দিল্লি, 23 অগাস্ট : ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (FATF) কালো তালিকা থেকে নাম সরিয়ে নেওয়ার তাগিদে পাকিস্তান অবশেষে স্বীকার করল ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি দাউদ ইব্রাহিম পাকিস্তানের উপকূলবর্তী শহর করাচিতেই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে । শনিবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রকাশিত তালিকা মেনে 88 জন জঙ্গিকে নির্বাসিত করার কথা ঘোষণা করতে গিয়েই পাকিস্তানের এই স্বীকারোক্তি ।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI) 18 আগস্ট দু’টি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ৷ বিজ্ঞপ্তিতে জামাত-উদ-দাওয়া (JuD), জইশ-ই-মহম্মদ (JuM), তালিবান, দায়েশ, হাক্কানি, আল কায়েদা ও অন্য বড় বড় জঙ্গিগোষ্ঠীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল ৷
নিউজ় ইন্টারন্যাশনালের খবর অনুযায়ী, ওই বিজ্ঞপ্তিতে পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে থাকা, বর্তমানে নিষ্ক্রিয় তেহরিক-ই-তালিবান (TTP)-এর সমস্ত নেতা এবং সদস্যদেরও নির্বাসিত করতে বলা হয়েছে । তালিকায় নাম রয়েছে জামাত-উদ-দাওয়ার হাফিজ় সইদ, জইশ-ই-মম্মদের মহম্মদ মাসুদ আজ়হার, মোল্লা ফজলুল্লাহ (ওরফে মোল্লা রেডিও), জ়াকিউর রহমান লখভি, মহম্মদ ইয়াহয়া মুজ়াহিদ, আবদুল হাকিম মুরাদ (যাকে ইন্টারপোল খুঁজছে), নুর ওয়ালি মেহসুদ, উজবেকিস্তান লিবারেশন মুভমেন্টের ফজ়ল রহমান, তালিবান নেতা জালালুদ্দিন হাক্কানি, খলিল আহমেদ হাক্কানি, ইয়াহয়া হাক্কানি এবং ভারতের মহারাষ্ট্রের আদি বাসিন্দা দাউদ ইব্রাহিম ও তার শাগরেদদের ।
1993 সালে মুম্বই বিস্ফোরণে 257 জনের মৃত্যু হয়েছিল । ওই ঘটনায় জড়িত থাকার সূত্রে দীর্ঘসময় ধরে ভারত দাউদের প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়ে আসছে পাকিস্তানের কাছে ।
পাকিস্তানের পেশ করা তালিকায় লাখভির নাম থাকাটা তাৎপর্যপূর্ণ কারণ 2008 সালের মুম্বই নাশকতার ঘটনায় ভারত তাকে মাস্টারমাইন্ড বলে ঘোষণা করেছিল । যদিও প্যারিসকেন্দ্রিক FATF পাকিস্তানকে 2018 সালেই ধূসর তালিকাভুক্ত করেছিল এবং তাদের কাছে শর্ত রেখেছিল 2019 সাল শেষ হওয়ার আগে তাদের দেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নির্মূল করতে হবে । এই শর্তের মেয়াদ COVID-১৯ প্যানডেমিকের কারণে বাড়ানো হয়েছিল ।
বিশ্বব্যাপী আর্থিক দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে আর্থিক মদতদাতাদের উপর নজরদারি সংস্থা হিসাবে FATF যে লক্ষ্য রেখেছে, তা অনুযায়ী অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি এর থেকে সমাজে যে ক্ষতি হয়, তাও প্রতিহত করার কথা বলা হয়েছে । নীতি নির্ধারক সংস্থা হিসাবে FATF সেই সমস্ত জরুরি রাজনৈতিক লক্ষ্য স্থির করে, যার মাধ্যমে এই দু’টি ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে আইনকানুন প্রণয়ন ও নজরদারি চালানো যায় ।
200টিরও বেশি দেশ ও এলাকা রয়েছে FATF—এর আওতায় ৷ এই দেশগুলি FATF নির্ধারিত নিয়মকানুন মেনে চলে । FATF বিশ্বজুড়ে এমন কিছু গুণমান তথা সুপারিশ প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে সংগঠিত ক্ষেত্রের অপরাধ, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাস দমনে সুসংহত পদক্ষেপ গৃহীত হয় । এর মাধ্যমে দেশগুলি সেই অর্থের হদিস পেতে উদ্যোগী হয়, যা অপরাধীরা অবৈধ মদ—মাদকের কারবার, মানব পাচার ও অন্য অনৈতিক কাজে ব্যয় করে । এছাড়া FATF গণহত্যার অস্ত্রের কারবারে আর্থিক মদত রুখতেও উদ্যোগ নেয় ।
FATF আর্থিক জালিয়াতি এবং সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের নানা ধরনের পন্থা তদন্ত করে দেখে এবং প্রতিটি মুহূর্তে নতুন, নতুন ঝুঁকি নেওয়ার জন্য নিজেদের কাজের গুণমান আরও উন্নত করার প্রয়াস করতে থাকে ৷ যেমন ‘ভার্চুয়াল সম্পত্তি’-র উপর নজরদারি যা ক্রিপ্টোকারেন্সি জনপ্রিয় হওয়ার পর আরও বেড়ে গিয়েছে । FATF নজর রাখে, বিশ্বব্যপী দেশগুলি তাদের নির্ধারিত নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণ এবং সক্রিয়ভাবে মেনে চলছ কি না । যারা তা করে না, তাদের বিরুদ্ধে এরা ব্যবস্থাও নেয় ।
সম্প্রতি পাকিস্তান তাদের স্ব-নজরদারি সংগঠন, সরকারিভাবে যা SRO নামে পরিচিত, তার আওতায় বিজ্ঞপ্তিগুলি প্রকাশ করেছে ৷ তাতে বলা হয়েছে বর্তমানে নিষ্ক্রিয় TTP এবং অন্য সংগঠন যেমন লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-জাংভি, তারিখ গিদার গ্রুপ অফ TTP, হারকাতুল মুজ়াহিদিন, আল রশিদ ট্রাস্ট, তানজিম জইশ-আল মোহাজারিন আনসার, জামাত-উল-আহরার, তানজিম খুতবা ইমাম বুখারি, রাবিতা ট্রাস্ট লাহোর, রিভাইভাল অফ ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি অফ পাকিস্তান, আল হারমেন ফাউন্ডেশন ইসলামাবাদ, হরকত জিহাদ আল ইসলামি, ইসলামি জিহাদ গ্রুপ, উজবেকিস্তান ইসলামি তেহরিক, দায়েশ অফ ইরাক, এমিরেটস অফ তানজিম কাফকাজ (যারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে) এবং আবদুল হক উইঘুরস অফ ইসলামিক ফ্রিডম মুভমেন্ট অফ চায়নার নেতাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে । পাকিস্তান সমস্ত জঙ্গি সংগঠন এবং এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি সদস্যকেও নির্বাসিত করার কথা জানিয়েছে । রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের কার্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে যে UNSC তালিবান স্যাংশন কমিটিই তালিবান ও তাদের সঙ্গে যুক্ত অন্য জঙ্গি সংগঠন তথা তার সদস্যদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় । কমিটি এই প্রক্রিয়ায় কোনও বদল আনলে পাকিস্তানসহ বিশ্বের সব রাষ্ট্র তা কার্যকর করতে বাধ্য । নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, অস্ত্রশস্ত্র মজুতকরণ এবং সফরের উপর । তালিবান স্যাংশনস কমিটির তরফে তাদের নিষেধাজ্ঞা জারি করার তালিকায় সাম্প্রতিককালে কোনও বদল আনা হয়নি ।
18 অগাস্ট পাকিস্তান যে SRO ইশু করেছে, তাতে বলা হয়েছে, “এ'টি আগে ঘোষিত SRO-য় প্রকাশিত তথ্য ও নথিকেই প্রক্রিয়ামাফিক পদক্ষেপ হিসাবে বজায় রেখেছে এবং নিষিদ্ধ করার তালিকায় বা পদক্ষেপে কোনও বদল আনেনি ।”