ETV Bharat / international

60 থেকে 80 মিলিয়ন প্রাণ কেড়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ - Chronology of World War 2

একদিকে জার্মানি, জাপান, ইট্যালির মিলিত শক্তি । অন্যদিকে অ্যামেরিকা, ব্রিটেন ও সোভিয়েত রাশিয়া । একনজরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাক্রম ।

World War II At a Glance
প্রতীকী ছবি
author img

By

Published : Sep 1, 2020, 8:19 PM IST

অক্ষশক্তি

জার্মানি, জাপান, ইট্যালির সম্মিলিত শক্তিকে বলা হয় অক্ষশক্তি ৷ পরে অক্ষশক্তিতে যোগ দিয়েছিল বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভাকিয়া ৷

প্রধান মুখ

জার্মানি - অ্যাডলফ হিটলার, একনায়ক

জাপান - অ্যাডমিরাল হিডেকি তোজো, প্রধানমন্ত্রী

ইট্যালি - বেনিটো মুসোলিনি, প্রধানমন্ত্রী

মিত্রশক্তি

অ্যামেরিকা, ব্রিটেন ও সোভিয়েত রাশিয়া জোট বাধে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ৷ এই তিন দেশের মিলিত শক্তিকে বলা হয় মিত্রশক্তি ৷ 1939 সাল থেকে 1944 সালের মধ্যে কমপক্ষে 50 টি দেশ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছিল । 1945 সালের মধ্যে আরও 30 টি দেশ যোগ দেয় ৷ এদের মধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ব্রিটিশ কমনওয়েলথ অফ নেশনস, কানাডা, ভারত, নিউজ়িল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, চেকোস্লোভাকিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং যুগোস্লাভিয়া ।

প্রধান মুখ

অ্যামেরিকা - ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজ়ভেল্ট, প্রেসিডেন্ট

ব্রিটেন - উইনস্টন চার্চিল, প্রধানমন্ত্রী

সোভিয়েত রাশিয়া - জোসেফ স্ট্যালিন, জেনারেল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক বহুদেশীয় সংঘর্ষ হিসাবে পরিচিত ৷ 60 থেকে 80 মিলিয়ন লোকের প্রাণ নিয়েছিল এই যুদ্ধ । এরমধ্যে রয়েছে 6 মিলিয়ন ইহুদি যারা হলোকাস্টের সময় নাৎসিদের হাতে মারা গেছিল ।

প্রায় 50-55 মিলিয়ন নাগরিক মারা গেছিল এই যুদ্ধে । এছাড়া 21 থেকে 25 মিলিয়ন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছিল । আরও লাখ লাখ মানুষ আহত হয়েছে, তাদের বাড়িঘর এবং সম্পত্তি হারিয়েছে ।

1939 সাল থেকে 1945 সালের মধ্যে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর তালিকা

  • সোভিয়েত রাশিয়া - 7,500,000 মৃত্যু ও 5,000,000 জখম
  • অ্যামেরিকা - 405,399 মৃত্যু ও 670,846 জখম
  • অস্ট্রেলিয়া - 23,365 মৃত্যু ও 39,803 জখম
  • অস্ট্রিয়া - 380,000 মৃত্যু ও 350,117 জখম
  • বেলজিয়াম - 7,760 মৃত্যু ও 14,500 জখম
  • বুলগেরিয়া - 10,000 মৃত্যু ও 21,878 জখম
  • কানাডা - 37,476 মৃত্যু ও 53,174 জখম
  • চিন - 2,200,000 মৃত্যু ও 1,762,000 জখম
  • ফ্রান্স - 210,671 মৃত্যু ও 390,000 জখম
  • জার্মানি - 3,500,500 মৃত্যু ও 7,250,000 জখম
  • ব্রিটেন - 329,208 মৃত্যু ও 348,403 জখম
  • হাঙ্গেরি - 140,000 মৃত্যু ও 89,313 জখম
  • ইট্যালি - 77,494 মৃত্যু ও 120,000 জখম
  • জাপান - 1,219,000 মৃত্যু ও 295,247 জখম
  • পোল্যান্ড - 320,000 মৃত্যু ও 530,000 জখম
  • রোমানিয়া - 300,000 মৃত্যু, জখমের কোনও হিসেব নেই

অন্যান্য তথ্য

  • মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তির দেশগুলি মিলিয়ে সশস্ত্র বাহিনীতে প্রায় 70 মিলিয়ন মানুষ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ।
  • ফিনল্যান্ড কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্রশক্তি বা অক্ষেশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়নি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনাকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল ফিনল্যান্ড ।
  • 1940 সালে ফিনিশরা সোভিয়েতদের তাড়ানোর জন্য নাৎসি জার্মানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল । পরে 1944 সালে যখন ফিনল্যান্ড এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শান্তি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন আবার ফিনল্যান্ড জার্মানদের ক্ষমতাচ্যুত করতে সোভিয়েতদের সঙ্গে যোগ দেয় ।
  • সুইজ়ারল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল এবং সুইডেন যুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছিল ।
  • সোভিয়েত ইউনিয়ন এই যুদ্ধে সর্বাধিক সৈন্য হারিয়েছিল । প্রায় সাত মিলিয়ন ছাড়িয়েছিল মৃত সেনা সংখ্যা ।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মোট হতাহতের সংখ্যা কখনোই জানা যায়নি । বোমা হামলা, গণহত্যা, অনাহার এবং যুদ্ধ-সম্পর্কিত অন্যান্য কারণে বহু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ।
  • বিশ্বাস করা হয় যে যুদ্ধের সময় নাৎজ়ি শিবিরে প্রায় ছয় মিলিয়ন ইহুদি মানুষ মারা গেছিল । এছাড়াও কয়েক হাজার রোমা মানুষ এবং মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ মারা গেছিল ।
  • অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা যে কোনও জাতিকে যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র, সরঞ্জাম বা কাঁচামাল লিজ দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য এই লেন্ড-লিজ আইনটি তৈরি করা হয়েছিল ।
  • যুদ্ধে মোট 38 টি দেশ প্রায় 50 বিলিয়ন অ্যামেরিকান ডলার সহায়তা পেয়েছিল । এই আর্থিক সহায়তার সিংহভাগই গেছিল গ্রেট ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে ।
  • 1948 সালে, অ্যামেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপকে পুনর্নির্মাণের জন্য মার্শাল পরিকল্পনা তৈরি করেছিল । 18 টি দেশ খাদ্য, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য পণ্যগুলির জন্য 13 বিলিয়ন অ্যামেরিকান ডলার সাহায্য পেয়েছিল ।
  • 1974 সালের মার্চ মাস ৷ ফিলিপিনসের লুবাং দ্বীপে তল্লাশি চালিয়ে একটি জাপানি সেনা জওয়ান হিরু ওনোদাকে ধরা হয় । তাঁর প্রাক্তন কমান্ডিং অফিসারের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হওয়ার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হওয়ার পরে, তাঁকে ম্যানিলার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোসের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি । ওনোদা 91 বছর বয়সে 16 জানুয়ারী, 2014 সালে মারা যান ।

দি্বতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ক্রম

  • 1 সেপ্টেম্বর, 1939 - জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে । ডেনমার্ক, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্স জার্মানদের নিয়ন্ত্রণে আসে ।
  • 10 জুন, 1940 - জার্মানি ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয় ইট্যালি । লড়াই গ্রিস এবং উত্তর আফ্রিকাতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
  • 14 জুন, 1940 - জার্মান সেনারা প্যারিসের দিকে অগ্রসর হয় ৷
  • জুলাই, 1940 - সেপ্টেম্বর 1940 - জার্মানি এবং গ্রেট ব্রিটেন ইংল্যান্ডের উপকূলরেখা বরাবর যুদ্ধে নামে ।
  • 7 সেপ্টেম্বর, 1940-মে 1941 - লন্ডনজুড়ে রাতে জার্মান বোমারু বিমানের হামলা ৷ ইতিহাসে এই ঘটনা ব্লিটজ় নামে পরিচিত ৷
  • 22 জুন, 1941 - জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে inv
  • 7 ডিসেম্বর, 1941 - জাপান হাওয়াইয়ের পার্ল হারবারে অ্যামেরিকার নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করে ৷ আটটি যুদ্ধজাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ করেছে । জাপান ফিলিপিনসের ক্লার্ক এবং আইবার বিমানঘাঁটিগুলিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর অর্ধেকেরও বেশি বিমান ধ্বংস করে দেয় ।
  • 8 ডিসেম্বর, 1941 - জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয় অ্যামেরিকা । জাপান হংকং, গুয়াম, ওয়েক দ্বীপপুঞ্জ, সিঙ্গাপুর এবং ব্রিটিশ মালায়ায় আক্রমণ হয় ।
  • 11 ডিসেম্বর, 1941 - জার্মানি এবং ইট্যালি অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করে ।
  • 1942 - মিত্রশক্তি উত্তর আফ্রিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে অক্ষশক্তির এগোনোর পথ বন্ধ করে দেয় ।
  • ফেব্রুয়ারি 1942 - জাপান মালয় উপদ্বীপে আক্রমণ করে । সিঙ্গাপুর এক সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে ।
  • 4-6 জুন, 1942 - জাপানের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল ৷ মিডওয়ে দ্বীপ থেকে শুরু হয় আক্রমণ ৷ তবে অ্যামেরিকা এই পরিকল্পনা আগেভাগে টের পেয়ে যায় । জাপান মিডওয়েতে আক্রমণ করে এবং চারটি এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার এবং 200 টিরও বেশি বিমান এবং পাইলটকে হারায় ।
  • 19 অগাস্ট, 1942 - জার্মানি রাশিয়ায় আরও এগিয়ে যেতে থাকলে স্ট্যালিনগ্রাদের লড়াই শুরু হয়েছিল ।
  • অগাস্ট 1942 - ফেব্রুয়ারি 1943 - অ্যামেরিকার নৌসেনা প্যাসিফিক দ্বীপ গুয়াদলকানালের জন্য লড়াই করে ।
  • 23 অক্টোবর, 1942 - এল আলামেইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনারা অক্ষশক্তি সেনাদের তিউনিসিয়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দেয় ।
  • 1 ফেব্রুয়ারি, 1943 - স্ট্যালিনগ্রাদে জার্মান সেনারা আত্মসমর্পণ করে ৷ সোভিয়েতের শীতে বড় অংশে পরাজিত হয়েছিল । এই পরাজয় জার্মানির পূর্ব সীমান্তে এগোনোকে বাধা দেয় ।
  • 10 জুলাই, 1943 - মিত্র বাহিনী ইট্যালিতে অবতরণ করে ।
  • 25 জুলাই, 1943 - ইট্যালির রাজা সম্পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং মুসোলিনিকে পদচ্যুত করে গ্রেপ্তার করা হয় ।
  • নভেম্বর 1943 - মার্চ 1944 - অ্যামেরিকার নৌসেনা জাপানিদের থেকে বোগেনভিলে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ পুনরায় দখল করতে আক্রমণ করেছিল ।
  • 6 জুন, 1944 - ডি-ডে, যাতে মিত্রবাহিনী নর্ম্যান্ডিতে পাঁচটি সৈকতে অবতরণ করে : উটাহ, ওমাহা, গোল্ড, জুনো এবং তরোয়াল । অভিযানে 5000 টিরও বেশি জাহাজ, 11,000 বিমান এবং 150,000 এর বেশি জওয়ান ছিল ।
  • 25 অগাস্ট, 1944 - অ্যামেরিকান এবং ফ্রি ফরাসি বাহিনী মিলিতভাবে প্যারিসকে স্বাধীন করেছিল ।
  • 27 জানুয়ারি, 1945 - সোভিয়েত সেনা পোল্যান্ডের ক্রাকোর নিকটে অবস্থিত আউশভিটস ঘাটি শত্রুমুক্ত করে।
  • 19 ফেব্রুয়ারি - 26 মার্চ, 1945 - অ্যামেরিকান নৌসেনা ইও জিমো দ্বীপের জন্য জাপানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ।
  • 12 এপ্রিল, 1945 - জর্জিয়ার ওয়ার্ম স্প্রিংসে রুজ়ভেল্টের মৃত্যু । ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুমানের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ।
  • 25 এপ্রিল, 1945 - সোভিয়েত সেনাবাহিনী বার্লিনকে ঘিরে ফেলে ।
  • 28 এপ্রিল, 1945 - মুসোলিনি সুইজ়ারল্যান্ডে পালানোর চেষ্টা করে নিহত হন ।
  • 29 এপ্রিল, 1945 - অ্যামেরিকার সেনা জার্মানির মিউনিখের বাইরে ডাচাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পটি শত্রুমুক্ত করে।
  • 30 এপ্রিল, 1945 - হিটলার এ তাঁর স্ত্রী ইভা ব্রাণ আত্মহত্যা করেন ।
  • 7 মে, 1945 - আইজ়েনহোভারের সদর দপ্তর জার্মানির রেইমে । সেখানে একটি স্কুলে আত্মসমর্পণ করে জার্মানি । 8 মে ভিক্ট্রি ইন ইউরোপ (VE) দিবস উদযাপিত হয় ।
  • 8 মে, 1945 - ভিক্ট্রি ইন ইউরোপ দিবস পালন । আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপে যুদ্ধ শেষ হয় ।
  • 16 জুলাই, 1945 - নিউ মেক্সিকো এর আলমোগর্ডোতে পারমাণবিক বোমার প্রথম সফল পরীক্ষা ।
  • 29 জুলাই, 1945 - ট্রুমান জাপানকে হুঁশিয়ারি দেন যে শর্ত ছাড়াই আত্মসমর্পণ না করলে দেশটি ধ্বংস হয়ে যাবে । তারপরও জাপান লড়াই চালিয়ে যায় ।
  • 6 অগাস্ট, 1945 - যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত প্রথম পারমাণবিক বোমা, যার নাম ছিল লিটল বয়, জাপানের হিরোশিমাতে ফেলা হয় । প্রায় 140,000 মানুষ মারা গেছিল।
  • 9 অগাস্ট, 1945 - হিরোশিমা বোমা হামলার পরে জাপানের থেকেকোনও সাড়া না পেয়ে, দ্বিতীয় পরমাণু বোমা ফ্যাট ম্যান নাগাসাকিতে ফেলা হয় । প্রাণ হারায় 80,000 মানুষ ।
  • 14 অগাস্ট, 1945 - জাপান নিঃশর্তভাবে পটসডাম ঘোষণার শর্তাদি মেনে নিয়ে যুদ্ধ শেষ করতে সম্মত হয় । ভিক্ট্রি ওভার জাপান (V-J) ঘোষণা করা হয় ।
  • 2 সেপ্টেম্বর, 1945 - জাপান টোকিও বে- তে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ।

অক্ষশক্তি

জার্মানি, জাপান, ইট্যালির সম্মিলিত শক্তিকে বলা হয় অক্ষশক্তি ৷ পরে অক্ষশক্তিতে যোগ দিয়েছিল বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভাকিয়া ৷

প্রধান মুখ

জার্মানি - অ্যাডলফ হিটলার, একনায়ক

জাপান - অ্যাডমিরাল হিডেকি তোজো, প্রধানমন্ত্রী

ইট্যালি - বেনিটো মুসোলিনি, প্রধানমন্ত্রী

মিত্রশক্তি

অ্যামেরিকা, ব্রিটেন ও সোভিয়েত রাশিয়া জোট বাধে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ৷ এই তিন দেশের মিলিত শক্তিকে বলা হয় মিত্রশক্তি ৷ 1939 সাল থেকে 1944 সালের মধ্যে কমপক্ষে 50 টি দেশ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছিল । 1945 সালের মধ্যে আরও 30 টি দেশ যোগ দেয় ৷ এদের মধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ব্রিটিশ কমনওয়েলথ অফ নেশনস, কানাডা, ভারত, নিউজ়িল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, চেকোস্লোভাকিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং যুগোস্লাভিয়া ।

প্রধান মুখ

অ্যামেরিকা - ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজ়ভেল্ট, প্রেসিডেন্ট

ব্রিটেন - উইনস্টন চার্চিল, প্রধানমন্ত্রী

সোভিয়েত রাশিয়া - জোসেফ স্ট্যালিন, জেনারেল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক বহুদেশীয় সংঘর্ষ হিসাবে পরিচিত ৷ 60 থেকে 80 মিলিয়ন লোকের প্রাণ নিয়েছিল এই যুদ্ধ । এরমধ্যে রয়েছে 6 মিলিয়ন ইহুদি যারা হলোকাস্টের সময় নাৎসিদের হাতে মারা গেছিল ।

প্রায় 50-55 মিলিয়ন নাগরিক মারা গেছিল এই যুদ্ধে । এছাড়া 21 থেকে 25 মিলিয়ন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছিল । আরও লাখ লাখ মানুষ আহত হয়েছে, তাদের বাড়িঘর এবং সম্পত্তি হারিয়েছে ।

1939 সাল থেকে 1945 সালের মধ্যে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর তালিকা

  • সোভিয়েত রাশিয়া - 7,500,000 মৃত্যু ও 5,000,000 জখম
  • অ্যামেরিকা - 405,399 মৃত্যু ও 670,846 জখম
  • অস্ট্রেলিয়া - 23,365 মৃত্যু ও 39,803 জখম
  • অস্ট্রিয়া - 380,000 মৃত্যু ও 350,117 জখম
  • বেলজিয়াম - 7,760 মৃত্যু ও 14,500 জখম
  • বুলগেরিয়া - 10,000 মৃত্যু ও 21,878 জখম
  • কানাডা - 37,476 মৃত্যু ও 53,174 জখম
  • চিন - 2,200,000 মৃত্যু ও 1,762,000 জখম
  • ফ্রান্স - 210,671 মৃত্যু ও 390,000 জখম
  • জার্মানি - 3,500,500 মৃত্যু ও 7,250,000 জখম
  • ব্রিটেন - 329,208 মৃত্যু ও 348,403 জখম
  • হাঙ্গেরি - 140,000 মৃত্যু ও 89,313 জখম
  • ইট্যালি - 77,494 মৃত্যু ও 120,000 জখম
  • জাপান - 1,219,000 মৃত্যু ও 295,247 জখম
  • পোল্যান্ড - 320,000 মৃত্যু ও 530,000 জখম
  • রোমানিয়া - 300,000 মৃত্যু, জখমের কোনও হিসেব নেই

অন্যান্য তথ্য

  • মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তির দেশগুলি মিলিয়ে সশস্ত্র বাহিনীতে প্রায় 70 মিলিয়ন মানুষ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ।
  • ফিনল্যান্ড কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্রশক্তি বা অক্ষেশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়নি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনাকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল ফিনল্যান্ড ।
  • 1940 সালে ফিনিশরা সোভিয়েতদের তাড়ানোর জন্য নাৎসি জার্মানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল । পরে 1944 সালে যখন ফিনল্যান্ড এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শান্তি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন আবার ফিনল্যান্ড জার্মানদের ক্ষমতাচ্যুত করতে সোভিয়েতদের সঙ্গে যোগ দেয় ।
  • সুইজ়ারল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল এবং সুইডেন যুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছিল ।
  • সোভিয়েত ইউনিয়ন এই যুদ্ধে সর্বাধিক সৈন্য হারিয়েছিল । প্রায় সাত মিলিয়ন ছাড়িয়েছিল মৃত সেনা সংখ্যা ।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মোট হতাহতের সংখ্যা কখনোই জানা যায়নি । বোমা হামলা, গণহত্যা, অনাহার এবং যুদ্ধ-সম্পর্কিত অন্যান্য কারণে বহু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ।
  • বিশ্বাস করা হয় যে যুদ্ধের সময় নাৎজ়ি শিবিরে প্রায় ছয় মিলিয়ন ইহুদি মানুষ মারা গেছিল । এছাড়াও কয়েক হাজার রোমা মানুষ এবং মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ মারা গেছিল ।
  • অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা যে কোনও জাতিকে যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র, সরঞ্জাম বা কাঁচামাল লিজ দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য এই লেন্ড-লিজ আইনটি তৈরি করা হয়েছিল ।
  • যুদ্ধে মোট 38 টি দেশ প্রায় 50 বিলিয়ন অ্যামেরিকান ডলার সহায়তা পেয়েছিল । এই আর্থিক সহায়তার সিংহভাগই গেছিল গ্রেট ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে ।
  • 1948 সালে, অ্যামেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপকে পুনর্নির্মাণের জন্য মার্শাল পরিকল্পনা তৈরি করেছিল । 18 টি দেশ খাদ্য, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য পণ্যগুলির জন্য 13 বিলিয়ন অ্যামেরিকান ডলার সাহায্য পেয়েছিল ।
  • 1974 সালের মার্চ মাস ৷ ফিলিপিনসের লুবাং দ্বীপে তল্লাশি চালিয়ে একটি জাপানি সেনা জওয়ান হিরু ওনোদাকে ধরা হয় । তাঁর প্রাক্তন কমান্ডিং অফিসারের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হওয়ার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হওয়ার পরে, তাঁকে ম্যানিলার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোসের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি । ওনোদা 91 বছর বয়সে 16 জানুয়ারী, 2014 সালে মারা যান ।

দি্বতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ক্রম

  • 1 সেপ্টেম্বর, 1939 - জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে । ডেনমার্ক, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্স জার্মানদের নিয়ন্ত্রণে আসে ।
  • 10 জুন, 1940 - জার্মানি ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয় ইট্যালি । লড়াই গ্রিস এবং উত্তর আফ্রিকাতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
  • 14 জুন, 1940 - জার্মান সেনারা প্যারিসের দিকে অগ্রসর হয় ৷
  • জুলাই, 1940 - সেপ্টেম্বর 1940 - জার্মানি এবং গ্রেট ব্রিটেন ইংল্যান্ডের উপকূলরেখা বরাবর যুদ্ধে নামে ।
  • 7 সেপ্টেম্বর, 1940-মে 1941 - লন্ডনজুড়ে রাতে জার্মান বোমারু বিমানের হামলা ৷ ইতিহাসে এই ঘটনা ব্লিটজ় নামে পরিচিত ৷
  • 22 জুন, 1941 - জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে inv
  • 7 ডিসেম্বর, 1941 - জাপান হাওয়াইয়ের পার্ল হারবারে অ্যামেরিকার নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করে ৷ আটটি যুদ্ধজাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ করেছে । জাপান ফিলিপিনসের ক্লার্ক এবং আইবার বিমানঘাঁটিগুলিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর অর্ধেকেরও বেশি বিমান ধ্বংস করে দেয় ।
  • 8 ডিসেম্বর, 1941 - জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয় অ্যামেরিকা । জাপান হংকং, গুয়াম, ওয়েক দ্বীপপুঞ্জ, সিঙ্গাপুর এবং ব্রিটিশ মালায়ায় আক্রমণ হয় ।
  • 11 ডিসেম্বর, 1941 - জার্মানি এবং ইট্যালি অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করে ।
  • 1942 - মিত্রশক্তি উত্তর আফ্রিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে অক্ষশক্তির এগোনোর পথ বন্ধ করে দেয় ।
  • ফেব্রুয়ারি 1942 - জাপান মালয় উপদ্বীপে আক্রমণ করে । সিঙ্গাপুর এক সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে ।
  • 4-6 জুন, 1942 - জাপানের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল ৷ মিডওয়ে দ্বীপ থেকে শুরু হয় আক্রমণ ৷ তবে অ্যামেরিকা এই পরিকল্পনা আগেভাগে টের পেয়ে যায় । জাপান মিডওয়েতে আক্রমণ করে এবং চারটি এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার এবং 200 টিরও বেশি বিমান এবং পাইলটকে হারায় ।
  • 19 অগাস্ট, 1942 - জার্মানি রাশিয়ায় আরও এগিয়ে যেতে থাকলে স্ট্যালিনগ্রাদের লড়াই শুরু হয়েছিল ।
  • অগাস্ট 1942 - ফেব্রুয়ারি 1943 - অ্যামেরিকার নৌসেনা প্যাসিফিক দ্বীপ গুয়াদলকানালের জন্য লড়াই করে ।
  • 23 অক্টোবর, 1942 - এল আলামেইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনারা অক্ষশক্তি সেনাদের তিউনিসিয়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দেয় ।
  • 1 ফেব্রুয়ারি, 1943 - স্ট্যালিনগ্রাদে জার্মান সেনারা আত্মসমর্পণ করে ৷ সোভিয়েতের শীতে বড় অংশে পরাজিত হয়েছিল । এই পরাজয় জার্মানির পূর্ব সীমান্তে এগোনোকে বাধা দেয় ।
  • 10 জুলাই, 1943 - মিত্র বাহিনী ইট্যালিতে অবতরণ করে ।
  • 25 জুলাই, 1943 - ইট্যালির রাজা সম্পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং মুসোলিনিকে পদচ্যুত করে গ্রেপ্তার করা হয় ।
  • নভেম্বর 1943 - মার্চ 1944 - অ্যামেরিকার নৌসেনা জাপানিদের থেকে বোগেনভিলে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ পুনরায় দখল করতে আক্রমণ করেছিল ।
  • 6 জুন, 1944 - ডি-ডে, যাতে মিত্রবাহিনী নর্ম্যান্ডিতে পাঁচটি সৈকতে অবতরণ করে : উটাহ, ওমাহা, গোল্ড, জুনো এবং তরোয়াল । অভিযানে 5000 টিরও বেশি জাহাজ, 11,000 বিমান এবং 150,000 এর বেশি জওয়ান ছিল ।
  • 25 অগাস্ট, 1944 - অ্যামেরিকান এবং ফ্রি ফরাসি বাহিনী মিলিতভাবে প্যারিসকে স্বাধীন করেছিল ।
  • 27 জানুয়ারি, 1945 - সোভিয়েত সেনা পোল্যান্ডের ক্রাকোর নিকটে অবস্থিত আউশভিটস ঘাটি শত্রুমুক্ত করে।
  • 19 ফেব্রুয়ারি - 26 মার্চ, 1945 - অ্যামেরিকান নৌসেনা ইও জিমো দ্বীপের জন্য জাপানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ।
  • 12 এপ্রিল, 1945 - জর্জিয়ার ওয়ার্ম স্প্রিংসে রুজ়ভেল্টের মৃত্যু । ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুমানের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ।
  • 25 এপ্রিল, 1945 - সোভিয়েত সেনাবাহিনী বার্লিনকে ঘিরে ফেলে ।
  • 28 এপ্রিল, 1945 - মুসোলিনি সুইজ়ারল্যান্ডে পালানোর চেষ্টা করে নিহত হন ।
  • 29 এপ্রিল, 1945 - অ্যামেরিকার সেনা জার্মানির মিউনিখের বাইরে ডাচাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পটি শত্রুমুক্ত করে।
  • 30 এপ্রিল, 1945 - হিটলার এ তাঁর স্ত্রী ইভা ব্রাণ আত্মহত্যা করেন ।
  • 7 মে, 1945 - আইজ়েনহোভারের সদর দপ্তর জার্মানির রেইমে । সেখানে একটি স্কুলে আত্মসমর্পণ করে জার্মানি । 8 মে ভিক্ট্রি ইন ইউরোপ (VE) দিবস উদযাপিত হয় ।
  • 8 মে, 1945 - ভিক্ট্রি ইন ইউরোপ দিবস পালন । আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপে যুদ্ধ শেষ হয় ।
  • 16 জুলাই, 1945 - নিউ মেক্সিকো এর আলমোগর্ডোতে পারমাণবিক বোমার প্রথম সফল পরীক্ষা ।
  • 29 জুলাই, 1945 - ট্রুমান জাপানকে হুঁশিয়ারি দেন যে শর্ত ছাড়াই আত্মসমর্পণ না করলে দেশটি ধ্বংস হয়ে যাবে । তারপরও জাপান লড়াই চালিয়ে যায় ।
  • 6 অগাস্ট, 1945 - যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত প্রথম পারমাণবিক বোমা, যার নাম ছিল লিটল বয়, জাপানের হিরোশিমাতে ফেলা হয় । প্রায় 140,000 মানুষ মারা গেছিল।
  • 9 অগাস্ট, 1945 - হিরোশিমা বোমা হামলার পরে জাপানের থেকেকোনও সাড়া না পেয়ে, দ্বিতীয় পরমাণু বোমা ফ্যাট ম্যান নাগাসাকিতে ফেলা হয় । প্রাণ হারায় 80,000 মানুষ ।
  • 14 অগাস্ট, 1945 - জাপান নিঃশর্তভাবে পটসডাম ঘোষণার শর্তাদি মেনে নিয়ে যুদ্ধ শেষ করতে সম্মত হয় । ভিক্ট্রি ওভার জাপান (V-J) ঘোষণা করা হয় ।
  • 2 সেপ্টেম্বর, 1945 - জাপান টোকিও বে- তে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.