নিউ ইয়র্ক, 3 সেপ্টেম্বর : রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছেন নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি । গায়ে কোনও পোশাক নেই । পিছনে ধাওয়া করছে পুলিশ । এরপর তাঁকে ধরে মুখ ঢেকে দেওয়া হয় কাপড়ে । জোর করে মাটিতে চেপে ধরা হয় মুখ । অন্তত দুই মিনিট । অটোপ্সি রিপোর্ট জানিয়েছিল, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে । গতকাল ড্যানিয়েল প্রুড নামের ওই ব্যক্তির পরিবারের তরফে সেই ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয় । আরও একবার প্রকাশ্যে আসে কৃষ্ণাঙ্গের উপর পুলিশি বর্বরতা ।
যদিও ড্যানিয়েলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না । তবে কেন এইভাবে নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হেপাজতে নিয়ে অত্যাচার করল পুলিশ । কারণ রাস্তা দিয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় ছুটে যাচ্ছিলেন ড্যানিয়েল । আর তাই তাঁকে শাস্তি দিতে চেয়েছিল পুলিশ । ওই পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এমনই । মার্চের ঘটনা, ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় যা সম্পূর্ণ পরিষ্কার ।
রোচেস্টারে এই ঘটনার সাতদিন পর লাইফ সাপোর্ট থেকে সরানো হয় ড্যানিয়েলকে । 30 মার্চ মৃত্যু হয় তাঁর । কিন্তু তাঁর মৃত্যুর খবর সেইভাবে প্রকাশ্যে আসেনি । কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস । গতকাল তাঁর পরিবারের তরফে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হয় । পুলিশের শরীরে লাগানো ক্যামেরার এই ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করা হয় ।
ড্যানিয়েলের ভাই জো প্রুড বলেন, "ওই মানুষটি পালটা আক্রমণ করতে পারতেন না । রাস্তায় পিছ মোড়া করে থাকে ফেলে রাখা হয়েছিল । বিবস্ত্র ছিলেন । ইতিমধ্যেই তাঁর হাত বাঁধা ছিল । আরও কত ভাইয়ের মৃত্যুর পর এই সমাজ বুঝবে এইরকম হত্যা বন্ধ হওয়া উচিত ? "
ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ড্যানিয়েল প্রুড বিবস্ত্র । পুলিশ তাঁর হাত পিছমোড়া করে বেঁধেছে । সেই একইভাবে যে ভাবে জর্জ ফ্লয়েডকে বাঁধা হয়েছিল । মাটিতে উলটে ফেলে রাখা হয়েছে ড্যানিয়েলকে । ড্যানিয়েল চিৎকার করছেন । এরপরই তাঁর মাথা কাপড় দিয়ে মুড়ে ফেলে পুলিশকর্মীরা । সাধারণত কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে এইধরনের আবরণ ব্যবহার করা হচ্ছিল । যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির লালারস থেকে সংক্রমণ না ছড়ায় । একজন পুলিশকর্মী দুই হাত দিয়ে ড্যানিয়েলের মাথা রাস্তায় চেপে ধরে । বলে, "থুতু ছেটানো বন্ধ করো ।" আরও একজন পুলিশকর্মী তাঁর পিঠে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে । যন্ত্রণায় কাতড়ে ওঠেন ড্যানিয়েল । চিৎকার করেন । এরপরেই ড্যানিয়েলের মুখ থেকে জল বের হচ্ছে লক্ষ্য করে সতর্ক হয় পুলিশ ।
কিন্তু ততক্ষণে স্থির হয়ে গিয়েছেন ড্যানিয়েল । একজন পুলিশকর্মী তাঁকে ছুঁয়ে দেখে বলে, "ওর শরীর ঠাণ্ডা ।" ভিডিয়োয় দেখা যায় ড্যানিয়েলের বুকে চাপ দেওয়া হচ্ছে (CPR পদ্ধতি) । এরপর তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় । ড্যানিয়েলের অটোপ্সি রিপোর্ট জানিয়েছিল, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে ।
শিকাগোর বাসিন্দা ড্যানিয়েল কয়েকদিন আগে রোচেস্টারে এসেছিলেন পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে । কিন্তু কোনও কারণে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি । ড্যানিয়েলের ভাই পুলিশে জানান, তাঁর ভাইয়ের মানসিক সমস্যা আছে । তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন । এপ্রিল মাসে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয় । তদন্ত চলছে ।
যদিও পুলিশকর্মীরা মৃত্যুর দায় স্বীকার করতে নারাজ কিন্তু অ্যাক্টিভিস্টদের তরফে আঙুল তোলা হচ্ছে অ্যামেরিকার সমাজব্যবস্থা ও পুলিশ প্রশাসনের দিকেই । ড্যানিয়েলের ঘটনাই প্রথম না, আগেও পুলিশি হেপাজতে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে । কয়েকবছরে সেই সংখ্যাটা কম না । তাঁদের অভিযোগ, এই পুলিশকর্মীদের পাশে থাকার পরিবর্তে খুন করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ।
মাস দুই আগে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় সরব হয় অ্যামেরিকা । সেইক্ষেত্রেও একইভাবে পুলিশি হেপাজতে ঘাড়ের উপর হাঁটু চেপে ধরে জর্জকে খুন করে পুলিশকর্মী । অসংখ্য মানুষ জর্জের মৃত্যুর বিচার চেয়ে রাস্তায় নামেন । স্লোগান তোলেন, 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' । মিনেপলিস সহ একাধিক শহরে ছড়ায় প্রতিবাদের আগুন । সেই আগুন সম্পূর্ণ নেভার আগেই আবার ড্যানিয়েলের মৃত্যুর সাক্ষী থাকল অ্যামেরিকা ।
রোচেস্টারের মেয়র লাভলি ওয়ারেন বলেন, তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা এই বিষয়ে জড়িত থাকব । সবার কাছে অনুরোধ, কেউ যেন না ভাবেন আমরা বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চাইনি ।