রামপুরহাট, 14 নভেম্বর: তৃণমূল কংগ্রেসের সাম্প্রতিক রদবদলে বীরভূমে সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে ৷ গরুপাচার কাণ্ডে তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর জেলায় সংগঠন দেখভালের জন্য যে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তালিকায় সভাপতি পদে কোনও নেতার বদলে সেই কমিটির নাম রাখা হয়েছে ৷ এই কোর কমিটিই সংগঠনের সব দায়িত্ব সামলাবে, যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে ৷ মঙ্গলবার এই বিষয়টি স্পষ্ট করলেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের জায়গায় কোর কমিটি কাজ করবে ।’’
উল্লেখ্য, সোমবার তৃণমূল কংগ্রেস সংগঠনে যে রদবদল করেছে ৷ সেখানে বীরভূমের চেয়ারপার্সন পদে রেখে দেওয়া হয়েছে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এর জন্য তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷ মঙ্গলবার রামপুরহাটে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ যে আমাকে আবার বীরভূমের চেয়ারম্যান পদ দেওয়া হয়েছে ।’’
যদিও অনুব্রতকে সরিয়ে দেওয়ার পর বীরভূমের সংগঠনের হাল এখন কে ধরবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল ৷ অনেকে মনে করছিলেন, জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডলই যেমন শেষকথা ছিলেন, তেমনই এবার থেকে যাবতীয় সিদ্ধান্ত আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ই নেবেন ৷ এই নিয়ে তিনি বলেন, "সব বিষয়ে সিদ্ধান্তই কোর কমিটির মিটিং-তে নেওয়া হবে । আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেব না । আগামী 23 তারিখ আমাদের মিটিং ডাকা হয়েছে । তারপরই আমরা কোর কমিটির মিটিং করব ।’’
উল্লেখ্য, গত 2022 সালের 11 অগস্ট গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হন বীরভূমে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল । পরবর্তীতে আর্থিক তছরূপের মামলাতেও তাঁর নাম জুড়ে যায় ৷ গ্রেফতার করা হয় অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যাকেও ৷ তবে তাঁর হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি জামিন পেয়েছেন ৷ প্রথমে আসানসোল জেল, এরপর তিহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রতকে ৷ এখনও কন্যা-সহ অনুব্রত মণ্ডল তিহাড়েই বন্দি ।
এর মাঝে তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়েছেন ৷ তাঁকে বীরের সম্মান দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসা থেকে তাঁকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে । পাশাপাশি তাঁকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয় ৷ সোমবার থেকে তিনি তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি হয়ে গিয়েছেন ৷ কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ৷ এই প্রশ্নের জবাবে, "আমি এই বিষয় কিছু বলতে পারব না । যাঁরা এই তালিকা করেছেন, তাঁরা বলবেন ।"
যদিও ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, অনুব্রত মণ্ডলের তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির পদে থেকে যাওয়া এবং তাঁর পাশে শাসক দলের নেতাদের থাকার বার্তা দেওয়া, তাঁর প্রভাবশালী তকমাকে জোরদার করছিল ৷ যা আদালতে জামিন পেতেও অসুবিধার সৃষ্টি করছিল সাপ ও মরলো অথচ লাঠিও ভাঙলো না, এই প্রবাদবাক্য মিলিয়ে জেলা সভাপতি পদ থেকে তাঁকে বীরভূম থেকে সরিয়ে দেওয়া হল । কিন্তু কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হল না ৷
আরও পড়ুন: