আবিরের সঙ্গে কথা হল ফোনে। সোশাল মিডিয়ায় স্বল্প পরিচয়তেই আবির ইন্টারভিউ দিতে রাজি হয়ে গেলেন। ফোন করাতেই বেজে উঠল বিখ্যাত বাংলা গানের কলার টিউন, "জীবনে কী পাব না, ভুলেছি সেই ভাবনা..."
ETV Bharat : কলার টিউনটা তো বেশ ভালো...
আবির সেনগুপ্ত : হাহাহা থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ। আমি পুরোনো দিনের বাংলা ছবির খুব বড় ফ্যান। আর এই গানটা ইজ আইকনিক।

ETV Bharat : আপনি কি আগে কলকাতায় থাকতেন? সম্প্রতি মুম্বইতে গেছেন নাকি...
আবির সেনগুপ্ত : না না আমি মুম্বইয়ের বাসিন্দা। কলকাতায় বড় হইনি। বাই দি ওয়ে আমার বাংলা কিন্তু খুব খারাপ। বিচ বিচ মে হিন্দি মে টুট পারুঙ্গা।
ETV Bharat : কোনও অসুবিধে নেই। এটা কি আপনার প্রথম হিন্দি ছবি?
আবির সেনগুপ্ত : তা ঠিক নয়। এটা আমার দ্বিতীয় হিন্দি মুভি। ইতিমধ্যেই আমি একটা ছবির পরিচালনা করে ফেলেছি সেটার এখন পোস্ট প্রোডাকশন চলছে। সেটার নাম ম্যান টু ম্যান। সেখানে আদা শর্মা এবং নবীন কস্তুরীয়া কাজ করেছেন। সেটা আমারই হোম প্রোডাকশনের ছবি।

ETV Bharat : সেটাও কি ফিচার ফিল্ম?
আবির সেনগুপ্ত : একেবারেই।
ETV Bharat : এটাও তো ফিচার ফিল্ম?
আবির সেনগুপ্ত : হ্যাঁ এটাও। ম্যান টু ম্যান আমরা সিনেমা হলে রিলিজ করব না। সরাসরি দিয়ে দেব কোনও ডিজিটাল প্লাটফর্মে। অরিজিনাল হিসেবে।
ETV Bharat : 'ইন্দু কি জাওয়ানি' কবে থেকে শুটিং শুরু হচ্ছে?
আবির সেনগুপ্ত : এটা সেপ্টেম্বর থেকে। কিয়ারা করবে ঠিক হল, সাইন করলাম আর অ্যানাউন্স করে দিলাম।

ETV Bharat : কোথায় কোথায় শুটিং হচ্ছে?
আবির সেনগুপ্ত : সেটা এখনও ঠিক হয়নি। কারণ আমাদের রেইকি করতে হবে।
ETV Bharat : কিয়ারা আডবানির সঙ্গে কাজ করতে কতটা এক্সাইটেড?
আবির সেনগুপ্ত : ও ভীষণ। আমি সুপার এক্সাইটেড। সি ইজ অ্যামেজিং। সি ইজ সুপার্ব। আমি সব সময় শুনেছি অভিনেতারা প্রথমে স্ক্রিপ্ট পড়ে। তারপর মাসের পর মাস কেটে যায়। সিদ্ধান্ত বলতে অনেক সময় নিয়ে নেন তাঁরা। তার উপরে আবার অ্যাটিটিউড প্রবলেম থাকে নাকি। কিয়ারার ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। কিয়ারা ছবিটার ব্যাপারে শুনল। বলল, "ইয়ার ইয়ে তো বহৎ আচ্ছা হে"। একেবারেই সময় নিল না। রাজি হয়ে গেল।

ETV Bharat : আচ্ছা...
আবির সেনগুপ্ত : আসলে কিয়ারা ভীষণ ইন্টেলিজেন্ট। সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতি। ছবি প্রত্যেকটা এসেন্স চট করে ধরে নিল। এটা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। সত্যি এরকমই একজনকে খুঁজছিলাম।
ETV Bharat : যা শুনেছি, এটা একটা ডেটিং অ্যাপ নিয়ে গল্প, কমেডি, তাই তো...
আবির সেনগুপ্ত : ব্যাঙ্গ অন। একদমই।
ETV Bharat : কিয়ারাকে এই ছবিতে কাস্ট করার কারণ কী?

আবির সেনগুপ্ত : আপনার কি মনে হয় না এই চরিত্রে কিয়ারা পারফেক্ট? করণ জহরের 'লাস্ট স্টোরি' গল্পে কিয়ারাই ছিল বেস্ট পার্ট। আমার মনে আছে ওই দৃশ্যটায় দর্শক অসম্ভব হেসেছিল।
ETV Bharat : আপনি কবে ঠিক করলেন চলচ্চিত্র পরিচালনাকে পেশা হিসেবে নেবেন?
আবির সেনগুপ্ত : আমি একজন অ্যাক্সিডেন্টাল ডিরেক্টর । অনেস্টলি বলছি, আমার ডিরেকশন দেওয়ার কোনও ইচ্ছেই ছিল না। আমি একজন চিত্রনাট্যকার হতে চেয়েছিলাম। আমি খুব একটা লিটারেচার পার্সন নই। আমি একজন ফিল্ম বাফ। সেটা ফিল্ম মেকার সত্ত্বার সব থেকেও বেশি।

ETV Bharat : ছবি পরিচালনা কীভাবে শুরু হল তাহলে...
আবির সেনগুপ্ত : বিষয়টা এরকম। আপনি যখন মুম্বইয়ের এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার কথা ভাববেন, কারওরই আপনার কাজ পছন্দ হবে না, আপনার স্ক্রিপ্ট পছন্দ হবে না, আপনাকে ঘুরতে হবে অনেক। অনেক সময় খারাপ যাবে। আমার ক্ষেত্রেও ঘটেছে। তারপর আমি নিজের একটা ছোট্ট কম্পানি তৈরি করি। আমার পার্টনার অনুশ্রী মেহেতা। ওই আমাকে ছবি পরিচালনা করার জন্য ঠেলে দিল। বলল, "তুমি এত ভালো লেখো, তুমি পরিচালনা করতে পারবে। তাই অন্য পরিচালকদের সঙ্গে দেখা করো না নিজেই পরিচালনা করো।"
ETV Bharat : ওই একটা কথাতেই রাজি হয়ে গেলেন?
আবির সেনগুপ্ত : না না। আমি ভাবলাম আমি কোনদিনও কোনও ইনস্টিটিউটে পড়িনি। কাউকে আসিস্ট করিনি। আমার কোনও নলেজ নেই। কীভাবে পরিচালনা করব। কিন্তু অনুশ্রী আমার ওপর বিশ্বাসটা বজায় রেখেছিল। বলল, "আমি তোমার সঙ্গে গত দুই আড়াই বছর ধরে ব্যবসা করছি। একসঙ্গে ছোটো ছোটো ছবি তৈরি করলাম। আমি এটা উপলব্ধি করতে পারি, তুমি একজন বড় পরিচালক হবে। তারপর আমি আমার প্রথম বাংলা ছবি তৈরি করলাম।"

ETV Bharat : আর সেই বাংলা ছবির নাম "যমের রাজা দিল বর"। পায়েল সরকার, আবির চট্টোপাধ্যায়...
আবির সেনগুপ্ত : হ্যাঁ হ্যাঁ। এই ছবিটা তৈরি করতেই আমি এক বছরের জন্য কলকাতায় এসেছিলাম। সেটাই আমার জীবনের প্রথম ছবি। যেটা অবিয়েসলি বাংলায়। ওই ছবিটা করে আমি খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছিলাম। এখন ওই ছবিটার জন্য অনেক চিঠি পাই। সম্প্রতি শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের হইচই থেকে আমাকে যোগাযোগ করেছিল। ওঁরাই আমাকে বলল এই ছবিটা টপ টেন ট্রেন্ডিং ফিল্মসের মধ্যে রয়েছে ওদের প্লাটফর্মে। আমাকে আর অনুশ্রী কে অনেক অভিনন্দন দিয়েছে ওঁরা।
ETV Bharat : আবার কবে বাংলায় ছবি বানাবেন?
আবির সেনগুপ্ত : আবার বানাব। খুব শিগগিরই বানাব। বাংলা আমার মাতৃভাষা। এটার উপর আমার আলাদা টান আছে। আলাদা ভালোবাসা আছে। বাংলায় ছবি তৈরি করতে হলে আমাকে আবার মুম্বই থেকে বাংলায় পুরো শিফট করতে হবে। এটা আমার কাছে এই মুহূর্তে খুব কঠিন বিষয়। মুম্বইতে থেকে বাংলা ছবি করা কঠিন, কারণ আমি প্রবাসী। যমের রাজা দিল বর যখন তৈরি করছিলাম আমাকে কলকাতায় ন'দশ মাস থাকতে হয়েছে। আমি মুম্বইতে কিছুই করতে পারিনি তখন। মুম্বই তাই আমার কাজের জায়গা। আমি এটা ছাড়তে পারব না।
ETV Bharat : একটা জিনিস জানতে খুব ইচ্ছে করছে। আপনি তো বাঙালি পরিচালক। মুম্বইতে আরও অনেক বাঙালি পরিচালকরা রয়েছেন। তাঁদের ছবিতে কিন্তু বাঙালি এলিমেন্ট পাওয়া যায়। আপনার ছবিতেও কি তেমনটা পাওয়া যাবে?
আবির সেনগুপ্ত : বাংলার প্রতি এই হ্যাংওভারটা আমার স্পেসিফিক সেন্সে আছে। আমি বাংলায় থাকিনি। যেভাবে বাঙালিরা থাকে। ২৬ বছর বয়সে 'যমের রাজা দিল বর' ছবিটা তৈরি করার সময় বাংলায় ছিলাম কয়েক মাস। তাই সেই টিপিকাল হ্যাংওভারটা তৈরি হয়নি। কিন্তু এমনকিছু ছবি আছে যেটা আমি কলকাতাতেই শুট করতে চাই। একটা বাঙালি চরিত্রকে বাংলার বাইরে নিয়ে এসে শুট করাতে আমার খুব অসুবিধা হবে। যদি বাঙালি চরিত্র নিয়েই কাজ করতে হয়, তাহলে আমি বাংলাতেই সেই কাজটা করতে পছন্দ করব। একটা ছবি আছে, যেটা আমরা কলকাতা থে শুট করতে চাই পরের বছর।
ETV Bharat : কী সেটা?
আবির সেনগুপ্ত : এখনও চিত্রনাট্য লেখা চলছে। সেটা একটা ফ্যামিলি কমেডি।
ETV Bharat : 'ইন্দু কি জাওয়ানি'-ও কমেডি। তাহলে কি কমেডি আপনার প্রিয় জঁর?
আবির সেনগুপ্ত : রম কম আমার প্রিয় জঁর। রোমান্টিক কমেডি। তবে সুমন বিষয়টা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং। আমি খুব পছন্দ করি। আমার মনে হয় মজার ছলে অনেক কঠিন বিষয় কেউ আমরা ব্যক্ত করতে পারি। তার জন্য অনেক ড্রামার প্রয়োজন হয় না। মানুষের জীবনে তো এমনিতেই অনেক স্ট্রেস। সিনেমার মাধ্যমে যদি স্ট্রেস দেখাতে থাকি, তাহলে মানুষ হাসবে কখন?
ETV Bharat : এটাতে দর্শকও অনেক বেশি আনন্দ পান...
আবির সেনগুপ্ত : একদমই তাই। যেমন আমার প্রিয় পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় এবং উডি অ্যালেন।
ETV Bharat : মুম্বইয়ের ইন্ডাস্ট্রি বাঙালি পরিচালকদের কতটা স্বাগত জানায়?
আবির সেনগুপ্ত : মুম্বইয়ের ইন্ডাস্ট্রি বা বলিউড তাঁদেরকেই স্বাগত জানায়, যাঁদের ছবির গল্পটা ভালো। সে ব্যক্তি যে জায়গা থেকেই আসুক না কেন। আমি যখন আমার প্রযোজকদের সঙ্গে দেখা করেছি, তাঁরা শুধু একটা জিনিসই দেখত, আমার ছবির গল্পটা ভালো কিনা। আর আমি আমার গল্পগুলোতে বিশ্বাস করেছি। তাই তাঁরাও বিশ্বাস করেছেন।
ETV Bharat : বাংলা থেকে কোন অভিনেতাকে বা কলাকুশলীকে ইন্দু কি জাওয়ানিতে পাবে দর্শক?
আবির সেনগুপ্ত : অভিনেতাদের পাবেন না। এটা তো গাজিয়াবাদের গল্প। আর বাঙালিদের হিন্দি বলাতে একটা অদ্ভুত বাঙালি টান আছে। যেটা এখানে উপযুক্ত নয়। তবে আমার ম্যান টু ম্যান ছবির ডিওপি বাঙালি। ওঁর নাম অভিমুন্য সেনগুপ্ত। একদম বাচ্চা ছেলে। মাত্র ২৫ বছর বয়স। যমের রাজা দিল বরের শুটিংয়ের সময় ও মেকিংটা করেছিল। যেসব বাঙালিদেরকে নিয়ে আমি ছবিতে কাজ করতে চাই, তাঁরা প্রত্যেকে মুম্বইতেই থাকেন। কলকাতার থেকে বেশি আমি মুম্বইয়ের মানুষজনকে চিনি।

ETV Bharat : বাংলার সব থেকে কী বেশি ভালো লাগে?
আবির সেনগুপ্ত : খাবার খাবার খাবার। বাঙালি খাবার আই ক্যান ড্রাই ফর।
ETV Bharat : থ্যাংক ইউ আবির... অনেক শুভেচ্ছা রইল
আবির সেনগুপ্ত : থ্যাংক ইউ টু।