কাশ্মীর, 16 অক্টোবর : জম্মু ও কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা বৃহস্পতিবার বলেন, তাঁর প্রশাসনের লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বচ্ছ প্রশাসন ।
শ্রীনগরের রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠকে উপরাজ্যপাল বলেন, “গত দু'মাসে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গ্রাম ও শহরাঞ্চলের ক্ষমতায়নে বেশ কিছু বড় পদক্ষেপ করা হয়েছে । সরকারকে আরও সংবেদনশীল ও মানুষের নাগালের মধ্যে আনা হচ্ছে । আমার একমাত্র লক্ষ্য 20টি জেলায় কোনও বৈষম্য ছাড়া উন্নয়ন করা ।”
তিনি আরও বলেন, “অনলাইনে নির্মাণের অনুমতি, ঠিকাদারদের বিলে ছাড়পত্র ও অন্যান্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্রুত ও অনায়াস পরিষেবার জন্য আমি প্রযুক্তির আরও ব্যবহার সুনিশ্চিত করব । কেন্দ্রের প্রকল্পগুলোর রূপায়নের পাশাপাশি, জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন চেষ্টা করেছে যাতে জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিতে গতি আনা যায়, যা বছরের পর বছর, এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে দশকের পর দশক ধরে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে ।”
সম্প্রতি শেষ হওয়া ব্যাক টু ভিলেজ (B2V) প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “285টি আলাদা আলাদা জায়গায় ব্লক দিবস পালন করা হয়েছে, যেখানে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন । এই কর্মসূচির আওতায় B2V-র আগের দফার কাজ শেষ হওয়ার পর মোট 13675টি কাজ শুরু হয়েছে, এবং আরও 5980টি গৃহীত হয়েছে । এই কর্মসূচিতে পঞ্চায়েতগুলিতে 4440টি স্পোর্টস কিট বিতরণ করা হয়েছে । পরিচ্ছন্নতাকে উৎসাহিত করতে 3959টি ডাস্টবিন বসানো হয়েছে । 2430 টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে ।”
তিনি আরও বলেন, “4 লাখ 25 হাজার 258টি ডোমিসাইল সার্টিফিকেট, 45,327 টি ক্যাটেগরি সার্টিফিকেট এবং 51 হাজার 97টি জন্ম, মৃত্যু ও প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট ইশু করার পাশাপাশি, এই কর্মসূচি চলাকালীন বড় সংখ্যায় সমাজকল্যাণমূলক পেনশনের ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ।”
শহরের মানুষের কাছে পৌঁছনোর ব্যাপারে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রশাসন 19 অক্টোবর থেকে ‘আমার শহর আমার গর্ব’ আন্দোলন শুরু করছে । আমাদের প্রধান লক্ষ্য তিনটি – শহরের মানুষের কাছে পৌঁছনো, তৃণমূল স্তরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা, এবং পরিষেবাকে দরজায় পৌঁছে দেওয়া। আমি জোর দিচ্ছি যাতে তৎক্ষণাত অভিযোগের প্রতিকার, তৎক্ষণাৎ পরিষেবা এবং জনকেন্দ্রীক প্রকল্পগুলোকে দ্রুত শেষ করা হয় ।”
তিনি আরও ঘোষণা করেন যে শুধু সেপ্টেম্বরেই দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা 44টি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে । আরও 1798টি প্রকল্পকে দ্রুত শেষ করা হচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পারফরম্যান্সের নিরিখে আমরা সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ছাপিয়ে এক নম্বরে আছি। আমরা এর মধ্যেই 1392 কিলোমিটার সম্পূর্ণ করেছি এবং সবথেকে বেশি অগ্রগতি হয়েছে 1 জুন থেকে 15 অক্টোবরের মধ্যে ।
তিনি বলেন, “গত দু'মাসে কৃষি ও উদ্যানক্ষেত্রের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে । আমরা প্রতিটি পঞ্চায়েতে থ্রেশার যন্ত্র দিচ্ছি, যাতে ফসল তোলার প্রক্রিয়া ব্যহত না হয় । আমরা ইচ্ছুক কৃষকদের ভর্তুকিযুক্ত মূল্যে 500টি ট্র্যাক্টর দেওয়ার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করছি । আমরা শহরে ও সড়কের পাশে জন পরিষেবামূলক পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য জায়গা চিহ্নিত করছি । এক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট ডিজ়াইন, একটা সাধারণ থিম ও ব্র্যান্ডিং থাকবে । আমরা তিন মাসের মধ্যে 700-800 টি শৌচাগার নির্মাণের ব্যাপারে আশাবাদী ।”
ব্যবসার জন্য ঋণদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “1317 জন গ্রহীতার জন্য ইতিমধ্যেই 47.90 কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে । আমরা শিল্পীদের মাসে এক হাজার টাকা করে (9 মাসের জন্য) ত্রাণবাবদ দিচ্ছি এবং সরকার অন্তত 1.8 কোটি টাকা ব্যয় করবে; শিকারাওয়ালা, শ্রমিক, হাউজবোটের গাইডদের মাসে 1 হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে সরকার ব্যয় করবে 11.95 কোটি টাকা; গাড়িচালক, ক্লিনার, যাঁরা প্যানডেমিকের জন্য নির্মাণক্ষেত্রে চলে গেছেন, তাঁদেরও ছমাস ধরে মাসে হাজার টাকা করে দেওয়া হবে এবং সরকার এর জন্য 80 কোটি টাকা খরচ করবে । পুরনো বাস বদলে ফেলার জন্য পরিবহণ ব্যবসায়ীদের 50 শতাংশ ভর্তুকি বা 5 লাখ টাকা – যেটা কম হয়, তা দেওয়া হবে । এর জন্য আমরা প্রায় 25 কোটি টাকা ব্যয় করছি ।”
স্বাস্থ্যক্ষেত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিনহা বলেন, “গন্ডেরবালে 200 শয্যার জেলা হাসপাতাল এবং বেমিনায় 500 শয্যার অত্যাধুনিক শিশু হাসপাতালের কাজ যথাক্রমে 2009 ও 2012 সালে শুরু হয়েছিল এবং তাতে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব হচ্ছিল । আমরা নিশ্চিত করেছি যাতে এই প্রকল্পগুলির কাজ ত্বরান্বিত হয় এবং সামনের মাসেই তা খোলা যায় । গন্ডেরবালের ইউনানি হাসপাতালের কাজ, যা 2011 সাল থেকে শামুকের গতিতে চলছিল, তার গতি বাড়ানো হয়েছে এবং তা জনগণকে উপহার দেওয়ার জন্য তৈরি । শুধু লিফটের মতো ছোটোখাটো কাজ বাকি আছে ।”
তিনি জানান, বিজয়পুরে (সাম্বা জেলা) এইমস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে এবং 2022 সালের অগাস্টের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে । জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের কাছে উন্নত মান ও নাগালের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে আমি দায়বদ্ধ । স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প ‘সেহত’ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিটি নাগরিককে অন্তর্ভূক্ত করবে এবং তাঁদেরও কভার করবে, যাঁরা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত হননি ।
জম্মু ও কাশ্মীরের সার্বিক উন্নয়নের আশ্বাস দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “ভারত সরকার প্রধান সড়ক প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে জোর দিচ্ছে । যা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও তার নাগরিকের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গড়করির উদ্বোধন করা জোজিলা টানেলের কাজ একটা ঐতিহাসিক মাইলস্টোন ।”
তাঁর কথায়, “আরও সাতটি সুড়ঙ্গ নির্মাণ পাইপলাইনে রয়েছে, যা জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে সড়ক যোগাযোগকে শক্তিশালী করবে। কাজিগুন্দ ও বানিহালের মধ্যে 8450 মিটার টুইন-টিউব টানেলের নির্মাণ আগামী মার্চের মধ্যে শেষ হবে । রামবান ও বানিহালের মধ্যে 2968 মিটার দীর্ঘ 6 টি সুড়ঙ্গের কাজ শেষ হবে ডিসেম্বর 2021-এ । খিলানি থেকে কিস্তওযার পর্যন্ত 450 মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ নির্মাণ শেষ হবে 2022 সালের জুন মাসের মধ্যে । শুধমহাদেবের কাছে চেনানি ও অনন্তনাগের মধ্যে 4.5 কিলোমিটার সুড়ঙ্গের DPR তৈরি হয়েছে এবং শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে । 4600 কোটি টাকা ব্যয়ে 10.20 কিলোমিটার সিনথান পাস সুড়ঙ্গ এবং 350 কোটি টাকার গেলানি বাইপাস টানেলের DPR চূড়ান্ত হয়েছে । চথরু থেকে অনন্তনাগ পর্যন্ত 5400 কোটি টাকার সুড়ঙ্গের টেন্ডার ডাকা হবে DPR চূড়ান্ত হলেই । সমস্ত প্রকল্পের কাজই আগামী বছর শুরু হয়ে যাবে ।”