ওয়াশিংটন : অন্য কোনও গ্রহে বিমান চালানো ও তা নিয়ন্ত্রণ করার মতো ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা করতে চলেছে নাসা । তাদের লক্ষ্য আগামী 11 এপ্রিল মঙ্গলগ্রহের হেলিকপ্টার ইনজেনুইটিকে ওড়ানো ।
8 এপ্রিল থেকে 11 এপ্রিলে এই প্রচেষ্টার তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডোনাতে নাসার প্রপুলসন ল্যাবরেটরি (জেপিএল) এ ঘোষণা করা হয় ।
নাসা জেপিএল-র তরফে টুইটারে লেখা হয়, ‘‘এসো, আমাদের সঙ্গে ওড়ো । মঙ্গলগ্রহের হেলিকপ্টার এমন একটা কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে । যা আগে কখনও হয়নি, অন্য কোনও গ্রহে চালানো হবে এবং নিয়ন্ত্রণ করা হবে । 11 এপ্রিলের আগে এই ওড়ার কাজ হবে না । তথ্য পৃথিবীতে আসবে 12 এপ্রিল ।’’
গত 18 ফেব্রুয়ারি লালগ্রহে পৌঁছায় নাসার প্রিজ়ারভেন্স রোভার । ওই রোভারের পেটেই মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হয় ইনজেনুইটিকে ।
প্রস্তুত হওয়ার পর ইনজেনুইটির মঙ্গলের 30 দিন (পৃথিবীর 31 দিন) প্রয়োজন পরীক্ষামূলক উড়ানের জন্য ৷
নাসার সদর দফতরের প্ল্যানটরি সায়েন্স ডিভিসনের ডিরেক্টর লরি গ্লেজ একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘যখন নাসার সোজ়োউরনের রোভার 1997 সালে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছেছিল, তখনই এটা প্রমাণিত হয় যে লালগ্রহে ঘোরাঘুরি সম্ভব । মঙ্গলগ্রহে আমরা কীভাবে গবেষণা করব, তাকে একটা নতুন পথ দেখিয়েছিল । একইভাবে আমরা ইনজেনুইটি থেকে শিখতে চাই ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য ।’’
তিনি বলেন, ‘‘ইনজেনুইটি- নামকরণ যথাযথভাবে করা হয়েছে । এখানে একটি প্রযুক্তির প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা অন্য কোনও বিশ্বের প্রথম চালিত বিমান হতে পারে এবং যদি সফল হয়, তবে আমাদের দিগন্তকে আরও প্রসারিত করতে পারে এবং মঙ্গলগ্রহে গবেষণার মাধ্যমে আর কী কী সম্ভব, তার পথ আরও প্রশস্ত করতে পারে ।’’
আরও পড়ুন : মঙ্গলের প্রথম অডিয়ো প্রকাশ নাসার, ভিডিয়ো এল পার্সির অবতরণের
নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় মঙ্গল গ্রহে ওড়া পৃথিবীতে একই উপায়ে ওড়ার চেয়ে কঠিন । লালগ্রহে উল্লেখযোগ্য মাধ্যাকর্ষণ রয়েছে (পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ) । তবে এর বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর উপরিভাগের চেয়ে মাত্র 1 শতাংশ ঘন ।
দিনের বেলায় পৃথিবীতে যতটা সূর্য শক্তি আসে, মঙ্গলগ্রহের দিনে তার থেকে অর্ধেক আসে । রাতের বেলা তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস 90 ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায় । যার ফলে যে কোনও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ তুষারে আটকে যেতে পারে ও ভেঙে যেতে পারে ।
পারসিভারেন্স রোভারে জায়গা করে নিতে হলে ইনজেনুইটির আকারও ছোট হতে হবে । মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে উড়তে হলে এটাকে হালকা হতে হবে । মঙ্গলগ্রহের রাতগুলিতে টিকে থাকতে হলে এর ভিতরের অংশকে গরম করে রাখার মতো শক্তি থাকতে হবে ।
ভয়াবহ বাতাসে এর রোটারগুলি থেকে সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক হিটার এবং অন্যান্য উপাদানগুলির কাজ করার ব্যবস্থা করা । যা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার জেপিএল এ ভ্যাকুয়াম চেম্বার এবং পরীক্ষাগারগুলিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে ।
জেপিএল এ মঙ্গলগ্রহের হেলিকপ্টারের মুখ্য ইঞ্জিনিয়র বব বলরাম বলেন, ‘‘ছয় বছর আগে এই যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ বিমানের ইতিহাসে অনাবৃত অঞ্চল ধরে নিয়েছি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এবং যখন ভূপৃষ্ঠে বসানো হবে, সেটা খুব বড় চ্যালেঞ্জের কাজ । আর রোভারকে ছাড়া এটাকে শক্তিশালী করে মঙ্গলগ্রহের প্রথম রাতে টিকিয়ে রাখা আরও বড় চ্যালেঞ্জের কাজ ।’’