জার্মানি হচ্ছে সেইসব দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে সফলভাবে কোরোনার মোকাবিলা করা হচ্ছে । শুরুর দিনগুলোতে সংক্রমণের সংখ্যাটা বেশি থাকা সত্ত্বেও, এই দেশ তা নিয়ন্ত্রণে সামনের সারিতে রয়েছে । 14 এপ্রিলের মধ্যে জার্মানিতে এক লাখ 30 হাজার সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে ৷ যাঁর অর্ধেকই সুস্থ হয়ে উঠেছেন । জার্মানির একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, মারিয়া চেন্নামানেনি বলেন, ‘‘সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ হওয়ার পিছনে রয়েছে সরকারের পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতা ।’’
ডক্টর মারিয়া হলেন ভেমুলাওয়াড়ার বিধায়ক চেন্নামানেনি রমেশের স্ত্রী । তিনি একজন সিনিয়র ফিজ়িওথেরাপিস্ট হিসেবে গত 30 বছর ধরে জার্মানির ক্লিনিকুম বুখে কর্মরত । ইনাডুকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বুঝিয়ে বলেন, কীভাবে তাঁর দেশ মৃত্যুর সংখ্যা ন্যূনতম রেখে মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে । জার্মানিতে প্রথম কোরোনা সংক্রমণের ঘটনা চিহ্নিত হয় 27 জানুয়ারি । স্ট্যানবার্গে, ওয়েবস্টা নামে একটি গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার এক 33 বছর বয়সি কর্মীর শরীরে কোরোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে । জানা যায়, চিনের ইউহান ফেরত এক সহকর্মীর থেকে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন । ইট্যালি, ইরান ও চিন থেকে আসা পর্যটকদের থেকে গোটা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে । 14 এপ্রিল পর্যন্ত, এক লাখ 32 হাজার 210টি সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছে । 3 হাজার 495 জনের মৃত্যু হয়েছে । কার্যকরী রণকৌশল নিয়ে মহামারী প্রতিরোধ করতে নামে সরকার । ‘T-3’, অর্থাৎ ‘ট্রেস, টেস্ট, ট্রিট’-এর উদ্যোগ সফল হয়েছে । তাৎক্ষণিক পরীক্ষা ও স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া কমেছে, রোধ করা গেছে মৃত্যু । মহামারী ছড়িয়ে পড়ার হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমেছে । 64 হাজার 300 রোগী সেরে উঠেছেন । শুরুর দিকে, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি তিন থেকে সাত জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারতেন । সেটা কমে 1.2 থেকে 1.7 হয়েছে । বর্তমানে 2 হাজার 294 জন রোগী ICU-তে রয়েছেন ৷ যাঁদের মধ্যে 73 জন রয়েছেন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায়, জার্মান সরকার রোগ মোকাবিলায় একটা পরিকল্পনা তৈরি করেছে । মহামারীর গতিরোধ করতে বিরাট সংস্থায় রোগীদের রাখার ক্লাস্টার তৈরি হয়েছে । 22 মার্চ দেশজুড়ে কারফিউ জারি হয় এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় । জনগণকে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যই বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় । জার্মানিতে 132টি পরীক্ষা কেন্দ্রে সপ্তাহে পাঁচ লাখ কোরোনা পরীক্ষা হয় । এখনও পর্যন্ত 13 লাখ 50 হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে । চিকিৎসকরা উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু করছেন । স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের সুবিধাও নেওয়া হচ্ছে । মহামারীর মোকাবিলার করার পিছনে সরকারের স্বাস্থ্য নীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরাট যোগদান রয়েছে । জার্মানির মোট জনসংখ্যা আট কোটি । দেশটি 16টি রাজ্যে বিভক্ত । শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন । ভারতীয় টাকায় হিসেব করলে, সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবায় বছরে জনপ্রতি চার লাখ 50 হাজার টাকা খরচ করে ৷ যা অন্যান্য অনেক দেশের থেকে বেশি । এখানে প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্যবিমা আছে । এখানে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য হাসপাতালের বেডের সংখ্যা 621টি । মেডিকেল টেস্ট সবার জন্যই বিনামূল্যে । দেশের 40 হাজার ICU শয্যা এবং 28 হাজার ভেন্টিলেটর রয়েছে ।
কোরোনা মহামারী সত্ত্বেও জার্মানির সাধারণ চিকিৎসা পরিষেবাগুলি আগের মতোই কাজ করছে । জার্মানির মতো ভারতও আমার দেশ । আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আমাকে তেলাঙ্গানার সংস্কৃতি গ্রহণ করতে সাহায্য করেছেন । ভারতের মতো 130 কোটির দেশে পুরোপুরি লকডাউন করা কঠিন । অজস্র চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে ভারত সরকারের লকডাউন কার্যকর করার প্রশংসা করেছেন বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকরা । যদি বর্তমান ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে টেস্টের হারও বাড়ানো যায়, তাহলে মানুষ আরও আশ্বস্ত হবেন ।