হায়দরাবাদ, 10 জুলাই: চরম মাত্রায় পৌঁছেছে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থা ৷ বিক্ষোভরত জনগণ ইতিমধ্যেই দখল নিয়েছে সে দেশের রাষ্ট্রপতি ভবনের ৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বাসভনবনেও ৷ রাস্তায় আছড়ে পড়েছে প্রতিবাদী জনতার স্রোত ৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়েছেন সে দেশের রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে ৷ এই অবস্থায় কী ভবিষ্যৎ ভারতের প্রতিবেশী এই দ্বীপ রাষ্ট্রের ? সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বললেন শ্রীলঙ্কার সিলোন শিপিং কর্পোরেশনের প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডঃ ডান মল্লিকা গুনাসেকারা (former Ceylon Shipping Corporation chief Dr Dan Malika Gunasekera) ৷ তাঁর মতে, সব দলের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে ৷ সবার আগে প্রয়োজন এই অচলাবস্থার নিরশন হওয়া ৷ বিদেশী মুদ্রার ভাণ্ডার শেষ হয়ে যাওয়ায় এই দ্বীপ রাষ্ট্রে ভেঙে পড়েছে আর্থিক ব্যবস্থা ৷ গুনাসেকারার মতে এই পরিস্থিতি থেকে বেরতে প্রয়োজন তিন দফা পদক্ষেপের ৷
প্রশ্ন : আপনি শিপিং কর্পোরেশনের দায়িত্ব সামলেছেন ৷ এই অচলাবস্থার প্রভাব দেশের রফতানি বাণিজ্যে ঠিক কেমন পড়েছে ?
ডঃ গুনাসেকারা : আমার মতে, আমাদের দেশ সোনার খনি ৷ আমাদের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে ৷ মানব সম্পদও আমাদের শক্তি ৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আমাদের সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি ৷ যুব সমাজ উচ্চশিক্ষিত ৷ তাঁরাই দেশের মূল চালিকা শক্তি ৷ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মূলই রয়েছে রফতানি বাণিজ্য ৷ দুর্ভাগ্যজনক হল, একাধিক কারণে আমাদের রফতানি বাণিজ্য মার খেয়েছে, কোভিড তাঁর অন্যতম ৷ কলম্বোর জাহাজ বন্দর বিশ্বের মধ্যে 22তম স্থানে রয়েছে ৷ ভারত, বাংলাদেশ-সহ প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ৷ বছরের শুরুতেও আমাদের বন্দর বাণিজ্য ভালোই চলছিল ৷
প্রশ্ন : শ্রীলঙ্কার জিডিপি'র 5 শতাংশ আসে পর্যটন থেকে ৷ এই অচলাবস্থার প্রভাব সেখানে কতটা পড়েছে ?
ডঃ গুনাসেকারা : বর্তমানে দেশে জ্বালানির সংকট, ফলে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে ৷ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের অবস্থাও ভালো নয় ৷ শক্তি ক্ষেত্রের এই সমস্যা দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো পর্যটন ক্ষেত্রেও খারাপ প্রভাব ফেলেছে ৷ আমি কদিন আগে সাইকেলে করেও বিদেশী পর্যটকদের বিমানবন্দরে যেতে দেখেছি ৷ এরকম অবস্থা আমরা আগে দেখিনি ৷ এর থেকেই প্রমাণিত হয়, আমরা যখন সমস্যার মধ্যে রয়েছি তখনও কত বিদেশী শ্রীলঙ্কায় ঘুরতে আসতে চান ৷ পাহাড় থেকে সমুদ্র, প্রাকৃতিক সম্ভার ও ইতিহাসে পরিপূর্ণ আমাদের দেশ ৷
প্রশ্ন : সরকার কী করছে এই জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠতে ?
ডঃ গুনাসেকারা : আমাদের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীরা বিদেশে গিয়েছেন আমাদের দেশের পর্যটন ও জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরতে ৷ কিন্তু পরিকাঠামোর অভাব থাকলে এইসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয় ৷ বেশকিছু দেশ তাদের নাগরিকদের বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কায় আসতে নিষেধ করেছে ৷ আমাদের পর্যটন পরিকাঠামো ও যানবাহনের এই সমস্যাগুলো দূর করতে হবে ৷ যানবাহন চড়ার খরচ আকাশ ছোঁয়া হয়েছে এই জ্বালানি সংকটে ৷ আমি একজন আইনজীবী, আমাকেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ কলম্বোর আদালতেও কাজ হচ্ছে না ৷
প্রশ্ন : সমস্ত কিছু থমকে গিয়েছে, এটা কী বলা যায় ?
ডঃ গুনাসেকারা : জ্বালানি সংকট অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ৷ এর প্রভাব জীবনের সর্বস্তরে পড়েছে ৷ হ্যাঁ, এটা বলা যেতে পারে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ৷
প্রশ্ন : বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কি কোনও সম্ভাবনা আছে?
ডঃ গুনাসেকারা : শ্রীলঙ্কা তাপশক্তির উপর নির্ভরশীল ৷ আমাদের কয়লা আমদানি করা প্রয়োজন ৷ কিন্তু যখন অর্থ নেই, তখন কয়লা আমদানি করাও সমস্যার ৷ তাই আমাদের এখন সবার আগে প্রয়োজন অর্থের ৷ আমাদের এই বিষয়টির সমাধান করতে হবে ৷
প্রশ্ন : শ্রীলঙ্কায় কী গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ?
ডঃ গুনাসেকারা : আমাদের দেশের জনগণের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই কঠিন ৷ আমরা ইচ্ছামতো যাতায়াত করতে পারছি না ৷ নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি না ৷ কখন যে কোথায় বোমা পড়বে কেউ জানে না ৷ তবে এখন কষ্টের থেকেও বড়, মানুষ আশা হারিয়েছেন ৷ গত কয়েকমাসে সরকার সমস্যাগুলির সঠিক সমাধান করতে পারেনি ৷ তারা শুধু জ্বালানি কিনেছে আর বিতরণ করেছে ৷
আরও পড়ুন : পলাতক গোতাবায়ার বাসভবন থেকে উদ্ধার রাশি রাশি নগদ !
প্রশ্ন : আপনি কি ভাবছেন, সর্বদলীয় সরকার এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে ?
ডঃ গুনাসেকারা : এই বিষয়ে সংসদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ৷ এমন একজনকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত যিনি এই সংকটের সমাধান করতে পারবেন ৷ এই দেশ গণতান্ত্রিক ৷ সরকারি নীতিও তাই জনগণের স্বার্থে হওয়া উচিত ৷ একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারের কোনও জায়গা নেই এখানে ৷ সেরকম হলে আবার এরকম গণঅভ্যুথ্থান হবে ৷ দেশের সম্পদ অন্যত্র বিক্রির পক্ষে আমি নই ৷