বেইজিং, 4জুন : চিনের একটি স্কুলে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের চাকু দিয়ে কোপাল ওই স্কুলেরই এক নিরাপত্তা রক্ষী । পড়ুয়া এবং শিক্ষকসহ প্রায় 40জন জখম হয়েছেন । জখম পড়ুয়াদের অধিকাংশের বয়স ছয়েরও কম । তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক । প্রত্যেকেই স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ।
আজ সকালে ওয়াংফু টাউন সেন্ট্রাল প্রাইমারি স্কুলে অন্যান্য দিনের মতোই ক্লাস চলছিল । বিপত্তি ঘটে আজ সকাল 8টা 30 মিনিটে । পড়ুয়ারা দেখে, তাদের স্কুলেরই পরিচিতি নিরাপত্তা রক্ষী চাকু হাতে এগিয়ে আসছে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাথাড়ি কোপ বসাতে থাকে 50 বছরের শাওমিন । প্রাণ ভয়ে শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা এধার ওধার ছুটতে থাকেন । কয়েকজন পড়ুয়া স্কুলের বাইরেও বেরিয়ে আসে । চিৎকার করতে থাকে ভয়ে । শাওমিনের চাকুর কোপে প্রায় 40জন জখম হয় । রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকে কয়েকজন পড়ুয়া । কিন্তু তখনও চাকু হাতে উন্মাদের মতো কুপিয়ে চলেছে শাওমিন ।
ঘটনাস্থানে পৌঁছায় আটটি অ্যাম্বুলেন্স । জখমদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । স্কুলের প্রিন্সিপাল, আরও একজন নিরপত্তা রক্ষী এবং একজন পড়ুয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক । প্রত্যেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । শাওমিনকে আটক করে পুলিশ এবং তাকেও হাসপালাতে পাঠানো হয় । আজ এই সম্পূর্ণ ঘটনার বিবরণ ওয়াংফু টাউন প্রশাসনের তরফে একটি প্রেস রিলিজ়ে জানানো হয়েছে । চিনের একাধিক সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয় খবরটি ।
জখমদের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিকটবর্তী কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । ওয়াংফু শহরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কয়েকজন জখম পড়ুয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় । কয়েকজন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসারত । অভিভাবকদের লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে ওয়াংফু সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে । প্রত্যেকের চোখেমুখে ভয়, আতঙ্ক ।
চিনের একটি সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, চিকৎসক এবং নার্সরা অন্তত 10জন পড়ুয়ার শরীরে ও মাথায় ব্যান্ডেজ করছেন । পড়ুয়াদের সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত ।
এক পড়ুয়ার অভিভাবক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরেই অপেক্ষা করছিলেন । তিনি ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, “আমি স্কুলের কাছেই থাকি । হঠাৎ চিৎকার ও কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম । খুব ভয় পেয়ে যাই । দৌড়ে আসি স্কুলের সামনে । দেখলাম কয়েকজন পড়ুয়া দৌড়ে পালাচ্ছে । প্রত্যেকের চোখেমুখেই ভয় ।”
অভিযুক্ত শাওমিনকে আটক করেছে পুলিশ । তদন্তের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ।
আজ সকালের ঘটনা আতঙ্ক তৈরি করেছে ওয়াংফু শহরে । স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন অভিভাবকরা । কিন্তু এক স্কুলের নিরপত্তারক্ষীই যখন চাকু হাতে বাচ্চাদের কোপাতে শুরু করে সেইক্ষেত্রে নিরাপত্তা কোথায় । এইসব প্রশ্নই এখন অভিভাবকদের মধ্যে । স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাঁরা ।
গত কয়েক বছরে চিনে এই ধরনের অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে । দুষ্কৃতীরা বারবার নিশানা করেছে কিন্ডারগার্টেন এবং প্রাইমালি স্কুলগুলিকেই । গত বছর সেপ্টেম্বরেও চিনের একটি প্রাইমারি স্কুলে এক দুষ্কৃতী হামলা করে । সম্প্রতিই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল সে । সেক্ষেত্রেও চাকু নিয়ে স্কুলে ঢুকে কোপাতে শুরু করে পড়ুয়াদের । আটজন পড়ুয়ার মৃত্যু হয় এবং দুইজন জখম হয় ।