দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পাশ করা প্রকাশের IAS অফিসার হওয়ার কথা ছিল । অন্তত, সেরকমই পরিকল্পনা ছিল । তবে ভিতরে অন্য একটা লড়াই চলছিল তাঁর । কিছু সৃষ্টি করার তাগিদ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল প্রকাশকে । তাই নিজের প্যাশনের ডাকে সাড়া দিয়ে পকেটে মাত্র 300 টাকা নিয়ে স্বপ্ন নগরী মুম্বইতে পাড়ি দেন প্রকাশ, তখন সত্তরের দশক ।
আর এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায় । ইচ্ছেশক্তি, প্যাশন, সাহস ও লক্ষ্য - এসবের উপর ভিত্তি করে স্বপ্নপূরণের পথে এগোতে শুরু করেন প্রকাশ ।

তবে পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বই আসেননি প্রকাশ । তিনি তো চিত্রকর হতে চেয়েছিলেন । JJ স্কুল অফ আর্টসে নাম নথিভুক্ত করানোর কথা ভেবেছিলেন । কিন্তু, সেখানে পরবর্তী সেমিস্টার শুরু হওয়ার আগে ভরতির সুযোগ পাননি তিনি । ভরতি না হওয়া পর্যন্ত কিছু তো একটা করতে হবে । তাই 20 বছরের প্রকাশ এক ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি জোটালেন, যেখানে তাঁর থেকে অনেক বেশি বয়সের ব্যবসায়ী ছাত্রদের পড়াতে হত তাঁকে ।
এরকম চলতে চলতে একদিন অগ্নি জানি নামে একজনের সঙ্গে আলাপ প্রকাশের । তিনি বলিউড ফিল্মে আর্ট ডিরেক্টর ছিলেন । সেই সময়ে অগ্নি কাজ করছিলেন চাঁদ পরিচালিত 'ধর্ম' ছবিতে । প্রকাশের অনেক জোরাজুরিতে অগ্নি তাঁকে সেই ফিল্মের সেটে নিয়ে যান । রেখা, প্রাণের মতো তারকাদের সামনে থেকে দেখতে পান প্রকাশ । ব্যাস, জীবনের টার্নিং পয়েন্টটা সেদিনই খুঁজে পান প্রকাশ । ফিল্মমেকিং প্রক্রিয়াটার প্রেমে পড়ে যান তিনি । বুঝতে পারেন এতগুলো বছর ধরে তিনি ফিল্মমেকিংই করতে চেয়েছেন ।
চাঁদের অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করা শুরু করেন প্রকাশ । তবে মেয়াদ মাত্র পাঁচ দিন । পাঁচ দিনেই তিনি বুঝেছিলেন যে, অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করলে পুরোপুরি পরিচালক হতে অনেক সময় লেগে যাবে । এই বোধ উদয় হওয়ার পরের দিনই FTII অর্থাৎ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার উদ্দেশে জার্নি শুরু করেন তিনি ।

তবে দুর্ভাগ্যবশত, FTII-এর ডিরেক্টর গিরিশ কর্নাড ও ছাত্রদের মধ্য সংঘর্ষের কারণে বন্ধ হয়ে যায় ইনস্টিটিউট । ঝা ডকুমেন্ট্রি মেকিংয়ের দিকে ঝোঁকেন ও 1975 থেকে 1981-এর মধ্যে ইংল্য়ান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়ার মতো দেশ ঘুরে ফেলেন । এই সময়েই তিনি ব্যালে ডান্সার ফিরোজ়া আলির উপর একটা ডকুমেন্ট্রি তৈরি করেন । তবে ডকুমেন্ট্রি বানালেও ফিচার ফিল্ম তৈরির একটা তাগিদ তৈরি হয় প্রকাশের মধ্যে ।
প্রকাশ যখন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন, তখন হিন্দি সিনেমার 'গোল্ডেন এজ' শেষ হতে চলেছে । অপরিপক্ক প্রকাশ বুঝে উঠতে পারেন না কোন থিয়োরি মেনে ছবি তৈরি করা উচিত তাঁর । তাই নিজেই একটা গ্রামার তৈরি করেন তিনি । মাধুরী দীক্ষিতকে নিয়ে 'মৃত্যুদণ্ড' ছবিটা সেই গ্রামারেরই প্রথম পাঠ । আর্ট আর কমার্সের মধ্যে কী করে ব্যালেন্স করে চলতে হয়, তা নিয়ে প্রকাশ ভাবতে শুরু করেন এই ছবির মাধ্যমেই ।
'রাজনীতি' বা 'সত্যাগ্রহ'-এর মতো সিনেমায় প্রকাশ একটা বিশাল ক্যানভাসে ছবি এঁকেছেন । অন্যদিকে 'গঙ্গাজল'-এর মতো ছবিতে একান্ত ব্যক্তিগত স্তরের সমস্যা তুলে ধরেছেন তিনি । তবে ট্রিটমেন্ট যা-ই হোক না কেন, সমাজের নগ্নতাকে প্রতি ছবিতেই প্রকট করে দেখিয়েছেন প্রকাশ । ভারতবর্ষের মধ্যে যে কত টুকরো টুকরো ভারতবর্ষ বাস করে, প্রকাশের সিনেমা দেখলেই তা বোঝা যায় । 'আরক্ষণ', 'অপহরণ'-এর মতো ছবিও তার ব্যতিক্রম নয় ।
একাধিকবার জাতীয় পুরস্কারের অধিকারী প্রকাশ ঝা, শুধুমাত্র পরিচালক তা নয় । প্রযোজনা ও অভিনয়তেও নিজের বিচক্ষণতা ও প্রতিভা প্রমাণ করেছেন তিনি । 'ষাঁণ্ড কি আঁখ' বা 'জয় গঙ্গাজল'-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় যে কারও রক্তে আগুন জ্বালিয়ে দেবে, রাগ হবে তাঁর অভিনয় দেখলে । তবে সবাই এক বাক্য়ে স্বীকার করে নেবেন যে, চরিত্রটির সঙ্গে যথার্থ জাস্টিস করেছেন প্রকাশ ।

গণিতজ্ঞ বিশষ্ঠ নারায়ণ সিংয়ের জীবনকে সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে প্রকাশ ঝায়ের । তাঁকে আবার পরিচালকের আসনে দেখতে মুখিয়ে দর্শক । কারণ 2016 সালে 'জয় গঙ্গাজল'-এর পর তাঁর পরিচালিত কোনও ফিল্ম মুক্তি পায়নি । বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় টানাপোড়েনের মধ্যে প্রকাশ ঝায়ের মতো পরিচালকের ক্যামেরা হাতে নেওয়া খুবই প্রয়োজনীয় ।
শিল্পী প্রকাশ ঝায়ের এই জার্নি তাঁরই লেখা দু'টো লাইন দিয়ে শেষ করা যাক, কারণ এর থেকে উপযুক্ত লাইন আর কিছু হতে পারে না....
आदमी सिर्फ जिंदा ही नहीं रहे, जमके जिंदा रहे
कि एहसास बना रहे सांसे सिर्फ चल नहीं रही हैं सांसे बोल रही हैं