আলবানি, 19 মে : চারটি পা রয়েছে ৷ রয়েছে আবেগী চোখও ৷ নিউ ইয়র্ক সিটির সবুজ ঘাসে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসে সে ৷ নাম হ্যাপি, একটি এশিয়ান হাতি ৷ তাকে কি মানুষের মতো করে ভাবা যায় ? বুধবার ঠিক এই প্রশ্নেই তুলকালাম তর্ক বেঁধেছে নিউ ইয়র্কের সর্বোচ্চ আদালতে ৷ মানুষের প্রাথমিক অধিকার কি একটি পশুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য (Bronx Zoo Elephant Happy raises controversy over human right in New York Highest Court) ?
না-মানুষী পক্ষের আইনজীবী বলেছেন, "হ্যাঁ ৷ হ্যাপি স্বাধীন হাতি ৷ তার বুদ্ধি আছে ৷ সে একজন মানুষের অধিকার পাওয়ার যোগ্য ৷" হ্যাপি থাকে ব্রঙ্কস জু-তে (Bronx Zoo) ৷ তাদের অ্যাটর্নি আদালতে জানায়, হ্যাপিকে বেআইনি ভাবে বন্দি করে রাখা হয়নি এবং সে মানুষও নয় ৷ কিন্তু তার খুব ভালো করে যত্ন নেওয়া হয়, কারণ "সে একটি চমৎকার প্রাণী" ৷ সেই সম্মানটা দেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ৷
নন-হিউম্যান রাইটস প্রজেক্ট (The Nonhuman Rights Project) তাকে চিড়িয়াখানার 'এক-একরের জেলখানা' থেকে বের করে আরও বিস্তীর্ণ স্যানচুয়ারিতে নিয়ে যেতে চায় ৷ প্রজেক্টের আইনজীবী মনিকা মিলার (Monica Miller) একটি সংবাদসংস্থাকে বলেন, "ও নিজের পছন্দমতো ব্যায়াম করতে ভালবাসে ৷ কার সঙ্গে থাকবে, না-থাকবে, কোথায় যাবে, কী করবে এবং কী খাব, এই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে ৷ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাকে তার নিজের পছন্দ বেছে নেওয়ায় বাধা দিচ্ছে ৷" এই চিড়িয়াখানায় জীবনের 45টা বছর কাটিয়ে দিয়েছে হ্যাপি ৷ স্টেস্ট কোর্ট অফ আপিলে এদিন জোরদার সওয়াল-জবাব চলতে থাকে ৷ তাকে কি হিবিয়াস করপাস প্রক্রিয়ায় (Habeas Corpus Proceeding) ছেড়ে দেওয়া হবে ? যা বেআইনি ভাবে বন্দি করে রাখা কোনও মানুষের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ করা হয় ৷
2005-এ হ্যাপি সেল্ফ-অ্যাওয়ারনেস ইনডিকেটর টেস্ট অর্থাৎ নিজের সম্পর্কে সচেতনতার পরীক্ষা (self-awareness indicator test) পাশ করে ৷ সে একটা বিশাল আয়নায় নিজেকে দেখে এবং তার কপালে সাদা রঙে লেখা 'X' স্পর্শ করতে থাকে বারবার ৷ সে-ই প্রথম হাতি যে এই পরীক্ষায় উতরেছে, জানিয়েছে নন-হিউম্যান গ্রুপটি ৷
1970-এ এশিয়ার জঙ্গলে জন্ম হ্যাপির ৷ এক বছর বয়সে তাকে ধরে-বেঁধে চালান করা হয় আমেরিকায় ৷ সেখানে 'স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস'-এর একটি চরিত্রের নামে তার নামকরণ করা হয় ৷ হ্যাপি এরপর 1977-এ ব্রঙ্কস জু-তে আসে, তার সঙ্গে ছিল গ্রাম্পি ৷ 2002-তে গ্রাম্পি-র সঙ্গে আরও দুই হাতির সংঘর্ষে সে গুরুতর আহত হয় ৷ এখন হ্যাপি চিড়িয়াখানার অন্য একটি হাতি প্যাটি-র সঙ্গে চিড়িয়াখানা সংলগ্ন একটি ঘিরে রাখা জায়গায় থাকে ৷
আদালতে চিড়িয়াখানা পক্ষের আইনজীবী জানান, হ্যাপি সেখানে সাঁতার কাটতে পারে, খাবারের খোঁজে ঘুরতে পারে, অন্য হাতিরদের মতো স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারে ৷ তাহলে সে বন্দি কোথায় ? আদালত কাকে মুক্তি দেবে ? 'মানুষ' হ্যাপিকে ?
আরও পড়ুন : Domestic Animals Death : মহড়া চলাকালীন সেনার ফায়ারিং রেঞ্জে প্রবেশ, বেঘোরে প্রাণ গেল 16টি গৃহপালিত পশুর