মালদা, 3 ডিসেম্বর : পাঁচ নাবালিকাকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল পুরাতন মালদায় ৷ অভিযুক্ত ওই এলাকারই তিন যুবক ৷ এই ঘটনায় মালদা থানায় ওই তিন যুবকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ছাত্রীদের পরিবারের লোকজন ৷ তারপরেই দুষ্কৃতীরা অভিযোগপত্র প্রত্যাহারের জন্য ছাত্রীদের পরিবারের লোকজনকে ফোনে খুনের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদার নবাবগঞ্জ এলাকায় ৷ তবে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক ৷ তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে মালদা থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার৷
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পাঁচ ছাত্রীর বয়স 12 থেকে 15 বছরের মধ্যে ৷ এর মধ্যে তিনজন তুতো বোন ৷ স্থানীয় একটি স্কুলে তারা ক্লাস ফাইভ, নাইন ও ইলেভেনে পড়ে ৷ গতকাল সন্ধেয় তাদের এলাকার তিন যুবক গৌতম সরকার, ফুচকা দাস ও কানু শিকদার ভয় দেখিয়ে স্থানীয় একটি ইটভাটায় নিয়ে যায় ৷ সেখানে একটি নির্জন জায়গায় তারা ওই পাঁচজনকে জোর করে মদ খাওয়ায় ৷ মদের প্রভাবে চার নাবালিকা বেঁহুশ হয়ে পড়ে ৷ তবে সামান্য জ্ঞান ছিল একজনের ৷ এই অবস্থায় তাদের ধর্ষণের চেষ্টা শুরু করে তিন যুবক ৷ ঠিক সেই সময় নাবালিকাদের বাড়ির লোকজন তাদের খুঁজতে খুঁজতে ইটভাটায় চলে এসেছিল ৷ তখনই জ্ঞান থাকা ছাত্রীটি চিৎকার করে ওঠে ৷ তার গলা পেয়ে সেখানে ছুটে আসে লোকজন ৷ অনেক মানুষকে একসঙ্গে আসতে দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায় তিন যুবকই ৷ এই ঘটনায় মালদা থানায় তিন যুবকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ছাত্রীদের বাড়ির লোকজন ৷ এক নাবালিকার দাদু বলেন, “ওই যুবকরা মহানন্দায় মাছ ধরার ঠিকাদারি করে ৷ তাদের নাম গৌতম, ফুচকা ও কানি ৷ সন্ধেয় আমার নাতনি বাড়ির উঠোনে বাসন মাজছিল ৷ আমি কাজ থেকে ফিরে তাকে সেখানে দেখেছিলাম৷ খানিক বাদেই তাকে আর দেখা যাচ্ছিল না৷ সঙ্গে সঙ্গে ওর খোঁজ শুরু করি ৷ শেষ পর্যন্ত এলাকার একটি ইটভাটায় ওর খোঁজ মেলে ৷ ওর সঙ্গে আরও চারটি মেয়ে ছিল ৷ গৌতমরা ওদের বিয়ার খাওয়ায় ৷ আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে নাতনি চিৎকার করে ওঠে ৷ তখনই সেখানে গিয়ে আমরা তাদের উদ্ধার করি৷ আমরা সব জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি৷ কিন্তু পুলিশ এখনও এলাকায় আসেনি৷ এদিকে গৌতমরা হুমকি দিচ্ছে, অভিযোগ না তুলে নিলে তারা আমাদের খুন করবে৷ আমি গোরু নিয়ে মাঠে গেলেই ওরা নাকি আমাকে পিটাবে৷ আমি এই ঘটনার বিচার চাই৷ ওদের ফাঁসি হওয়া দরকার৷”
আরও পড়ুন : 2021-এ অনলাইনে নয়, লিখিত মাধ্যমেই বোর্ড পরীক্ষা : সিবিএসই
মালদা থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা জানান, “নির্যাতিতা ছাত্রীদের সঙ্গে তাদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধেই পকসো আইনে (প্রিভেনশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট 2012) মামলা রুজু করা হয়েছে৷ তবে নির্যাতিতাদের শারীরিক পরীক্ষা করাতে চায়নি পরিবারের লোকজন৷ তাই এই ঘটনায় শ্লীলতাহানির মামলা রুজু হয়েছে৷ অভিযুক্তরা পলাতক৷ তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে৷” এদিকে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য মালদা থানার পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ আশা করা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি তাদের ধরা যাবে৷ এদিকে এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও এই তিন যুবক একই কায়দায় এলাকার আরও কয়েকজন নাবালিকার শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ করেছে৷ তবে লোকলজ্জায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি৷ কিন্তু এবার এলাকার মানুষও তাদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলতে শুরু করেছে৷