ETV Bharat / international

বিশ্ব মাটি দিবস : ভূমিক্ষয় রোধেই সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ

5 ডিসেম্বর বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয় । এবারের থিম ভূমিক্ষয় রোধ করুন, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন।

author img

By

Published : Dec 4, 2019, 11:46 PM IST

Updated : Dec 5, 2019, 1:13 PM IST

World Soil Day
ছবি

প্রতি বছর 5 ডিসেম্বর বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয় । রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (FAO) এই দিন উদযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার আঞ্চলিক অফিসগুলিতে তথা দেশে বিদেশের নানা জায়গায় এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয় । এই দিন উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষের মধ্যে মাটি ও তার গুণগত মান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা । যা জীবনধারণ, খাদ্য নিরাপত্তা, বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।

বিশ্ব মাটি দিবসের থিম :

এবারের থিম 'ভূমিক্ষয় রোধ করুন, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন' । মূল লক্ষ্য হল বাস্তুতন্ত্র ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা । মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে ক্রমবর্ধমান প্রতিবন্ধকতাগুলিকে চিহ্নিত করা । এই কাজে বিশ্বব্যাপী সরকারি সংস্থা, জনগোষ্ঠী নির্বিশেষে প্রত্যেককে উৎসাহিত করা । যাতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার অভিযানে তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ।

বিশ্ব মাটি দিবসের পটভূমি :

  • 2002 সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ সয়েল সায়েন্সেস (IUSS) বিশ্ব মাটি দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেয় । এরপর থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে, গ্লোবাল সয়েল পার্টনারশিপের পরিকল্পনায় রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (FAO) এই দিন পালন শুরু করে।
  • FAO 2013 সালের জুন মাসে বিষয়টি সর্বসমক্ষে আনে । পরে রাষ্ট্রসংঘের 68 তম সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টিকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানায় । 2013 সালের ডিসেম্বরে এই বিষয়ে অনুমোদন দেয় রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশন । 2014 সালের 5 ডিসেম্বর প্রথম সরকারিভাবে পালিত হয় বিশ্ব মাটি দিবস ।
  • 5 ডিসেম্বর দিনটিকে নির্বাচন করা হয়, কারণ এই দিনটিতেই থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুল্যদেজ জন্মেছিলেন । এই পুরো কর্মকাণ্ডে ভূমিবল আদুল্যদেজ় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ।
  • 2016 সালের 13 অক্টোবর মৃত্যু হয় ভূমিবল আদুল্যদেজ়ের । সেবার তাঁর স্মৃতিতেই এই দিনটি পালিত হয় ।


বিশ্বজুড়ে ভূমিক্ষয়ে কী ক্ষতি হয়েছে :

  • ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা দুটি মডেল দিয়েছেন-রাসেল ও ম্যাগনেট । যার মাধ্যমে ভূমিক্ষয় থেকে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে । গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষতির পরিমাণ বিশ্বের মোট GDP-র নিরিখে বার্ষিক 8 বিলিয়ন ডলার । খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ কমেছে 33.7 মিলিয়ন টন ।
  • বিশেষত সেই দেশগুলি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে যাদের ভূমিক্ষয়ের হার সর্বোচ্চ এবং বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি রয়েছে ।
  • বেশিরভাগ ক্যারিবীয় দেশগুলিতে, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে 70 শতাংশের বেশি পরিমাণে ভূমিক্ষয় দেখা গেছে ৷
  • অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সাহারান দেশগুলি, রাশিয়া এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশগুলির ক্ষেত্রে চাষযোগ্য জমির মাত্র 3 শতাংশ ক্ষয় হয়েছে ৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে , গড় হিসেবে, প্রায় 24 শতাংশ চাষযোগ্য জমিতে সারা বিশ্বজুড়ে মারাত্মক ভূমিক্ষয় লক্ষ্য করা গেছে ৷

ভারতে ভূমিক্ষয়

  • আর্থ সায়েন্স মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল সেন্টার ফর কোস্টাল রিসার্চ সংস্থাটি ভারতের উপকূলবর্তী এলাকায় গবেষণা চালিয়েছেন । গত 26 বছরে দেশের উপকূলবর্তী এলাকার এক তৃতীয়াংশ ক্ষয়ে গেছে ।
  • ভারতে মোট 7,517 কিলোমিটার উপকূলবর্তী এলাকা রয়েছে । যার মধ্যে 6,301 কিমি জায়গার উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে । দেখা গেছে এর মধ্যে 33 শতাংশ ভূমি ক্ষয়ে গেছে । পশ্চিমবঙ্গে এই মান সর্বোচ্চ । গত 26 বছরে পশ্চিমবঙ্গে 99 স্কয়্যার কিমি ভূমিক্ষয় হয়েছে । পশ্চিম উপকূলের থেকে পূর্ব উপকূলে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় এই ভূমিক্ষয়ের মান বেশি ।
  • সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী , দেশের 2,156.43 কিমি উপকূলবর্তী এলাকা ভূমিক্ষয়ের সম্মুখীন । যেখানে 1,941.24 কিমি এলাকার মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে না ।

পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকায় ভূমিক্ষয় :

  • পশ্চিমবঙ্গ : 63 শতাংশ
  • পুদুচেরি : 57 শতাংশ
  • ওড়িশা : 28 শতাংশ
  • অন্ধ্রপ্রদেশ : 27 শতাংশ


পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকায় ভূমিক্ষয় :

  • কেরালা : 40 শতাংশের উপর
  • গুজরাত : 26 শতাংশ
  • দিউ ও দমন : 26 শতাংশ
  • মহারাষ্ট্র : 24 শতাংশ
  • গোয়া : 12 শতাংশ
  • কর্নাটাক : 22 শতাংশ

যেখানে ভূমিক্ষয় হচ্ছে না অর্থাৎ সর্বোচ্চ পরিমাণ পরিবৃদ্ধি হচ্ছে মাটির :

পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকা :

  • ওড়িশা : 51 শতাংশ
  • অন্ধ্রপ্রদেশ : 42 শতাংশ
  • পশ্চিমবঙ্গ : 24 শতাংশ

পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকা :

  • গুজরাত, দিউ ও দমন : 31 শতাংশ
  • মহারাষ্ট্র : 12 শতাংশ
  • গোয়া : 20 শতাংশ
  • কর্নাটক : 30 শতাংশ
  • কেরালা : 21 শতাংশ
  • তামিলনাড়ু : 23 শতাংশ

গবেষণায় উঠে আসা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

  • কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের ভৌগোলিক এলাকার অর্ধেকই ভূমিক্ষয়ের শিকার । গড়ে বার্ষিক ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ 5 বিলিয়ন টনেরও বেশি । এর 29 শতাংশ স্থায়ী ভূমিক্ষয় । জায়গা বিশেষে অনেক ক্ষেত্রে তা 61 শতাংশে দাঁড়ায় ।
  • মোট অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে উৎপাদনগত ক্ষতি, পুষ্টির ক্ষতি এবং লবণাক্তকরণের ফলে ক্ষতি যার পরিমাণ সর্বোচ্চ 45,000 কোটি টাকা হতে পারে । একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, "জলের জন্য মাটির ক্ষয়ের ফলে শস্য, তেল বীজ এবং ডাল ফসলের বার্ষিক শস্য উৎপাদনগত বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 13.4 মিলিয়ন টন ।

ভূমিক্ষয়ের নানা কারণ রয়েছে, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট :

  • ভারতের আটটি রাজ্যে অতিকর্ষণ ও গাছকাটার ফলে 20 শতাংশ জমি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে । অতিকর্ষণের ক্ষেত্রে মেসো স্কেলে মাটি ক্ষয়ের পরিমাণ 5-41 শতাংশ বেড়ে গেছে । ম্যাক্রো স্কেলে তা 3-18 শতাংশ ।
  • শিল্পায়ন, নগরায়ন, পরিকাঠামোর উন্নয়ন কেড়ে নিয়েছে বহু জমি । বিশেষ করে বেআইনি খনন এর জন্য দায়ি ।
  • ভূমিকম্প, সুনামি, তুষারধস, খরা, অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর অন্যতম কারণ ।
  • জনবিস্ফোরণ, গবাদি পশুর সংখ্যা, সারের অতিরিক্ত ব্যবহার, অতিকর্ষণ, শস্যাবর্তনের অভাব এই অবস্থার জন্য দায়ি ।

2015 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সয়েল হেল্থ কার্ড স্কিম চালু করে । যেখানে কৃষকদের জন্য সয়েল কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে । এই কার্ডে শস্য অনুযায়ী চাষবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সার সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য রয়েছে । কৃষি মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী 15 কোটিরও বেশি সয়েল হেল্থ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে ।

মাটি দূষণ রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

  • বর্জ্য সংগ্রহ ও বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে ৷
  • বর্জ্য ফেলার প্রক্রিয়া পৌরনিগমের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হবে ৷
  • রাস্তায় আবর্জনা ফেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করতে হবে ৷
  • রাসায়নিক সার ব্যবহারে বিধিনিষেধ প্রয়োজন ৷
  • কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, তৃণভোজী সবকিছুরই দিকেই নজর রাখতে হবে ৷
  • মাটি দূষণ নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে ৷
  • বাড়িতে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা রাখতে হবে ৷ গ্রামের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার তৈরির পিটে তা ফেলতে হবে ৷
  • ভূমিক্ষয় রোধে গাছ লাগাতে হবে, বাঁধের দিকে নজর রাখতে হবে ৷
  • নির্দিষ্ট কীট ছাড়াও ব্যাকটিরিয়াকে ধ্বংস করে এমন কীটনাশক তৈরি করতে হবে ৷
  • জৈব সার ও কম ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহার করতে হবে ৷
  • আরও বেশি করে ঘাস লাগিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করতে হবে ৷
  • শিল্প বর্জ্যের ক্ষেত্রে পৌরনিগমের তৈরি করা কঠোর নির্দেশিকা মানতে হবে ৷
  • কৃষি বর্জ্য যাতে মাঠেই পোড়ানো না হয়, ফসলের গোড়া যাতে কৃষিজমিতেই না পোড়ে, তার জন্য বোঝাতে হবে কৃষকদের ৷
  • মাটিতে জলস্তরের পরিমাণ বৃদ্ধিতে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে ৷
  • জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ৷ সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে একযোগে কাজ করতে হবে ৷
  • ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে রাসায়নিকের ব্যবহার কমাতে হবে ৷
  • জৈব সার ব্যবহার করতে হবে ৷ রাসায়নিক সার বন্ধ করতে হবে৷ প্লাস্টিক নয় কাগজ, সুতির ব্যাগ কিংবা চটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে ৷ বন্ধ করতে হবে পলিয়েস্টার ৷
  • আরও বেশি করে গাছ লাগাতে হবে ৷ নদীতে বর্জ্য ফেলা চলবে না ৷

প্রতি বছর 5 ডিসেম্বর বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয় । রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (FAO) এই দিন উদযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার আঞ্চলিক অফিসগুলিতে তথা দেশে বিদেশের নানা জায়গায় এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয় । এই দিন উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষের মধ্যে মাটি ও তার গুণগত মান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা । যা জীবনধারণ, খাদ্য নিরাপত্তা, বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।

বিশ্ব মাটি দিবসের থিম :

এবারের থিম 'ভূমিক্ষয় রোধ করুন, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন' । মূল লক্ষ্য হল বাস্তুতন্ত্র ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা । মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে ক্রমবর্ধমান প্রতিবন্ধকতাগুলিকে চিহ্নিত করা । এই কাজে বিশ্বব্যাপী সরকারি সংস্থা, জনগোষ্ঠী নির্বিশেষে প্রত্যেককে উৎসাহিত করা । যাতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার অভিযানে তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ।

বিশ্ব মাটি দিবসের পটভূমি :

  • 2002 সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ সয়েল সায়েন্সেস (IUSS) বিশ্ব মাটি দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেয় । এরপর থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে, গ্লোবাল সয়েল পার্টনারশিপের পরিকল্পনায় রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (FAO) এই দিন পালন শুরু করে।
  • FAO 2013 সালের জুন মাসে বিষয়টি সর্বসমক্ষে আনে । পরে রাষ্ট্রসংঘের 68 তম সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টিকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানায় । 2013 সালের ডিসেম্বরে এই বিষয়ে অনুমোদন দেয় রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশন । 2014 সালের 5 ডিসেম্বর প্রথম সরকারিভাবে পালিত হয় বিশ্ব মাটি দিবস ।
  • 5 ডিসেম্বর দিনটিকে নির্বাচন করা হয়, কারণ এই দিনটিতেই থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুল্যদেজ জন্মেছিলেন । এই পুরো কর্মকাণ্ডে ভূমিবল আদুল্যদেজ় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ।
  • 2016 সালের 13 অক্টোবর মৃত্যু হয় ভূমিবল আদুল্যদেজ়ের । সেবার তাঁর স্মৃতিতেই এই দিনটি পালিত হয় ।


বিশ্বজুড়ে ভূমিক্ষয়ে কী ক্ষতি হয়েছে :

  • ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা দুটি মডেল দিয়েছেন-রাসেল ও ম্যাগনেট । যার মাধ্যমে ভূমিক্ষয় থেকে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে । গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষতির পরিমাণ বিশ্বের মোট GDP-র নিরিখে বার্ষিক 8 বিলিয়ন ডলার । খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ কমেছে 33.7 মিলিয়ন টন ।
  • বিশেষত সেই দেশগুলি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে যাদের ভূমিক্ষয়ের হার সর্বোচ্চ এবং বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি রয়েছে ।
  • বেশিরভাগ ক্যারিবীয় দেশগুলিতে, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে 70 শতাংশের বেশি পরিমাণে ভূমিক্ষয় দেখা গেছে ৷
  • অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সাহারান দেশগুলি, রাশিয়া এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশগুলির ক্ষেত্রে চাষযোগ্য জমির মাত্র 3 শতাংশ ক্ষয় হয়েছে ৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে , গড় হিসেবে, প্রায় 24 শতাংশ চাষযোগ্য জমিতে সারা বিশ্বজুড়ে মারাত্মক ভূমিক্ষয় লক্ষ্য করা গেছে ৷

ভারতে ভূমিক্ষয়

  • আর্থ সায়েন্স মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল সেন্টার ফর কোস্টাল রিসার্চ সংস্থাটি ভারতের উপকূলবর্তী এলাকায় গবেষণা চালিয়েছেন । গত 26 বছরে দেশের উপকূলবর্তী এলাকার এক তৃতীয়াংশ ক্ষয়ে গেছে ।
  • ভারতে মোট 7,517 কিলোমিটার উপকূলবর্তী এলাকা রয়েছে । যার মধ্যে 6,301 কিমি জায়গার উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে । দেখা গেছে এর মধ্যে 33 শতাংশ ভূমি ক্ষয়ে গেছে । পশ্চিমবঙ্গে এই মান সর্বোচ্চ । গত 26 বছরে পশ্চিমবঙ্গে 99 স্কয়্যার কিমি ভূমিক্ষয় হয়েছে । পশ্চিম উপকূলের থেকে পূর্ব উপকূলে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় এই ভূমিক্ষয়ের মান বেশি ।
  • সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী , দেশের 2,156.43 কিমি উপকূলবর্তী এলাকা ভূমিক্ষয়ের সম্মুখীন । যেখানে 1,941.24 কিমি এলাকার মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে না ।

পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকায় ভূমিক্ষয় :

  • পশ্চিমবঙ্গ : 63 শতাংশ
  • পুদুচেরি : 57 শতাংশ
  • ওড়িশা : 28 শতাংশ
  • অন্ধ্রপ্রদেশ : 27 শতাংশ


পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকায় ভূমিক্ষয় :

  • কেরালা : 40 শতাংশের উপর
  • গুজরাত : 26 শতাংশ
  • দিউ ও দমন : 26 শতাংশ
  • মহারাষ্ট্র : 24 শতাংশ
  • গোয়া : 12 শতাংশ
  • কর্নাটাক : 22 শতাংশ

যেখানে ভূমিক্ষয় হচ্ছে না অর্থাৎ সর্বোচ্চ পরিমাণ পরিবৃদ্ধি হচ্ছে মাটির :

পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকা :

  • ওড়িশা : 51 শতাংশ
  • অন্ধ্রপ্রদেশ : 42 শতাংশ
  • পশ্চিমবঙ্গ : 24 শতাংশ

পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকা :

  • গুজরাত, দিউ ও দমন : 31 শতাংশ
  • মহারাষ্ট্র : 12 শতাংশ
  • গোয়া : 20 শতাংশ
  • কর্নাটক : 30 শতাংশ
  • কেরালা : 21 শতাংশ
  • তামিলনাড়ু : 23 শতাংশ

গবেষণায় উঠে আসা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

  • কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের ভৌগোলিক এলাকার অর্ধেকই ভূমিক্ষয়ের শিকার । গড়ে বার্ষিক ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ 5 বিলিয়ন টনেরও বেশি । এর 29 শতাংশ স্থায়ী ভূমিক্ষয় । জায়গা বিশেষে অনেক ক্ষেত্রে তা 61 শতাংশে দাঁড়ায় ।
  • মোট অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে উৎপাদনগত ক্ষতি, পুষ্টির ক্ষতি এবং লবণাক্তকরণের ফলে ক্ষতি যার পরিমাণ সর্বোচ্চ 45,000 কোটি টাকা হতে পারে । একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, "জলের জন্য মাটির ক্ষয়ের ফলে শস্য, তেল বীজ এবং ডাল ফসলের বার্ষিক শস্য উৎপাদনগত বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 13.4 মিলিয়ন টন ।

ভূমিক্ষয়ের নানা কারণ রয়েছে, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট :

  • ভারতের আটটি রাজ্যে অতিকর্ষণ ও গাছকাটার ফলে 20 শতাংশ জমি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে । অতিকর্ষণের ক্ষেত্রে মেসো স্কেলে মাটি ক্ষয়ের পরিমাণ 5-41 শতাংশ বেড়ে গেছে । ম্যাক্রো স্কেলে তা 3-18 শতাংশ ।
  • শিল্পায়ন, নগরায়ন, পরিকাঠামোর উন্নয়ন কেড়ে নিয়েছে বহু জমি । বিশেষ করে বেআইনি খনন এর জন্য দায়ি ।
  • ভূমিকম্প, সুনামি, তুষারধস, খরা, অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর অন্যতম কারণ ।
  • জনবিস্ফোরণ, গবাদি পশুর সংখ্যা, সারের অতিরিক্ত ব্যবহার, অতিকর্ষণ, শস্যাবর্তনের অভাব এই অবস্থার জন্য দায়ি ।

2015 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সয়েল হেল্থ কার্ড স্কিম চালু করে । যেখানে কৃষকদের জন্য সয়েল কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে । এই কার্ডে শস্য অনুযায়ী চাষবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সার সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য রয়েছে । কৃষি মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী 15 কোটিরও বেশি সয়েল হেল্থ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে ।

মাটি দূষণ রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

  • বর্জ্য সংগ্রহ ও বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে ৷
  • বর্জ্য ফেলার প্রক্রিয়া পৌরনিগমের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হবে ৷
  • রাস্তায় আবর্জনা ফেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করতে হবে ৷
  • রাসায়নিক সার ব্যবহারে বিধিনিষেধ প্রয়োজন ৷
  • কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, তৃণভোজী সবকিছুরই দিকেই নজর রাখতে হবে ৷
  • মাটি দূষণ নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে ৷
  • বাড়িতে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা রাখতে হবে ৷ গ্রামের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার তৈরির পিটে তা ফেলতে হবে ৷
  • ভূমিক্ষয় রোধে গাছ লাগাতে হবে, বাঁধের দিকে নজর রাখতে হবে ৷
  • নির্দিষ্ট কীট ছাড়াও ব্যাকটিরিয়াকে ধ্বংস করে এমন কীটনাশক তৈরি করতে হবে ৷
  • জৈব সার ও কম ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহার করতে হবে ৷
  • আরও বেশি করে ঘাস লাগিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করতে হবে ৷
  • শিল্প বর্জ্যের ক্ষেত্রে পৌরনিগমের তৈরি করা কঠোর নির্দেশিকা মানতে হবে ৷
  • কৃষি বর্জ্য যাতে মাঠেই পোড়ানো না হয়, ফসলের গোড়া যাতে কৃষিজমিতেই না পোড়ে, তার জন্য বোঝাতে হবে কৃষকদের ৷
  • মাটিতে জলস্তরের পরিমাণ বৃদ্ধিতে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে ৷
  • জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ৷ সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে একযোগে কাজ করতে হবে ৷
  • ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে রাসায়নিকের ব্যবহার কমাতে হবে ৷
  • জৈব সার ব্যবহার করতে হবে ৷ রাসায়নিক সার বন্ধ করতে হবে৷ প্লাস্টিক নয় কাগজ, সুতির ব্যাগ কিংবা চটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে ৷ বন্ধ করতে হবে পলিয়েস্টার ৷
  • আরও বেশি করে গাছ লাগাতে হবে ৷ নদীতে বর্জ্য ফেলা চলবে না ৷
Hyderabad, Dec 04 (ANI): India cricket team player Shivam Dube showed his confidence just before match against West Indies by saying that 'Men in blue' is the best team in world cricket and it will win the series. India is hosting West Indies for three T20Is and three ODIs. First T20I will be played at the Rajiv Gandhi International Stadium in Hyderabad on December 06.
Last Updated : Dec 5, 2019, 1:13 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.