কলকাতা ও লন্ডন, 7 জুলাই: দেশবাসী তিতিবিরক্ত, দলের সদস্যরাও ক্ষুব্ধ ৷ এমন একটা পরিস্থিতিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তথা কনজারভেটিভ পার্টির (Conservative Party) নেতা বরিস জনসন (Boris Johnson) ৷ বৃহস্পতিবার প্রথমেই দলের নেতার পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি ৷ তখনও বোঝা যাচ্ছিল না, আদৌ প্রধানমন্ত্রী পদে বরিস ইস্তফা দেবেন, নাকি উত্তরসূরি নির্বাচিত না-হওয়া পর্যন্ত দেশের প্রশাসনিক প্রধানের পদে বহাল থাকবেন ৷ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা কমলেও ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া ছিলেন বরিস ৷ সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে এত গরিমসি তাঁর ৷ যদিও শেষরক্ষা করতে পারেননি বরিস জনসন ৷ শেষমেশ এদিনই প্রধানমন্ত্রী পদেও ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি ৷
বিষয়টি নিয়ে ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলেছেন লন্ডনের (London) ইস্ট হ্যামের (East Ham) কাউন্সিলর ইমাম হক (Imam Haq) ওরফে বান্টি ৷ আদতে খিদিরপুরের ছেলে বান্টি জানিয়েছেন, ব্রিটেনের নির্বাচনে কাউকে আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরা হয় না ৷ বরং যে দল সার্বিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেই দলের প্রধান নেতাই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন ৷ বরিস যদি প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা না দিতেন, তাহলে আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই পদে থাকতে পারতেন ৷ কারণ, আগামী অক্টোবর মাসে কনজারভেটিভ পার্টির সম্মেলন রয়েছে ৷ সেই সম্মেলনেই পরবর্তী নেতা নির্বাচন করতে হত কনজারভেটিভ পার্টিকে ৷ সেই নয়া নেতাই হতেন ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ৷ যদিও বরিসের ইস্তফার পর নতুন কোনও ব্যক্তিকেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হবে ৷
আরও পড়ুন: Boris Jhonson Likely to Resign: প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আজই ইস্তফা বরিস জনসনের !
কিন্তু, বরিসকে পদত্যাগ করতে হল কেন ? এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন ইমাম ৷ তাঁর বক্তব্য, ব্রিটিশরা নৈতিকতা মেনে চলার পক্ষপাতী ৷ কোনও রাজনৈতিক নেতা বা জনপ্রতিনিধির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তাঁরা সেটা মানতে পারেন না ৷ করোনা আবহে বরিসের তেমনই একটি আচরণই ব্রিটিশদের হতবাক এবং ক্ষুব্ধ করেছিল ৷ অতিমারির আবহে গোটা দেশে যখন লকডাউন চলছে, সেই সময়েই করোনাবিধি ভেঙে জন্মদিনের পার্টি করেছিলেন বরিস ৷ আমজনতা তাঁর এই আচরণ মানতে পারেনি ৷
এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যে নেতৃত্ব আশা করা হয়েছিল, বরিস জনসন তাতেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷ নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল কনজারভেটিভ পার্টি ৷ তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্রেক্সিটের (Brexit) পর বরিসের নেতৃত্বে নতুন দিশা পাবে ব্রিটিশ অর্থনীতি ৷ কিন্তু, বাস্তবে হয়েছে ঠিক উলটো ৷ মূল্যবৃদ্ধিতে এখন নাভিশ্বাস উঠছে আমজনতার ৷ তাঁদের অধিকাংশেরই অভিযোগ, বর্তমান সরকারের ভুল নীতির জন্যই কর প্রদান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আম-ব্রিটিশদের ৷
সর্বোপরি, গত কয়েক দিনের মধ্যে অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ-সহ মন্ত্রিপরিষদের চার সদস্যের (এখনও পর্যন্ত) ইস্তফা বরিসকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে ৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে কনজারভেটিভ পার্টির চিফ হুইপ পদে ক্রিস পিনচারকে নিয়োগ করেন বরিস ৷ ক্রিসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির পুরনো অভিযোগ রয়েছে ৷ তাই তাঁর নিয়োগ নিয়ে দলের অন্দরেই অসন্তোষ ছিল ৷ পরবর্তীতে ক্রিস পিনচার পদত্যাগ করলেও সেই অসন্তোষ প্রশমিত হয়নি ৷ বদলে তার জেরেই একের পর এক ইস্তফা দিয়েছেন মন্ত্রীরা ৷