বার্লিংটন (আমেরিকা), 22 ফেব্রুয়ারি: সিগারেটের বাট থেকে খোঁজ মিলল খুনির ৷ সমাধান হল 52 বছর আগে হওয়া হত্যা রহস্যের ৷ ঘটনাটি আমেরিকার বার্লিংটনের ৷ 1971 সালের জুলাই মাসের এক রাতে এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে তরুণী খুন হন ৷ সেই সময় খুনিকে ধরতে পারেননি তদন্তকারী আধিকারিকেরা ৷ পরে ফের তদন্ত শুরু হয় ৷ মৃতদেহের কাছে পড়ে থাকা সিগারেটের শেষ অংশটুকুর ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল বলে দিল, খুনি কে ?
1971 সালের 20 জুলাইয়ের ভোর ৷ বার্লিংটনের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে রীতা কুরানের মৃতদেহ দেখতে পান তাঁর রুমমেট ৷ তখন রীতার বয়স মাত্র 24 ৷ ব্রুকস অ্যাভিনিউয়ের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কুরানের রুমমেট বার্লিংটন পুলিশে খবর দেন ৷ তদন্তে জানা যায়, আগের রাতে খুন হয়েছেন রীতা ৷ তিনি ভারমন্ট স্কুলে পড়ান ৷ তাঁর উপরের ফ্ল্যাটে থাকতেন উইলিয়াম ডিরুজ ও তাঁর সদ্যবিবাহিত স্ত্রী ৷ ডিরুজের বিরুদ্ধে রীতাকে খুনের অভিযোগ ওঠে ৷
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে খুনের রাত ডিরুজের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর ঝামেলা বাধে ৷ তারপর নাকি তিনি শ্বাসরোধ করে রীতা কুরানকে খুন করেন ৷ সেই সময় ডিরুজের বয়স 31 ৷ এরপর তিনি হাঁটতে বেরিয়ে পড়েন ৷ ফিরে এসে তাঁর দু'সপ্তাহ আগে বিয়ে হওয়া স্ত্রীকে বলেন, তিনি যেন কাউকে না জানান যে, উইলিয়াম রাতে বাইরে গিয়েছিলেন ৷
আরও পড়ুন: 5 মাসের শিশুকে খুন করে অপহরণের গল্প ফাঁদলেন মা
তদন্ত শুরু হয় ৷ কিন্তু কুরানের মৃত্যুর পরে ডিরুজ দম্পতি থাইল্যান্ডে চলে যান ৷ সেখানে এক ধর্মগুরু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন উইলিয়াম ডিরুজ ৷ পরে 1986 সালে একটি হোটেলে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ৷ সানফ্রান্সিসকো পুলিশ জানায়, তিনি মাত্রা অতিরিক্ত মাদক সেবন করেছিলেন এবং তা থেকেই তাঁর এই মৃত্যু ৷ ইতিমধ্যে ডিরুজের সঙ্গে তাঁর প্রথম স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে ৷ এই মৃত্যুর তদন্তের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মঙ্গলবার সকালে তদন্তকারী পুলিশ গোয়েন্দা বলেন, "আমরা নিশ্চিত ছিলাম উইলিয়াম ডিরুজই রীতা কুরানকে খুন করেছে ৷ কিন্তু অতিরক্তি মাদক নেওয়ায় তার মৃত্যু হয় ৷ তাই তাকে এই খুনের জন্য দায়ী করা সম্ভব হয়নি এবং তদন্ত বন্ধ করে দিতে হয় ৷" প্রসঙ্গত, তদন্তের সময় ডিরুজের স্ত্রী পুলিশকে মিথ্যে কথা বলেছিলেন ৷
এর মধ্যে মারা গিয়েছেন কুরানের বাবা-মাও ৷ ডিরুজের স্ত্রী মিশেলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ৷ তিনি থাইল্যান্ড থেকে আমেরিকায় ফিরে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন ৷ বেঁচে আছেন ডিরুজের ভাই-বোন ৷ তাঁরা খুনির সন্ধান চান ৷ কুরানের মৃতদেহের কাছ থেকে পাওয়া একটি সিগারেটের বাট এবং অন্য সব প্রমাণ 2014 সালে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠান তদন্তকারী আধিকারিকেরা ৷ কিন্তু তাতে কিছুই পাওয়া যায়নি ৷ 2019 সালে আরেকদল গোয়েন্দার হাতে স্থানান্তরিত হয় মামলাটি ৷ তাঁরা ফের ওই সিগারেটের বাটটি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠান ৷ গত বছরের অগস্ট মাসে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই সিগারেটের বাটটি ডিরুজের ৷
সম্প্রতি গোয়েন্দাদের কাছে ডিরুজের প্রথম স্ত্রী মিশেলও স্বীকার করেছেন, বার্লিংটনের ওই অ্যাপার্টমেন্টে থাকাকালীন খুনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন ৷ জুলাইয়ের ওই রাতে তাঁর স্বামী বাইরে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন ৷ গোয়েন্দারা আরও জানতে পারেন, ডিরুজের হঠাৎ হিংসাত্মক হয়ে ওঠার প্রবণতা ছিল ৷ গোয়েন্দাদের মতে, ওই খুনের সময় ডিরুজের প্রথম তথা প্রাক্তন স্ত্রীর বয়স অনেক কম ছিল ৷ তাঁদের সদ্য বিয়ে হয়েছে ৷ তাই ভালোবাসার ঘোরে ছিলেন স্ত্রী মিশেল ৷ তাই হয়তো তিনি স্বামীকে বাঁচাতে মিথ্যে বলেছিলেন ৷
আরও পড়ুন: শ্রদ্ধার দেহ টুকরো করার আগে গাঁজা টেনেছিলেন আফতাব !