিয়ার অন্য এক নাম। আইকনিক ফিগারও যেতে পারে। ভূতের এমন চেহারা আগে কখনও বাংলা চলচ্চিত্রে নির্মিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও নির্মিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এই ছবিতে ভূতকে দেখে দর্শকের বিন্দুমাত্র ভয় করবে না। বরঞ্চ মনে হবে ভূতের মধ্যে ভালো কিছু আছে, যা ভালো মানুষের জীবন খারাপ থেকে ভালোয় পরিণত করতে পারে। ঠিক যেমনটা ঘটে গুপি বাঘার ক্ষেত্রে।

ভূতের রাজার সেই রূপ, একটি তারার টিমটিমে আলোর মধ্যে ক্রমশ এগিয়ে আসছে টোপর পরা এক ভূত রাজা। অদ্ভুত তার কণ্ঠস্বর। এই কণ্ঠস্বরও এক অনন্য নজির। কণ্ঠস্বরটি সত্যজিৎ রায় নিজেরই। ছড়ায় কথা বলে ভূতের রাজা। পরবর্তীকালে হীরক রাজার দেশে ছবিতেও ফিরে আসে এই ভূতের রাজা। ফিরে আসে "গুপি বাঘা ফিরে এল" ছবিতেও। যদিও সেই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়। বাবার এই অনন্য সৃষ্টি কে ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন সন্দীপ। ETV BHARATকে সন্দীপ রায় বললেন, "যখন গুপি বাঘা ফিরে এল তৈরি করলাম, বাবার তৈরি ভূতের রাজাকে কীভাবে উপেক্ষা করি বলুন? এটা একটা অনন্য সৃষ্টি। এর কোনও বিকল্প নেই। বাবাই পারতেন এই ধরনের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে।"

তারপর উল্লেখযোগ্য, ভূতের সেই নাচ। যেখানে রোগা-মোটা, লম্বা-বেটে, বাঙালি, বিদেশি, ফরাসি, জার্মানি সবধরনের ভূতেরা একটি কোরিওগ্রাফি করে। এই নাচের জন্য সত্যজিৎ এসভি রাওকে প্রশংসা করেছিলেন। নাচে এমন এক টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়, যা সেই সময় দাঁড়িয়ে চিন্তা করা বহুদূর। সেই নাচডি ছিল সাড়ে ৬ মিনিটের। চার ধরনের ভূতকে চারটে লাইনে দাঁড় করিয়ে নাচিয়ে ছিলেন একই সঙ্গে। এর কারণ, সমাজের বৈষম্যকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। ১২টি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

হাল্লা এবং সুন্ডির রাজার যুদ্ধের সময় প্রয়োজন ছিল কিছু দুস্থ চেহারার সৈনিকের। সবকিছু তো আর মেকআপে করা যায় না। আর সেই সময় মেকআপ তত উন্নত ছিল না, যে ভালো চেহারার মানুষকে মেকআপে দুস্থ বানানো যাবে। তাই সত্যজিতের মাথায় বেরিয়ে আসে এক আইডিয়া। তিনি আফগানিস্তানের দুস্থ মানুষদের এই ছবিতে অভিনয় করার করানোর জন্য রাজি করান। এমন কিছু মানুষকে যাঁরা ঠিকমতো খেতে পায় না। বলা হয় দুবেলা ভালোমতো খেতে দেওয়া হবে। তাঁরা সকলেই রাজি হয়ে যান। তাঁদের পেট ভরে খাইয়েছিলেন সত্যজিৎ।

ছবি মুক্তির পর শুধু ছোটোদেরই নয়, বড়দেরও অসম্ভব পছন্দ হয়েছিল ছবিটি। সেই সঙ্গে জিতে নেয় অসংখ্য পুরস্কার। ১৬তম জাতীয় পুরস্কারে দুটি বড় অ্যাওয়ার্ড পায়। একটি সেরা ফিচার ফিল্ম হিসেবে এবং অন্যটি সেরা পরিচালকের। বিদেশের মাটিতে চারটে পুরস্কার পায়। অ্যাডিলেডে দা সিলভার ক্রস, অকল্যান্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার, মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা ছবির পুরস্কার এবং টোকিওতে মেরিট অ্যাওয়ার্ড। বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন বিয়ের জন্য মনোনীত হয়েছিল গুপী বাইন বাঘা বাইন।





Conclusion:সত্যজিতের পরিচালনায় এবং উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভাবনায় গুপী গাইন বাঘা বাইন আজও ভারতীয় চলচ্চিত্রকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করছে। ছবির সিক্যুয়াল তৈরি হয়েছে হীরক রাজার দেশে। পুত্র সন্দ্বীপ রায় তৈরি করেছেন গুপি বাঘা ফিরে এল। ছবির হিন্দিতে রিমেক হয়েছে গুপি গাওয়াইয়া বাঘা বাজাইয়া। ছবিটি পরিচালনা করেছেন শিল্পা রানাডে। সেই ছবিটি ও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হয়েছে এবং পুরস্কৃত হয়েছে।

সন্দীপ রায় জানিয়েছেন, চতুর্থ ছবিটি তিনি তৈরি করতে চলেছেন। তিনি বলেছেন, যদিও রবি ঘোষ এবং তপেন চট্টোপাধ্যায় ছাড়া বাঘা গুপি চিন্তাই করা যায় না। তিনি চান, গুপী ও বাঘা ছেলেদের নিয়ে ছবি তৈরি করতে। হীরক রাজার দেশের শুরু সেই লাইন, "মোরা দুজনাই রাজার জামাই... আর আছে পোলাপান একখান একখান" সেই সূত্র ধরেই তিনি চতুর্থ সিক্যুয়াল তৈরি করবে।

আজ বাদে কাল, অর্থাৎ ১০ মে মুক্তি পাচ্ছে নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি কণ্ঠ। সেখানেও দর্শক দেখে নিয়েছে ছবিতে ভূতের রাজার ঝলক।
Last Updated : May 8, 2019, 2:52 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.