ব্যাঙ্কের মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে অভিনয়ের নেশায় লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের রুটিনে মাত্র সাত বছর। এর মাঝেই একাধিক বাংলা ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে অভিনয় করে ফেলেছেন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা সুরজিৎ চৌধুরী । তালিকায় আছে 'কুসুম দোলা', 'করুণাময়ী রানী রাসমণি', 'গোপাল ভাঁড়', 'জরোয়ার ঝুমকো', 'রাখী বন্ধন', 'স্ত্রী', 'হুঁশিয়ার বাংলা', 'খোকাবাবু', 'মহাতীর্থ কালীঘাট'। ছবির তালিকায় আছে 'নবাব', 'মিশন চৌধুরী রাজবাড়ি', 'ল্যাবরেটরি', 'দ্য ফোর্থ ডাইমেনশন', 'দ্য পেইন্টিংস ইন দ্য ডার্ক'। এহেন অভিনেতা এবার পা রাখতে চলেছেন বলিউডে । ২০১৯-এ দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করার পর থেকে নাকি কমে গেছে তাঁর টেলিভিশনের কাজ । অভিনয় এবং রাজনৈতিক জীবন নিয়ে নানান বিস্ফোরক কথা জানালেন সুরজিৎ (Actor politician Suraajit Choudhury Shares his Thoughts with ETV Bharat) ।
ইটিভি ভারতঃ এবার তাহলে বলিউডে পা?
সুরজিৎঃ হ্যাঁ, সেরকমই খবর আমার নিজের কাছেও (হেসে)। দীর্ঘ দু'বছর ধরে আটকে ছিল ছবিটা । আপাতত সিডউল হয়েছে । মার্চের শেষে বা এপ্রিলের শুরুতে শুরু হবে শুটিং। ছবির নাম 'দের রাত'। এনআরআই চরিত্র করছি আমি । এর থেকে বেশি কিছু এখনই বলতে পারব না ৷ আলিয়া ভাট, অনুপম খের রয়েছেন এই ছবিতে । খুব এক্সাইটেড । খুব ভাল একটা চরিত্র আর দারুণ স্ক্রিপ্ট । আশা করি সকলের ভাল লাগবে 'দের রাত'। রাজস্থানের জয়সলমীরে হবে শুটিং ।
ইটিভি ভারতঃ হাওয়ায় এমন খবরও ভাসছে ওয়েব সিরিজেও নাকি কাজ করছেন ?
সুরজিৎঃ হ্যাঁ ঠিকই খবর পেয়েছেন । একটা নামী প্ল্যাটফর্মে দু‘টো ভাষায় একটা ওয়েব সিরিজে কাজ করার কথা চলছে আমার । কথা এগিয়েছে । ফেব্রুয়ারিতে বসব পরবর্তী আলোচনায় । ডিরেক্টর, প্রোডিউসারের নাম এখনই বলতে পারব না । তা ছাড়া একজন নামজাদা পরিচালকের সঙ্গে বাংলাতেও বড় পর্দাতে কাজের কথা চলছে । ওনার প্রচুর ছবি দেখি । কিন্তু নাম এখন বলতে চাইছি না ।
ইটিভি ভারতঃ মুক্তি পেতে চলেছে আপনার কোনও ছবি?
সুরজিৎঃ আছে কয়েকটা । খুব বড় রোলে নয় । তবু কাজ তো কাজই হয়। আছে 'শুভ নববর্ষ', 'বিপ্লব আজ ও কাল', 'আবেশ'।
ইটিভি ভারতঃ অভিনয়ে বেশ ব্যস্ত । রাজনীতিতে সময় দেন কীভাবে ?
সুরজিৎঃ রাজনীতিতে বেশ কিছু বড় কাজে আমাকে দেখতে পাওয়া যায় । লাস্ট একবছর একটু কম কাজ করেছি । কারণ স্টার ক্যাম্পেনার হিসেবে এবার বিধানসভা নির্বাচনে ছিলাম আমি । তাই এই ফিল্ডে ব্যস্ততা একটু বেশি ছিল । এবার প্রার্থী হবার সম্ভাবনাও ছিল । সেই প্রসঙ্গ থাক । অভিনয় আর রাজনীতি ব্যালান্স করে চলার চেষ্টা করছি । বিজেপি আমার রাজনৈতিক পরিবার । এটা আমার কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অভিনয়ও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ ওটার জন্যই মানুষ আমাকে চেনেন । দু‘টো দিকই ব্যালান্স করতে পারি আমি । জানি না আগামীতে আমি কোনটায় বেশি সক্রিয় থাকব । তবে, চেষ্টা করব দু‘টোকে সমান গুরুত্ব দিয়ে চলার ।
ইটিভি ভারতঃ রং কি কাজে প্রভাব ফেলে ? কী বলবেন আপনি ?
সুরজিৎঃ ২০১৯-এ আমি বিজেপিতে আসার পর টেলিভিশন থেকে কম ডাক পাচ্ছি । একইভাবে যাঁরা বিজেপিতে আছেন, তাঁরা যাতে কাজ না পান তার চেষ্টাও চলছে। এমনও বলা হয়েছিল আমাকে, বিজেপি ছেড়ে মিডিয়াতে বাইট দিলে আমি কাজ পাব । কেন কাজ কমে গিয়েছে তা আমার কাছে পরিষ্কার । অভিনয় করতে গেলে কেউ আমরা বিজেপির হয়ে 'জয় শ্রী রাম'ও বলি না, আবার 'খেলা হবে'ও বলি না । আমরা তো অভিনেতা । ২০১১ থেকেই রং খুব কাজ করছে ইন্ডাস্ট্রিতে । কাজ পাচ্ছে না অন্য দলের সমর্থকেরা ।
ইটিভি ভারতঃ এমন কথা শোনা যায় যে, টলিউডের অভিনেতাদের হাতে তেমন কাজ না থাকলে তাঁরা রাজনীতিতে আসেন । আপনি কী বলবেন?
সুরজিৎঃ এটা মানতে পারলাম না । কোনও পার্টিই বোধহয় সেভাবে কাউকে নেয় না । অন্তত আমি বিজেপির কথা বলতে পারি । তবে আরেকদিকে এটাও না বলে পারি না । তৃণমূল মুড়ি মুড়কির মতো অভিনেতাদের নিয়ে নেয় । তাঁদের অনেকেই আজ সম্মানীয় পদে । অনেকে আবার জায়গা না পেয়ে ছেড়েও তো দেয় দেখি । টাকা অনেকভাবে উপার্জন করা যায় । তার জন্য রাজনীতি করতে লাগে না । এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথাও অস্বীকার করা যায় না । অনেকেই টিকিট না পেয়ে দল ছেড়ে দেয় । থাক সেই প্রসঙ্গ।...
আরও পড়ুন :আমি সবচেয়ে ফাঁকিবাজ অভিনেতা, অকপট ইন্দ্রজিৎ
ইটিভি ভারতঃ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কী বলবেন?
সুরজিৎঃ আমি ২০১৯-এর ২১ জুলাই যেটা তৃণমূলের ঐতিহাসিক দিন, ওই দিনই দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে আসি। আগামী দিনে হয়ত একটা পদ পেতে চলেছি দলে। সেরকমই মৌখিক কথা হয়ে আছে । ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে নামটা দেখতে চাই নিজের । দল যে দায়িত্বই দিক ঠিক করে করার চেষ্টা করব । আমি অভিনয় করে রোজগার করি । তাকে আমি অবহেলা করতে পারব না কোনও মূল্যেই । মানুষের কাজে আসতে চাই । বিজেপি বাংলায় এলে অনেক কিছু পরিবর্তন হত । জনগণকে বলব, পাশে থাকুন । শিক্ষা, স্বাস্থ্যর অবস্থা খুব খারাপ এ রাজ্যে। সব চলছে কিন্তু স্কুল খুলছে না । সব জায়গায় গাইডলাইন নিয়ে কাজ চললে স্কুলে নয় কেন ? শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়লে তৃণমূলের অসুবিধা । কাটমানি, কালোবাজারিতে অসুবিধা হবে তো তাহলে । পুরো দলটা একটা সার্কাস পার্টি । হাস্যকর নিয়মবিধি জারি করে বসে আছে এরা ।