ওয়াশিংটন, 10 জানুয়ারি : ইরানের মিজ়াইল হামলার জেরেই কি বৃহস্পতিবার তেহরানের অদূরে ভেঙে পড়েছিল ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান ? অ্যামেরিকার সংবাদমাধ্যম এনিয়ে প্রশ্ন তোলার পর জল্পনা আরও উসকে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । বিমান ভেঙে পড়ার প্রসঙ্গে গতকাল তিনি বলেন, "কেউ কেউ বলছেন যান্ত্রিক ত্রুটির জেরেই এটা ঘটেছে । তবে আমার মনে হয় আরও ভয়ংকর কিছু ঘটেছে । " ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ট্রাম্প তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে পরোক্ষে অভিযোগ তুলেছেন, ইরানের মিজ়াইল হামলার জেরেই বিমানটি ভেঙে পড়েছিল ।
বিমানটি ভেঙে পড়ার সময়ের উপগ্রহের ছবি ও রাডার থেকে সংগৃহীত তথ্য জোগাড় করেছে অ্যামেরিকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম । সেই তথ্য থেকে দেখা গেছে, বিমানটি ভেঙে পড়ার কিছুক্ষণ আগে ইরানের তরফে একটি মিজ়াইল ছোড়া হয়েছিল । ইরাকে অ্যামেরিকার সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের সেনা মিজ়াইলটি ছুড়েছিল । আকাশপথে বিমানটি যে দিকে যাচ্ছিল, মিজ়াইলটির গতিপথও সেদিকে ছিল । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমেরিকার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সেনা আধিকারিকের মতে মিজ়াইল হামলার জেরেই বিমানটি ভেঙে পড়ে ।
বিমানের ধ্বংসাবশেষের একটি ছবি ইতিমধ্যে ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে । ছবিতে দেখা গেছে, বিমানের বাইরের অংশে অসংখ্য ছিদ্র । বিশেষজ্ঞদের মতে, রকেট বা মিজ়াইল হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমানের বাইরের অংশে এমন ছিদ্র হয় । রকেট বা মিজ়াইলের স্প্লিন্টারের আঘাতে সাধারণত এমন ছিদ্র হয় । 2014 সালে মালয়েশিয়ার একটি বিমান ইউক্রেনের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় রাশিয়ার মিজ়াইলের আঘাতে সেটি ভেঙে পড়ে । সেই বিমানটির বাইরের অংশেও এমন অসংখ্য ছিদ্র লক্ষ্য করেছিল তদন্তকারী দল ।
গতকাল 176 জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি ভেঙে পড়ার পর প্রাথমিকভাবে ইউক্রেন জানিয়েছিল দুর্ঘটনার কারণ যান্ত্রিক ত্রুটি । কিন্তু পরবর্তীতে তারা জানায় দুর্ঘটনার তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে । ইরান ইতিমধ্যে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য তারা বিমানটির ব্ল্যাকবক্স বোয়িং কম্পানি (অ্যামেরিকার এই কম্পানি বিমানটি তৈরি করেছিল) বা অ্যামেরিকার সরকারের হাতে তুলে দেবে না । তবে বোয়িং চাইলে দুর্ঘটনার তদন্তে ইরানের সহযোগী হতে পারে । ইরানের এই বিবৃতির পর বিমান দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য ইউক্রেন রাষ্ট্রসংঘের নিঃশর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছে ।
বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে এই জল্পনার মাঝে গতকাল ট্রাম্প বলেন, "বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়েছে কি না, তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান । বিমানটি যে এলাকা দিয়ে উড়ছিল তা খুবই বিপজ্জনক । তাই কারও ভুলের জেরে এমনটা (বিমানে মিজ়াইল হামলা) হতেই পারে । " উল্লেখ্য, বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় ট্রাম্প পরোক্ষে ইরানকে দায়ি করলেও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরাসরি দাবি করেছেন, তাদের হাতে যে তথ্য রয়েছে তাতে স্পষ্ট যে, ইরানের মিজ়াইল হানায় বিমানটি ভেঙে পড়েছে । ট্রুডোর এই দাবির পর ইরান কানাডা সরকারের কাছে সেই তথ্য চেয়ে অনুরোধ করেছে ।