লন্ডন : বিজ্ঞানীরা দেখছেন, প্রতিবছর পাঁচ হাজার টনেরও বেশি মহাজাগতিক ধূলিকণা পৃথিবীতে জমা হয় ।
আমাদের গ্রহে এসে পৌঁছয় ধূমকেতু আর গ্রহাণুর ধূলিকণা । এই মহাজাগতিক কণা বায়ুমণ্ডল ভেদ করে এগিয়ে যায়, আর আমরা দেখি উল্কাবৃষ্টি । অতিক্ষুদ্র আকারে এদের অনেকে পৃথিবীর মাটিতে পৌঁছে যায় ।
মাইক্রোমিটিওরাইট চিরকালই আমাদের গ্রহে এসে পড়ছে । ধূমকেতু বা গ্রহাণু থেকে তৈরি এই ধূলিকণার মাপ এক মিলিমিটারের দশ ভাগের একভাগ থেকে একশো ভাগের একভাগ হতে পারে । তারা বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে এসে আমাদের গ্রহের মাটিতে এসে পড়ে ।
20 বছর ধরে চলা আন্তর্জাতিক স্তরে গবেষণার মধ্যে দিয়ে ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ (সিএনআরএস), প্যারিস-সাক্লে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচলার হিস্ট্রি, ফ্রেঞ্চ পোলার ইনস্টিটিউটের সাহায্যে নির্ণয় করেছে যে কতখানি কণা মাটি পর্যন্ত পৌঁছয় ।
এই অতিক্ষুদ্র কণা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে গত দু’দশক ধরে সিএনআরএস-এর গবেষক জাঁ দুপ্রাতের নেতৃত্বে ছয়টি অভিযান চালানো হয় । এই অভিযান চলে ফরাসি-ইতালীয় কনকর্ডিয়া স্টেশনে (ডোম সি), যা আন্টার্কটিকার মাঝখানে অ্যাডেলি ল্যান্ড উপকূল থেকে 1100 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।
আরও পড়ুন : জয়বায়ু পরিবর্তন: চতুর্থ ‘কল ফর কোড’ চ্যালেঞ্জ শুরু করল আইবিএম
পৃথিবীর ধূলো প্রায় না থাকার জন্য এবং এবং বরফ জমার পরিমাণ কম হওয়ায়, ডোম সি হল মহাজাগতিক ধূলিকণা সংগ্রহ করার আদর্শ জায়গা ।
এই অভিযানে পর্যাপ্ত মহাজাগতিক কণা সংগ্রহ করা হয় (30 থেকে 200 মাইক্রোমিটার আকারের), যেখান থেকে তাদের বার্ষিক পরিমাণ মাপা যায় এবং তার থেকে বোঝা যায় পৃথিবীতে প্রতি বর্গমিটারে প্রতি বছর কতখানি এই ধরণের কণা জমা হচ্ছে ।
এই গবেষণার ফলাফল যদি গোটা গ্রহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি বছর জমা হওয়া মাইক্রোমিটিওরাইটের পরিমাণ 5200 টন । 15 এপ্রিল এই গবেষণা প্রকাশিত হতে চলেছে আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স জার্নালে ।
আমাদের গ্রহে মহাজাগতিক পদার্থের এটাই মূল উৎস । আকারে বড় বস্তু, যেমন উল্কার থেকে এটা অনেক বেশি, যাদের পরিমাণ বছরে 10 টনেরও কম ।
মাইক্রোমিটিওরাইটের স্রোতকে বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ কণা সম্ভবত ধূমকেতু থেকে আসছে (80 শতাংশ), আর বাকিটা গ্রহাণু থেকে ।
পৃথিবী সৃষ্টির পর কীভাবে জল ও অন্যান্য কার্বন অনু তৈরি হয়েছিল, এবং সেখানে মহাজাগতিক কণাদের ভূমিকা কতখানি, তা বুঝতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করতে পারে এই গবেষণা ।