ডিম পাড়ে পাহাড় ! নিয়মিত ৷ মসৃণ কালো ডিম ! স্থানীয় মান্দারিন ভাষায় চিনের এই পাহাড়ের নাম চান দা ইয়া ৷ বাংলা করে দাঁড়ায় "ডিম পাড়া পাহাড়" ৷ পাহাড়টি গান্ডেং পর্বতশ্রেণির অংশ ৷ গুইঝু প্রদেশের কিয়ানান বুয়ি ও মিয়াও অঞ্চলজুড়ে অবস্থান ৷
তবে পাহাড়ের পুরো অংশই ডিম পাড়ে না, একটি বিশেষ অংশের আছে এই আশ্চর্য ক্ষমতা ! অংশটি লম্বায় 9 ফুট, চওড়ায় 65 ফুট ৷ ওই অল্প জায়গাজুড়েই গাদা গাদা ডিম ! পাহাড়ে গা ফুঁড়ে যা বের হয়ে আসছে ! পাহাড় বলেই হয়তো একটা ডিম পাড়তে সময় লাগে বেশ কিছুটা ! একটা ডিম পাড়তে চান দা ইয়া সময় নয় 30 বছর প্রায় ৷ অবাক করা কাণ্ড হল, পাহাড়ের ডিম যেই পরিপূর্ণ রূপ ধরে, ওমনি সে টুক করে পাথরের গা খসে নেমে আসে পাদদেশে ৷
বোঝাই যাচ্ছে, এই ডিম পাথরের ৷ পাহাড়ের ডিম পাথরেরই তো হবে ৷ তবে সে একেবারে আসল ডিমের মতো ! এক্কেবারে ডিম্বাকৃতি ! প্রশ্ন হল, এমনটা কেন, কীভাবে ?
ভূতত্ত্ববিদরা গলদঘর্ম হয়েছেন উত্তর খুঁজে পেতে ৷ এখনও সঠিক উত্তর অজানা ৷ তবে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো গিয়েছে ৷ ব্যাখ্যা হল, গান্ডেং পর্বতশ্রেণি মূলত পাললিক শিলায় গঠিত ৷ যা সাধারণত অতিরিক্ত শক্ত ৷ কিন্তু ব্যতিক্রম এই চান দা ইয়া ৷ যা গঠিত চুনাপাথরে ৷ চুনাপাথর অপেক্ষাকৃত নরম ৷ সহজেই ক্ষয় হয় ৷ কিন্তু তাতে যে পাললিক শিলার অংশ থাকে, সেগুলি কিন্তু ক্ষয় হয় না সহজে ৷ এরফলেই পাহাড়ের গায়ে প্রাকৃতিক অভিযোজনে ভেসে ওঠে ডিম ! ডিমের আশপাশের অংশ যত ক্ষয় হয়, ডিমও তত বড় হয় ৷ এরপর ডিম সম্পূর্ণ তৈরি হলে আশেপাশের অংশ ক্ষয়ে যাওয়ায় ও ডিমের ওজন বেড়ে যাওয়ায় সেটি খসে নেমে আসে পাহাড়ের পাদদেশে ৷ কিন্তু ডিমগুলো কীভাবে অমন গোল হয় ? কিংবা এখনও কীভাবে পাহাড়ের ওই অংশেই কেবল চুনাপাথরের স্তর থেকে গেছে ?
তার ব্যাখ্যা নেই বিজ্ঞানীদের কাছেও ! হ্যাঁ, পাহাড়ের কাছেই রয়েছে গুলু নামের একটি গ্রাম ৷ গ্রামের মানুষের কাছে ডিমের ব্যখ্যা সহজ সরল ৷
গুলুর বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ডিমগুলো ঈশ্বরের দান ৷ স্থানীয় বহু মন্দিরে পাহাড়ের ডিমের পুজোও হয় ৷ এমনকী গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে অন্তত একটি করে ডিম রাখা থাকে ৷ গ্রামবাসীর বিশ্বাস, আশ্চর্য পাহাড়ের অদ্ভুত ডিম পরিবারে সৌভাগ্য বয়ে আনে ৷ আজ পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় চান দা ইয়া'র এই ডিম ৷ গ্রামের মানুষ পর্যটকদের কাছে পাহাড়ের ডিম বিক্রিও করে ৷ এই করে চান দা ইয়ার ডিমের সংখ্যা না-কি অনেক কমে গিয়েছে ৷