জাপান । ছয় হাজারেরও বেশি ছোটো-বড় দ্বীপ নিয়ে তৈরি এই দেশ । এ-রকমই একটি দ্বীপ শিকোকু । আয়তনে প্রায় 18 হাজার 800 বর্গ কিলোমিটার । এই শিকোকু দ্বীপেই রয়েছে নাগোরা গ্রাম । গ্রামে ঢুকলেই কেমন যেন একটা গা ছমছম করে ওঠে । কেমন যেন একটা বিষন্নতা ঘিরে রেখেছে গোটা গ্রামটাকে । গ্রামের মাঝ বরাবার দিয়ে চলে গেছে রাস্তা । মনুষ্যবসতি চিহ্ন আছে বটে, তবে কোথাও কারও দেখা নেই ।
রাস্তা ধরে এগোতে গেলেই বেশ ছমছম করে ওঠে গা । না, প্রাকৃতিক শোভা যথেষ্টই । তবে যেটা আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলবে, সেটা হল... রাস্তার দু'ধারে, বাগানে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় অনেককে দেখতে পাবেন আপনি । কেউ বসে, কেউ আবার দাঁড়িয়ে । চেক-শার্ট, ঢিলে-ঢালা প্যান্ট, মাথায় টুপি । সবাই যেন আপনাকেই দেখছে । তবে কারও সঙ্গে কথা বলার উপায়টুকু নেই আপনার । কেউ যেন আগ্রহীও নয় আপনার সঙ্গে কথা বলতে ।
গোটা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে এমনই অনেককেই দেখতে পাবেন আপনি । কেউ মাঠে কাজ করছে । অনেকে আবার মুখোমুখি কথা বলার ভঙ্গিমায় । তবে প্রত্যেকের দৃষ্টি স্থির । নিথর । প্রাণহীন । আদতে এরা প্রত্যেকেই পুতুল । তবে এদের পোশাক, মাথার চুল, নখ... আপাদমস্তক এতটাই নিখুঁত যে দূর থেকে দেখলে মানুষ বলেই মনে হবে । একটা জলজ্যান্ত মানুষ জীবনযাপনের জন্য যা যা কিছু করে, এখানে সেই সব ভঙ্গিমাতেই পুতুল রয়েছে । মাঠে, বাগানে, স্কুলে... সর্বত্রই এদের দেখা পাবেন আপনি । যেন কোনও এক অজানা জাদুতে হঠাৎ করে পুতুল হয়ে গেছে গ্রামের মানুষগুলো । জানতে ইচ্ছে করছে কী এই গ্রামের রহস্য?
আরও পড়ুন : দৈবের ভয়ে রাজস্থানের দেবমালিতে নেই পাকা বাড়ি !
এর রহস্য খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে 1950-60 এর সময়ে । একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের জন্য বাঁধ তৈরি করা হয় এখানে । আর এর পর থেকেই শুরু হয় জল সংকট । মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্য়ত্র চলে যেতে থাকেন । 2015 সালের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামটিতে ছিলেন মাত্র 35 জন বাসিন্দা । 2016 সালে তা কমে দাঁড়ায় তিরিশে । বর্তমানে আরও কম । 27 জন অধিবাসী রয়েছেন এই গ্রামে । সবথেকে কমবয়সী যিনি, তাঁর বয়সও পঞ্চাশোর্ধ । লোকে বলে, গ্রামে নাকি শেষ শিশুর জন্ম হয়েছিল 19 বছর আগে ।
এই গ্রামেই জন্ম নিয়েছিলেন সুকিমি আইয়ানো । খুব ছোটোবেলায় তিনিও বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছিলেন । তারপর যখন তিনি গ্রামে ফেরেন, তখন গ্রামের এই করুণ অবস্থা, এই জনশূণ্যতা তাঁর বুককে নাড়া দিয়ে ওঠে । ছোটোবেলায় যাঁদের দেখেছিলেন, সেই পরিচিত মুখগুলো গ্রামে আর নেই । কেউ মারা গেছেন, কেউ আবার গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন । সেই থেকেই চলে যাওয়া ও মৃত মানুষদের স্মৃতিতে পুতুল বানিয়ে চলেছেন তিনি ।
আরও পড়ুন : পথেঘাটে ঘুমিয়ে পড়ে আস্ত গ্রাম !
বছর কয়েক আগে পর্যন্তও গ্রামটি লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল । বিশ্ববাসীর নজরে গ্রামটি প্রথমবার আসে 2014 সালে । জার্মান চিত্র পরিচালক ফ্রিটজ় স্কুম্যান 2014 সালে সুকিমির পুতুলের কাজ নিয়ে ‘ভ্যালি অফ ডলস’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন । এরপর থেকেই বিশ্ববাসীর কাছে নাগোরা পরিচিত হয় ভ্যালি অফ ডলস নামে ।