নিউইয়র্ক, 17 ডিসেম্বর: মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এলন মাস্ক বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের টুইটার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে দিয়েছেন ৷ এ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে মাইক্রোব্লগিং দুনিয়ায় ৷ এই সাংবাদিকেরা নাকি এলন মাস্ককে 'ডক্স' (Doxxed) করেছেন, অভিযোগ মার্কিন ধনকুবেরের ৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে টুইটারে মাস্ক জানিয়েছেন, "আপনারা 'ডক্স' করেছেন, আপনাদের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড (Journalists Accounts Suspended) হয়েছে ৷ এখানেই গল্প শেষ ৷"
ডক্সিং কী (What is Doxxing) ?
'দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস', সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্টের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে ৷ কারণ, তাঁরা নাকি ইলন মাস্কের প্রাইভেট জেট লোকেশন অর্থাৎ সেটি কোথায় যাচ্ছে- তার গতিপথ ট্র্যাক করে (Elon Musk Private Jet tracking) সেটির লিঙ্ক মাস্কের '@এলনজেট' নামক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন ৷ একেই বলে 'ডক্সিং' অর্থাৎ 'ড্রপিং ডক্স' বা 'ডকুমেন্টস' ৷ পরিষ্কার ভাষায়, অন্যের তথ্য জনসমক্ষে ফাঁস করা ৷ এটা বেআইনি কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি ৷ তবে অবশ্যই অনৈতিক, জানাচ্ছেন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ কোসেফ (Kosseff, the cybersecurity expert) ৷
ইলন মাস্কের তথ্য কী করে ফাঁস হল ?
মাস্কের কাছে 'ডক্সিং'য়ের সংজ্ঞাটা আসল মানের থেকে আরেকটু প্রসারিত ৷ তিনি মনে করেন, অন্য কেউ আরেকজনের বিষয়ে তথ্য না-লিখে তার লিঙ্ক পোস্ট করলে, সেটাও 'ডক্সিং' করা ৷
বৃহস্পতিবার রাতে এ নিয়েই তর্ক বাধে টুইটার-কর্ণধার ইলন মাস্ক এবং অন্য সাংবাদিকদের মধ্যে ৷ টুইটার স্পেস অডিয়োয় সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করা নিয়ে আলোচনা চলছিল ৷ সেখানে ছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের ড্রিউ হারওয়েল (Washington Post’s Drew Harwell) ৷ হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে হাজির হন খোদ মাস্ক ৷
ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক মাস্ককে ড্রিউ বলেন, "আপনার বক্তব্য, আমরা আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন- সে সব শেয়ার করেছি ৷ যেটা সত্যি নয় ৷ আমি কখনও আপনি কোথায় থাকছেন, না-থাকছেন, তা পোস্ট করিনি ৷" এর উত্তরে মাস্কের অভিযোগ, "আপনি একটি অ্যাকাউন্টে লিঙ্ক পোস্ট করেছেন ৷" হারওয়েল সাফাই দেন, রিপোর্টারদের যা কাজ, তাঁরা তাই করেছেন ৷ মাস্কের প্রাইভেট জেট ট্র্যাক করে তার হালহকিকতের লিঙ্ক @elonjet অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন, যা একজন সাংবাদিকের কাছে স্বাভাবিক ৷
আরও পড়ুন: টুইট ক্যারেক্টারের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে হবে 4 হাজার, ইলনের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ
মাস্ক নিজেও কিন্তু এই ডক্সিং করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাসপেন্ড হওয়া আরেক সাংবাদিক ৷ কাউকে হয়রান করতে হলে নাকি মার্কিন ধনকুবের তাঁর ভক্তকুলকে পিছনে লেলিয়ে দেন, অভিযোগ অ্যাকাউন্ট খোয়ানো সাংবাদিকের ৷ 2019 সালে মাস্ক এমনই একটি মানহানির মামলায় হেরে যান ৷ 2018 সালে তাইল্যান্ডের একটি গুহায় একজন সকার কোচ এবং তাঁর সঙ্গে থাকা 12 জন কিশোর আটকে পড়েন ৷ তাঁদের উদ্ধারকারী দলে ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক ভার্নন আনসোর্থ (Vernon Unsworth) ৷ ইলন তাঁকে 'পেডো গাই' (Pedo Guy) বলে উল্লেখ করেন ৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় এটি প্রচলিত অশ্লীল ভাষা, যা এখন দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ৷ এর অর্থ 'অদ্ভুতদর্শন ব্যক্তি', চামড়ার উপর দিয়ে কোনও পোকা হাঁটলে যে রকম অনুভূতি হয়, ওই ব্যক্তিকে দেখলেও তেমনটা গা ঘিনঘিনে ভাব আসে ৷ মাস্কের এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলা করেন ব্রিটিশ নাগরিক ভার্নন আনসোর্থ ৷ হেরেছিলেন স্বাধীন মত প্রকাশে বিশ্বাসী মাস্ক ৷