ETV Bharat / opinion

আইনপ্রণেতা হিসেবে অপরাধীদের অবস্থান গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হ্রাস করে

হাস্যকর হলেও সত্য যে, একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অপরাধ থাকলে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয় । অন্য দিকে, একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় স্থায়ীভাবে । এই বিষয়টিকে ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে ইতিমধ্যেই আদালতে আবেদন করা হয়েছে । তবে, কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে স্থিতিশীলতার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে । ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একাধিক অপরাধ থাকলেও তাদের জনপ্রতিনিধি করার জন্য বেছে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি । আর এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে সংসদের মর্যাদা, সম্মান, ঐতিহ্য মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে ।

আইনপ্রণেতা হিসেবে অপরাধীদের অবস্থান গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হ্রাস করে
আইনপ্রণেতা হিসেবে অপরাধীদের অবস্থান গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হ্রাস করে
author img

By

Published : May 14, 2021, 6:49 AM IST

স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর দেশের সব থেকে বড় আইন প্রণয়নকারী সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটে । আজ ভারতের সংসদ 70তম বর্ষে প্রবেশ করেছে । ভারতের সংসদের পথ চলার শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে ভারতের পথ চলা শুরু হয়েছিল । যাঁর কথা আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে । তিনি বলেছিলেন, "আমি আশা করি সংসদ দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা প্রদান করবে । সংসদের কার্যকলাপ একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ।"

পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু সংসদকে বিশ্বের এক সপ্তামাংশ জনগণের ইতিহাস তৈরির একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন । লোকসভার প্রথম অধ্যক্ষ গণেশ বাসুদেব মাভলঙ্কার সংসদীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে উঁচুতে তুলে ধরার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন । বিশ্বখ্যাত গার্ডিয়ান 1954 সালে ভারতীয় সংসদের প্রশংসা করে লিখেছিল, পণ্ডিত নেহরু একে গোটা এশিয়ার একটি স্কুল হিসেবে দাবি করতে পারেন । একটা কথা স্পষ্ট ভাবে বলা চলে, এই বাড়ির প্রতিটি জনগণ সে সময় পুরোপুরি জনসেবায় নিবেদিত ছিলেন ।

সেই সময় সংসদ এক অনন্য দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করেছিল । সংসদের সদস্যরা অনুভব করতেন, আইনসভার কোনও রূপ অবক্ষয় গোটা গণতন্ত্রের পতন ডেকে আনবে । নিজেদের রাজনৈতিক চিন্তা ধারাকে সরিয়ে রেখে প্রতিটি সংসদ সদস্য একত্রিত হয়ে দোষী সদস্যদের অপসারিত করতে এগিয়ে আসতেন । কংগ্রেস সাংসদ ফিরোজ গান্ধি সংসদে উত্থাপত করেছিলেন মুদগাল নামে এক সাংসদের দুই হাজার টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গ । ছুড়ে দিয়েছিলেন প্রশ্ন । মুদগালকে কংগ্রেস থেকেও ভর্ৎসনা করা হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু 1951 সালের সেপ্টেম্বর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেন । এভাবেই নেহরু সংসদের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন ।

আরও পড়ুন : নির্বাচনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ যথাযথ ছিল না : রাজ্যপাল

কিন্তু, মহান নেতাদের দ্বারা তৈরি সেই মূল্যবোধগুলি 17 টা সাধারণ নির্বাচনের পর কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল । সংসদ থেকে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা সর্বত্র আইনত অপরাধীদের উপস্থিতিতে ভরে গিয়েছে । একাধিক সাংসদ বিধায়কের নামে রয়েছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ।

ব্রিটিশরা তাদের আয় ও ব্যয়ের বিবরণ আলোচনা করতে একবার আইনসভার সমাবেশ করে । তবে, কার্যকর হওয়ার পর থেকে ভারতীয় সংবিধানে নিয়ম করে ঠিক করা হয় দুটি সংসদীয় অধিবেশনের মধ্যে ছয় মাসের বেশি সময়ের ব্যবধান রাখা ঠিক নয় । সংবিধানের জনক হিসেবে ড. ভীমরাও অম্বেদকর তাঁর তৈরি সংবিধানে এই শর্ত রেখেছিলেন, প্রতিটি জনগণের কাছে সংসদ জবাবদিহি করতে বাধ্য । আজ পরিস্থিতি এতটাই করুণ যে, সংবিধান কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাবগুলিও কার্যকর হচ্ছে না ।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সময় সংসদে ১৪ দফা নীতি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল । কিন্তু, জবাবদিহি এবং দায়বদ্ধতার পরিবর্তে ভারতীয় গণতন্ত্র বর্ণ ও গোষ্ঠী, অর্থ, এবং অপরাধীদের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ক্রমে অধঃপতিত হয়েছে ।

আরও পড়ুন : আগামী সপ্তাহেই ভারতে মিলবে স্পুটনিক-5 টিকা, দাবি নীতি আয়োগ সদস্যের

চতুর্দশ লোকসভায় 24 শতাংশ প্রার্থী বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ ছিল । পরেরবার সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় 30 শতাংশে । গত লোকসভায় 34 শতাংশ অপরাধী নাম নথিভুক্ত করেছিলেন । বর্তমানে সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে গিয়ে পৌঁছেছে 43 শতাংশে । মনে রাখা দরকার, মনমোহন সিং সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার ক্ষেত্রে অপরাধের অভিযোগ কোনও অন্তরায় হিসেবে গণ্য করা ঠিক না ।

হাস্যকর হলেও সত্য যে, একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অপরাধ থাকলে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয় । অন্য দিকে, একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় স্থায়ীভাবে । এই বিষয়টিকে ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে ইতিমধ্যেই আদালতে আবেদন করা হয়েছে । তবে, কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে স্থিতিশীলতার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে । ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একাধিক অপরাধ থাকলেও তাদের জনপ্রতিনিধি করার জন্য বেছে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি । আর এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে সংসদের মর্যাদা, সম্মান, ঐতিহ্য মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে ।

স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর দেশের সব থেকে বড় আইন প্রণয়নকারী সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটে । আজ ভারতের সংসদ 70তম বর্ষে প্রবেশ করেছে । ভারতের সংসদের পথ চলার শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে ভারতের পথ চলা শুরু হয়েছিল । যাঁর কথা আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে । তিনি বলেছিলেন, "আমি আশা করি সংসদ দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা প্রদান করবে । সংসদের কার্যকলাপ একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ।"

পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু সংসদকে বিশ্বের এক সপ্তামাংশ জনগণের ইতিহাস তৈরির একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন । লোকসভার প্রথম অধ্যক্ষ গণেশ বাসুদেব মাভলঙ্কার সংসদীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে উঁচুতে তুলে ধরার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন । বিশ্বখ্যাত গার্ডিয়ান 1954 সালে ভারতীয় সংসদের প্রশংসা করে লিখেছিল, পণ্ডিত নেহরু একে গোটা এশিয়ার একটি স্কুল হিসেবে দাবি করতে পারেন । একটা কথা স্পষ্ট ভাবে বলা চলে, এই বাড়ির প্রতিটি জনগণ সে সময় পুরোপুরি জনসেবায় নিবেদিত ছিলেন ।

সেই সময় সংসদ এক অনন্য দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করেছিল । সংসদের সদস্যরা অনুভব করতেন, আইনসভার কোনও রূপ অবক্ষয় গোটা গণতন্ত্রের পতন ডেকে আনবে । নিজেদের রাজনৈতিক চিন্তা ধারাকে সরিয়ে রেখে প্রতিটি সংসদ সদস্য একত্রিত হয়ে দোষী সদস্যদের অপসারিত করতে এগিয়ে আসতেন । কংগ্রেস সাংসদ ফিরোজ গান্ধি সংসদে উত্থাপত করেছিলেন মুদগাল নামে এক সাংসদের দুই হাজার টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গ । ছুড়ে দিয়েছিলেন প্রশ্ন । মুদগালকে কংগ্রেস থেকেও ভর্ৎসনা করা হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু 1951 সালের সেপ্টেম্বর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেন । এভাবেই নেহরু সংসদের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন ।

আরও পড়ুন : নির্বাচনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ যথাযথ ছিল না : রাজ্যপাল

কিন্তু, মহান নেতাদের দ্বারা তৈরি সেই মূল্যবোধগুলি 17 টা সাধারণ নির্বাচনের পর কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল । সংসদ থেকে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা সর্বত্র আইনত অপরাধীদের উপস্থিতিতে ভরে গিয়েছে । একাধিক সাংসদ বিধায়কের নামে রয়েছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ।

ব্রিটিশরা তাদের আয় ও ব্যয়ের বিবরণ আলোচনা করতে একবার আইনসভার সমাবেশ করে । তবে, কার্যকর হওয়ার পর থেকে ভারতীয় সংবিধানে নিয়ম করে ঠিক করা হয় দুটি সংসদীয় অধিবেশনের মধ্যে ছয় মাসের বেশি সময়ের ব্যবধান রাখা ঠিক নয় । সংবিধানের জনক হিসেবে ড. ভীমরাও অম্বেদকর তাঁর তৈরি সংবিধানে এই শর্ত রেখেছিলেন, প্রতিটি জনগণের কাছে সংসদ জবাবদিহি করতে বাধ্য । আজ পরিস্থিতি এতটাই করুণ যে, সংবিধান কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাবগুলিও কার্যকর হচ্ছে না ।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সময় সংসদে ১৪ দফা নীতি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল । কিন্তু, জবাবদিহি এবং দায়বদ্ধতার পরিবর্তে ভারতীয় গণতন্ত্র বর্ণ ও গোষ্ঠী, অর্থ, এবং অপরাধীদের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ক্রমে অধঃপতিত হয়েছে ।

আরও পড়ুন : আগামী সপ্তাহেই ভারতে মিলবে স্পুটনিক-5 টিকা, দাবি নীতি আয়োগ সদস্যের

চতুর্দশ লোকসভায় 24 শতাংশ প্রার্থী বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ ছিল । পরেরবার সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় 30 শতাংশে । গত লোকসভায় 34 শতাংশ অপরাধী নাম নথিভুক্ত করেছিলেন । বর্তমানে সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে গিয়ে পৌঁছেছে 43 শতাংশে । মনে রাখা দরকার, মনমোহন সিং সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার ক্ষেত্রে অপরাধের অভিযোগ কোনও অন্তরায় হিসেবে গণ্য করা ঠিক না ।

হাস্যকর হলেও সত্য যে, একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অপরাধ থাকলে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয় । অন্য দিকে, একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় স্থায়ীভাবে । এই বিষয়টিকে ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে ইতিমধ্যেই আদালতে আবেদন করা হয়েছে । তবে, কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে স্থিতিশীলতার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে । ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একাধিক অপরাধ থাকলেও তাদের জনপ্রতিনিধি করার জন্য বেছে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি । আর এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে সংসদের মর্যাদা, সম্মান, ঐতিহ্য মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.