ETV Bharat / international

জন্মদিনে ফিরে দেখা লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গলকে

author img

By

Published : May 12, 2021, 2:54 PM IST

16 বছর বয়সেই ফ্লোরেন্স তাঁর মা-বাবাকে জানিয়েদেন যে তিনি গরিব ও অসুস্থদের সেবার কাজে নিয়োজিত হতে চান ৷ তাই তিনি বিয়ের প্রস্তাবও খারিজ করে দেন ৷ তবে তাঁর মা-বাবা এই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না ৷ আপত্তিও জানিয়েছিলেন ৷

জন্মদিনে ফিরে দেখা লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গলকে
জন্মদিনে ফিরে দেখা লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গলকে

হায়দরাবাদ, 12 মে : ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল ৷ তিনি 1860 সালের 12 মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৷ তাঁর জন্মস্থান ইতালির ফ্লোরেন্সে ৷ তাঁর মা-বাবা ওই জায়গায় তাঁর জন্মের আগে ও পরে ভ্রমণে গিয়েছিলেন ৷ সেই কারণেই ফ্লোরেন্স শহরের নামে নাইটেঙ্গলের নামকরণ করা হয় ৷ ফ্লোরেন্স ধনী পরিবারের মেয়ে ছিলেন ৷ তাই মনে করা হয়েছিল যে তিনি কম বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অন্যরকম জীবনযাপন করবেন ৷

কিন্তু তেমনটা ঘটেনি ৷ বরং 16 বছর বয়সেই ফ্লোরেন্স তাঁর মা-বাবাকে জানিয়েদেন যে তিনি গরিব ও অসুস্থদের সেবার কাজে নিয়োজিত হতে চান ৷ তাই তিনি বিয়ের প্রস্তাবও খারিজ করে দেন ৷ তবে তাঁর মা-বাবা এই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না ৷ আপত্তিও জানিয়েছিলেন ৷ কারণ, সেই সময় নার্সিংকে একেবারেই সম্মানীয় কোনও কাজ বলে মনে করা হত না ৷ কিন্তু ফ্লোরেন্স শোনেননি ৷ 1844 সালে তিনি জার্মানির কাইজারওয়ের্থে একটি হাসপাতালে নার্সিং শিক্ষার কাজ শুরু করেন ৷

তবে এর জন্য বাড়ি থেকে মাত্র তিনমাসের সময় পেয়েছিলেন নাইটেঙ্গল ৷ কিন্তু তিনি জার্মানির পাঠ শেষ করে নার্সিংয়ের আরও প্রশিক্ষণের জন্য প্যারিস চলে যান ৷ ফিরে আসেন 1853 সালে ৷ তখন তাঁর বয়স 33 ৷ ততদিনে তিনি নার্সিং জগতে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন ৷ ইংল্যান্ডে ফেরার পর লন্ডনে একটি হাসপাতালে সুপার ও ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি ৷

যদিও তার আগে সেখানে একজন সেবিকা হিসেবেই কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি ৷ তবে তাঁর কাজ, রোগীদের সেবা করার ধরন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করে রোগীমৃত্যুর হার কমিয়ে সকলের নজরে আসেন নাইটেঙ্গল ৷ তখনই তাঁকে সুপার হিসেবে নিয়োগ করা হয় ৷

এর পর 1854 সালে শুরু হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ৷ যে যুদ্ধের সময় আহত ও অসুস্থ সৈনিকদের নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন ব্রিটিশরা ৷ কারণ, ওষুধ অমিল ছিল, অনেক সৈনিক ছিলেন এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ছিল না ৷ তা নিয়ে অনেকে অভিযোগ করছিলেন ৷ এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় ৷ এই সময় যুদ্ধ সচিব সিডনি হার্বাট দ্বারস্থ হন ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গলের ৷

এই পরিস্থিতিতে 38 জন নার্সকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে আসেন নাইটেঙ্গল ৷ কনস্ট্যান্টিনোপলে ব্রিটিশ ক্যাম্পে তিনি হাজির হন 1854 সালের 4 নভেম্বর ৷ কিন্তু তাঁরা মহিলা হওয়ায় চিকিৎসকরা তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হননি ৷ পরে যখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে, তখন বাধ্য হয়ে চিকিৎসরা নাইটেঙ্গলদের সাহায্য নেন ৷ সেই কাজে নেমে 6 মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বড় ভূমিকা নেন তিনি ৷ তখন রোজ রাতে একটি বাতি হাতে সৈনিকদের দেখভাল করতেন তিনি ৷ সেই কারণেই ইতিহাসের পাতায় তিনি ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামেও পরিচিত ৷

যুদ্ধ থেকে ফিরে ব্রিটিশ সেনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়টির উন্নতির দিকে নজর দেন তিনি ৷ তাঁর সমস্ত তথ্য জমা দেন রানি ভিক্টোরিয়া ও প্রিন্স অ্যালবার্টের কাছে৷ সেটা ছিল 1856 সাল ৷ 1858 সালে তাঁকে প্রথম মহিলা হিসেবে রয়্যাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল সোসাইটির সদস্য করা হয় ৷ 1907 সালে তিনি অর্ডার অফ মেরিটে পুরস্কৃত হন ৷ তিনি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রায় দেড়শোটি বই লিখেছেন ৷ তবে হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধিতে তাঁর অবদান সবচেয়ে স্মরণ করা হয় ৷

আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে স্বাস্থ্য কর্মীদের কুর্নিশ

তাঁর মৃত্যুর দু’বছর পর শুরু হয় ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল মেডেল ৷ যা প্রতি দু’বছর অন্তর দেওয়া হয় নার্সিং জগতে ভালো কাজের জন্য ৷ রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই পুরস্কার চালু করেছিল ৷ একই সঙ্গে 1965 সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটিকে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালন করা হয় ৷

হায়দরাবাদ, 12 মে : ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল ৷ তিনি 1860 সালের 12 মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৷ তাঁর জন্মস্থান ইতালির ফ্লোরেন্সে ৷ তাঁর মা-বাবা ওই জায়গায় তাঁর জন্মের আগে ও পরে ভ্রমণে গিয়েছিলেন ৷ সেই কারণেই ফ্লোরেন্স শহরের নামে নাইটেঙ্গলের নামকরণ করা হয় ৷ ফ্লোরেন্স ধনী পরিবারের মেয়ে ছিলেন ৷ তাই মনে করা হয়েছিল যে তিনি কম বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অন্যরকম জীবনযাপন করবেন ৷

কিন্তু তেমনটা ঘটেনি ৷ বরং 16 বছর বয়সেই ফ্লোরেন্স তাঁর মা-বাবাকে জানিয়েদেন যে তিনি গরিব ও অসুস্থদের সেবার কাজে নিয়োজিত হতে চান ৷ তাই তিনি বিয়ের প্রস্তাবও খারিজ করে দেন ৷ তবে তাঁর মা-বাবা এই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না ৷ আপত্তিও জানিয়েছিলেন ৷ কারণ, সেই সময় নার্সিংকে একেবারেই সম্মানীয় কোনও কাজ বলে মনে করা হত না ৷ কিন্তু ফ্লোরেন্স শোনেননি ৷ 1844 সালে তিনি জার্মানির কাইজারওয়ের্থে একটি হাসপাতালে নার্সিং শিক্ষার কাজ শুরু করেন ৷

তবে এর জন্য বাড়ি থেকে মাত্র তিনমাসের সময় পেয়েছিলেন নাইটেঙ্গল ৷ কিন্তু তিনি জার্মানির পাঠ শেষ করে নার্সিংয়ের আরও প্রশিক্ষণের জন্য প্যারিস চলে যান ৷ ফিরে আসেন 1853 সালে ৷ তখন তাঁর বয়স 33 ৷ ততদিনে তিনি নার্সিং জগতে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন ৷ ইংল্যান্ডে ফেরার পর লন্ডনে একটি হাসপাতালে সুপার ও ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি ৷

যদিও তার আগে সেখানে একজন সেবিকা হিসেবেই কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি ৷ তবে তাঁর কাজ, রোগীদের সেবা করার ধরন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করে রোগীমৃত্যুর হার কমিয়ে সকলের নজরে আসেন নাইটেঙ্গল ৷ তখনই তাঁকে সুপার হিসেবে নিয়োগ করা হয় ৷

এর পর 1854 সালে শুরু হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ৷ যে যুদ্ধের সময় আহত ও অসুস্থ সৈনিকদের নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন ব্রিটিশরা ৷ কারণ, ওষুধ অমিল ছিল, অনেক সৈনিক ছিলেন এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ছিল না ৷ তা নিয়ে অনেকে অভিযোগ করছিলেন ৷ এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় ৷ এই সময় যুদ্ধ সচিব সিডনি হার্বাট দ্বারস্থ হন ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গলের ৷

এই পরিস্থিতিতে 38 জন নার্সকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে আসেন নাইটেঙ্গল ৷ কনস্ট্যান্টিনোপলে ব্রিটিশ ক্যাম্পে তিনি হাজির হন 1854 সালের 4 নভেম্বর ৷ কিন্তু তাঁরা মহিলা হওয়ায় চিকিৎসকরা তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হননি ৷ পরে যখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে, তখন বাধ্য হয়ে চিকিৎসরা নাইটেঙ্গলদের সাহায্য নেন ৷ সেই কাজে নেমে 6 মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বড় ভূমিকা নেন তিনি ৷ তখন রোজ রাতে একটি বাতি হাতে সৈনিকদের দেখভাল করতেন তিনি ৷ সেই কারণেই ইতিহাসের পাতায় তিনি ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামেও পরিচিত ৷

যুদ্ধ থেকে ফিরে ব্রিটিশ সেনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়টির উন্নতির দিকে নজর দেন তিনি ৷ তাঁর সমস্ত তথ্য জমা দেন রানি ভিক্টোরিয়া ও প্রিন্স অ্যালবার্টের কাছে৷ সেটা ছিল 1856 সাল ৷ 1858 সালে তাঁকে প্রথম মহিলা হিসেবে রয়্যাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল সোসাইটির সদস্য করা হয় ৷ 1907 সালে তিনি অর্ডার অফ মেরিটে পুরস্কৃত হন ৷ তিনি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রায় দেড়শোটি বই লিখেছেন ৷ তবে হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধিতে তাঁর অবদান সবচেয়ে স্মরণ করা হয় ৷

আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে স্বাস্থ্য কর্মীদের কুর্নিশ

তাঁর মৃত্যুর দু’বছর পর শুরু হয় ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল মেডেল ৷ যা প্রতি দু’বছর অন্তর দেওয়া হয় নার্সিং জগতে ভালো কাজের জন্য ৷ রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই পুরস্কার চালু করেছিল ৷ একই সঙ্গে 1965 সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটিকে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালন করা হয় ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.