কলকাতা, 21 নভেম্বর: কিংবদন্তি সুরকার সলিল চৌধুরীর (Salil Chowdhury) 98তম জন্মদিন ছিল 19 নভেম্বর । তাঁকে ঘিরে স্মৃতির পাতা ওল্টালেন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র (Debojyoti Mishra)।
তাঁর সুরের জাদুতে সমৃদ্ধ হয়েছে টলিউড থেকে বলিউড । শুধু ছায়াছবির গান নয় । বাংলা আধুনিক গানেও একটা ঘরানা তৈরি করেছিলেন তিনি । সুরস্রষ্টা সলিল চৌধুরীর অবদান নতুন করে বলার নয় । সাধারণের ভিড়ে মিশে থাকা অসাধারণ সলিল চৌধুরীকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র । ঘটনাচক্রে 19 তারিখ ছিল তাঁরও জন্মদিন । কিংবদন্তীকে ঘিরে স্মৃতির পাতা ওল্টালেন তিনি ।
দেবজ্যোতি মিশ্র বললেন, "সলিল চৌধুরীর জন্মদিনে যে সলিলদাকে আমি দেখেছি তাঁর কথা বলতে গেলে বলব, পৃথিবীর সেরা কম্পোজারদের মধ্যে উনি একজন । গানের বাইরের মানুষ সলিলদা আরও ইন্টারেস্টিং ছিলেন । তিনি ছিলেন সর্বসাধারণের বন্ধু । মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার মানুষ । মিছিলের অনেক ভিড়ের একজন মানুষ । জনসংযোগ কাকে বলে, কতটা শিকড়ে গিয়ে, গভীরে গিয়ে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করা যায়, তা সলিলদার কাছ থেকে শিখেছি ।"
আরও পড়ুন: Basanta Bilash: টিভিতে বসন্ত বিলাপের স্মৃতি ফেরাবেন কাঞ্চন, সঙ্গী কমলিকা
তিনি আরও বলেন, "ঠিক যেন একটা সুতো যা তাঁর আঙুল থেকে আমার আঙুলে জড়িয়ে গিয়েছে । প্রায় গত দু'বছর ধরে পৃথিবী জুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি আমরা দেখেছি ৷ করোনার থাবা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা ক্ষত ছেড়ে গিয়েছে তার পরিমাপ করা কঠিন । এমন সময়ে এই যে শ্রমজীবী ক্যান্টিন হয়েছে, মানুষ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, আমিও এতে শামিল হয়েছি ৷ সবই ওই সুতোটা হাতে জড়িয়ে আছে বলেই সম্ভব হয়েছে । না হলে হত না । সলিলদাকে দেখেছি সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে ফলন কেমন হচ্ছে তা নিয়েও কথা বলতে । চাষিদের অবস্থারও খোঁজ রাখতেন সলিলদা । এহেন শিকড়ের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণেই এ রকম গান ভাবতে পারতেন এবং তৈরি করতে পারতেন । কাজের ক্ষেত্রেও বহু মানুষের যোগাযোগে মিউজিক বানাতেন । কয়ার, মিউজিশিয়ানস সব মিলিয়ে গান তৈরি হত, যাতে কত মানুষ যুক্ত হচ্ছেন সেটা ছিল দেখার, শেখার মতো । আজও আমি যে কাজ করি, সেখানে চেষ্টা করি কত বেশি মানুষ নিয়ে কাজটা করা যায় ।"
আরও পড়ুন: Ena Shieladitya Interview: যশ-নুসরতের আসন্ন ছবি নিয়ে একান্ত আড্ডায় শিলাদিত্য-এনা
দেবজ্যোতি মিশ্রর মতে, "সলিল চৌধুরী অত বড় কম্পোজার হয়েও সেলেব্রিটি সুলভ আচরণ করেননি কখনও । সবার মধ্যে মিশে যেতে পারতেন । ওঁর মুম্বইয়ের বাড়িটি ছিল মিউজিশিয়ানদের জন্য অবারিত দ্বার । আজ এমন কঠিন সময়ে ওঁর এই দিক গুলোর কথাই বেশি করে মনে পড়ছে । আজ আমারও জন্মদিন । জীবনে অনেক কিছুই শিখেছি । তার মধ্যে সলিলদা শিখিয়েছেন কী ভাবে সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঁচা যায় । এই যে নিজেকে সেলিব্রিটি ভেবে অন্যদের থেকে দূরে থেকে বাঁচার চেয়ে সবার সঙ্গে বাঁচার যে আনন্দ, সেটা সলিলদার জীবন যাপনের থেকে পাওয়া । এই সলিল চৌধুরীও সঙ্গীতশিল্পী সলিল চৌধুরীর মতোই আমার জীবন যাপনে গুরুত্বপূর্ণ । ওঁর ইচ্ছা ছিল সুরকার কীভাবে তৈরি করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক । যেখানে মিউজিক নিয়ে, কম্পোজিশন নিয়ে যাঁরা ভাবছেন, তাঁরা শিখতে পারবেন সেই বিষয়ে খুঁটিনাটি সব কিছু । যদিও সেই ভাবনা বাস্তবে রূপ পায়নি । কিন্তু কত মিউজিশিয়ান তিনি যে তৈরি করে গিয়েছেন, আজও তাঁর গান থেকে যে কতজন কতকিছু শিখছে, তা ভাবলে অবাক হই । আমিও গানের পাঠশালা তৈরি করেছি, ওই যে বলেছিলাম, সুতোয় বাঁধা পড়ে রয়েছি ।"
আরও পড়ুন: Bollywood on Farm Laws: "শিক্ষা নিক ভবিষ্যতের সরকার", কৃষি আইন প্রত্যাহারে খুশি বলিউড