নিউ ইয়র্ক (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), 7 ফেব্রুয়ারি: ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়া (Earthquake in Turkey-Syria) ৷ সোমবার সেখানে রিখটার স্কেলে 7.8 মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে ৷ যার জেরে সেখানকার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ৷ কয়েক হাজার মানুষের মৃত্য হয়েছে ৷
কীভাবে হল ভূমিকম্প: মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভিসের (USGS) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠ থেকে 11 মাইল বা 18 কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্প হয় ৷ এপিসেন্টার (Epicenter) ছিল সিরিয়ার উত্তর সীমান্তের কাছে দক্ষিণ তুরস্ক ৷ ইউএসজিএস-এর ভূতত্ত্বের গবেষক অ্যালেক্স হাতেম জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভূমিকম্পের পর থেকে একাধিক আফটারশকে দুই দেশ কেঁপেছে । প্রথম 11 ঘণ্টায় ওই অঞ্চলে কমপক্ষে 13টি উল্লেখযোগ্য আফটারশক (Aftershocks) অনুভূত হয়েছে ৷ রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল অন্তত 5 ৷
তিনি আরও জানান, এছাড়া প্রথম কম্পনের 9 ঘণ্টা পর তুরস্কে 7.5 মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয় ৷ যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নয় যে সেটা আফটারশক ছিল কি না ! এই নিয়ে গবেষণা চলছে ৷ মূল কম্পনের আকার বিবেচনা করে আরও আফটারশক অবশ্যই প্রত্যাশিত । তাঁদের আশঙ্কা কয়েক সপ্তাহ বা মাস আফটারশক চলতেই থাকবে তুরস্ক ও সিরিয়ার ওই অঞ্চলে ৷
কী ধরনের ভূমিকম্প: গবেষকরা বলেছেন যে ভূমিকম্পটি একটি স্ট্রাইক-স্লিপ কম্পনের (Strike-Slip Quake) ফলে হয়েছে, যেখানে দু’টি টেকটোনিক প্লেট পাশাপাশি একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে ৷ মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসমোলজিস্ট এরিক স্যান্ডভোল জানান, পৃথিবী বিভিন্ন টুকরোয় বিভক্ত ৷ অনেকটা জিগশো পাজলের মতো । এই টুকরাগুলি ফল্ট লাইনে মিলিত হয় ৷ যেখানে প্লেটগুলির মধ্যে সাধারণত মৃদু ধাক্কা লাগে ৷ কিন্তু মাঝে মাঝে তার মাত্রা বেড়ে যায় ৷ তখন ওই ধাক্কার জেরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয় ৷
হাতেম জানান, এই ক্ষেত্রে একটি প্লেট পশ্চিমে সরে যায় ও অন্যটি ভূমিকম্প সৃষ্টির জন্য একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে পূর্ব দিকে চলে যায় ৷ তখনই ভূমিকম্প অনুভূত হয়৷ ওই ধাক্কার মাত্রা যত বেশি থাকে, ততই বাড়ে ভূমিকম্পের তীব্রতা ৷ অন্যদিকে স্যান্ডভোল জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, আফটারশক কমতে শুরু করে ৷ পরে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায় ৷
ওই এলাকা কি ভূমিকম্প প্রবণ: সোমবারের ভূমিকম্প হয়েছে ইস্ট আনাতোলিয়ান ফল্ট জোন নামে পরিচিত অংশে ৷ ওই জোন ভূমিকম্প প্রবণ বলেই পরিচিত ৷ অতীতেও ওই জোনে ক্ষতিকর ভূমিকম্প হয়েছে । স্যান্ডভোলের দাবি, প্রায় পুরো তুরস্কই ভূমিকম্প প্রবণ বলে পরিচিত ৷ এটা ওই দেশের জন্য নতুন কিছু নয় । 2020 সালের জানুয়ারিতে তুরস্ক একটি বড় ভূমিকম্প হয় ৷ সেবার রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল 6.7, যা ওই দেশের পূর্বাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছিল । 1999 সালে ইস্তাম্বুলের কাছে 7.4 মাত্রার ভূমিকম্প হয় ৷ ওই কম্পনে প্রায় 18 হাজার লোক মারা গিয়েছিল ।
এই ভূমিকম্প এত ধ্বংসাত্মক হল কেন: ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মার্গারিটা সেগু জানিয়েছেন, সাধারণত ভূমিকম্প হয় জলের নিচে ৷ কিন্তু সোমবার কম্পন হয় ভূমিতেই ৷ সেই কারণে ভূমিকম্পের শক্তি এত বেশি ছিল ৷ এপিসেন্টার ছিল তুরস্কের একটি প্রধান শহর এবং প্রাদেশিক রাজধানী গাজিয়ানটেপের কাছে ৷ ওই এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ ৷ তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি হয়েছে ৷ ইউএসজিএস স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার কিশোর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যাও অনেক ছিল ৷
জয়সওয়াল আরও জানান, ইস্তাম্বুলের মতো শহরগুলিতে নতুন ভবনগুলি আধুনিক ৷ ভূমিকম্পের মানকে মাথায় রেখে তা তৈরি করা হয়েছে ৷ কিন্তু দক্ষিণ তুরস্কের এই অঞ্চলে অনেক পুরনো বহুতল ছিল ৷ সিরিয়ায় দ্রুত নির্মাণকাজ এবং বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণেও হয়তো ভবনগুলি দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলে বিশেষজ্ঞদের মত ৷
সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের জেরে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে । ভবনগুলির উপরের তলা সোজা নীচের তলার উপরে পড়েছে ৷ যা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে কম্পন সহ্য করার মতো ক্ষমতা ভবনগুলিতে ছিল না, এমনটাই মত জয়সওয়ালের ৷ এদিকে তাপমাত্রা অত্যন্ত কম থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যহত হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে প্রাণহানি বেড়ে 4 হাজার ! তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে শুধু ধ্বংসাবশেষ