মেখলিগঞ্জ (কোচবিহার), 29 অক্টোবর: ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের নাগরিকরা অবাধে চাষবাস থেকে শুরু করে পশুপালন করছেন ৷ এমন ঘটনা ঘটেছে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৷ এখানে কুচলিবাড়িতে তিস্তা নদীর চরের 25 পয়স্তি সংলগ্ন গাউয়ার চর এলাকায় বাংলাদেশের নাগরিকরা অবাধে চাষ করেছেন ৷ সঙ্গে চলছে পশু পালন । যার জেরে অভিযোগ উঠছে, ভারতীয় নাগরিকরা সেই এলাকায় চাষের কাজে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন । ভারতীয় চাষিদের অভিযোগের ভিত্তিতে মেখলিগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন চলতি মরশুমে ধান রোপণের সময় জমিতে ট্রাক্টর লাগিয়ে তা নষ্ট করে দেয় । এরপরও সেই সব জমিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের চাষবাস চলছে (Bangladesh Citizen in India Border) ।
সূত্রের খবর, এই চরে বিঘার পর বিঘা জমি অসাধু কিছু ভারতীয় বাংলাদেশিদের কাছে টাকার বিনিময়ে জমি লিজ দেয় । আবার কিছু কিছু জমিতে বাংলাদেশিরা ফসল চাষ করে আঁধি ফসলের ভাগ দিয়ে থাকে ভারতীয় অসাধু ব্যক্তিদের । নদীর বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত চর এলাকা হওয়ায় কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই । তাতে বাংলাদেশিদের এই কাজকর্মে সুবিধে হচ্ছে ।
শুক্রবার কুচলিবাড়ির তিস্তা নদীর গাউয়ার চরে গিয়ে দেখা গেল, বাংলাদেশি কিছু কৃষক ধান জমিতে কাজ করছে। ভারতীয় চরের জমিতে চাষের কাজে আসা বাংলাদেশি নাগরিক মহম্মদ মনির জানান, স্থানীয় এক ভারতীয় তাঁকে কয়েক বিঘা জমি দিয়েছে । যা ফসল হবে তার অর্ধেক ভাগ করে নেবেন ।
চাষের কাজে আসা বাংলাদেশি যুবক মহম্মদ রুবেল জানালেন, তিনি বিঘা প্রতি 3 হাজার টাকা দরে ভারতীয়দের কাছ থেকে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন । এ বছরই প্রথম লিজ নিলেও পুলিশ প্রসাশনের নির্দেশ শুনেছেন রুবেল ৷ তাই পরের বার থেকে আর ভারতীয়দের জমি লিজে নেবেন না বলে ঠিক করেছেন ।
আরও পড়ুন: অবৈধভাবে প্রবেশ ! কোচবিহারে গ্রেফতার বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী
ভারতীয় অনিল রায়, গোপাল রায়ের অভিজ্ঞতা, বিএসএফ-এর নজরদারিতে তাঁরা ভারতীয় হয়েও অবাধে এই চরে আসতে পারেন না ৷ সব বৈধ কাগজপত্র দেখাতে হয় তাঁদের ৷ কিন্তু বাংলাদেশিরা এই চরে আসছেন এবং দিব্য চাষবাস করছেন । এতে তাঁরা চরম সমস্যায় পড়েছেন । তাঁদের অভিযোগ, বেশ কিছু ভারতীয় কৃষক তাঁদের চরের জমি দখল করে নিজেরা চাষাবাদ না করে বাংলাদেশিদের লিজ দেয় । যাঁদের দখলে অল্প জমি রয়েছে, তাঁরা চাষের কাজে এসে বাংলদেশিদের মধ্যে থাকেন ।
স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, "চাষের কাজে আমাদের চরে আসতে গেলে বিএসএফের হাতে যে কোনও আইডেন্টিটি কার্ড জমা দিয়ে আসতে হয় । অথচ বাংলাদেশিরা বিনা বাধায় পৌঁছে যায় আমাদের চরে ৷" তাঁদের দাবি, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করে চরে বাংলাদেশিদের চাষাবাদ বন্ধ করুক । তিনি আরও বলেন, "উন্মুক্ত তিস্তার এই চরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা চাষাবাদ করেছেন । এখন আমরা বাংলাদেশিদের জন্য বঞ্চিত হচ্ছি । বাংলাদেশিদের জন্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে ।"
এই বিষয়ে স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্যা ফুলতি রায় বলেন, "ভারতীয় চাষিদের এই বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে । কিছু দিন আগে ব্লক প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে ।" তাঁরও দাবি, এতে দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দরকার ।
এই বিষয়ে মেখলিগঞ্জের বিডিও অরুণ কুমার সামন্ত বলেন, "ব্যাপারটা জানার পরে আমরা কিছুদিন আগে সেই এলাকায় অভিযান চালিয়েছি । অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের চাষাবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় । ফের চাষাবাদ করলে আবার অভিযান চালানো হবে ।"
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিএসএফের গুলিতে নিহত গরু পাচারকারী