ওয়াশিংটন, 11 সেপ্টেম্বর: 9/11-র সন্ত্রাস আমেরিকা ও বিশ্বকে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল। এঁদের মধ্যে অনেকে ছিলেন মার্কিন শাসনে ক্ষমতার অলিন্দে ৷ একই সঙ্গে সারা বিশ্বের মানুষ জেনে ছিল ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা মহম্মদ ওমরের মত জঙ্গির নাম ৷ বর্তমানে এই দু'জনই মারা গিয়েছে ৷ কিন্তু অন্যরা 11 সেপ্টেম্বর, 2001-এর পোস্টস্ক্রিপ্টের মতো জীবনযাপন করেছেন।
রুডলফ জুলিয়ানি: পাঞ্চলাইন হওয়ার আগে নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন রুডলফ জুলিয়ানি । 2001 সালে 11 সেপ্টেম্বরে এই ঘটনার সময় নিউইয়র্কের মেয়র ছিলেন তিনি ৷ যিনি 9/11 সন্ত্রাস হামলাকে জাতীয় বিপর্যয় অ্যাখ্যা দিয়ে গ্রাউন্ড জিরোতে উপস্থিত থেকে পুরো ঘটনার মোকাবিলা করেছিলেন তিনি ৷ এর ঘটনার জন্য যিনি 'আমেরিকার মেয়র' হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন ৷ পরে টাইম ম্যাগাজিন জুলিয়ানিকে বর্ষসেরা ব্যাক্তিত্ব (Person of theYear) অ্যাখ্যা দিয়েছিল ৷ 9/11 জরুরি অবস্থার কারণে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু জুলিয়ানি ব্যক্তিগত জীবনে চলে গিয়েছিলেন ৷ তিনি একটি লাভজনক সিকিউরিটি ফার্ম চালু করেছিলেন ৷ 2008 সালে প্রেসিডেন্টের জন্য রিপাবলিকান পার্টির হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ৷
বার্নাড ক্রেরিক: 9/11 সন্ত্রাস হামলার সময় যিনি ছিলেন নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার ৷ ক্রেরিক ছায়ার মতো জুলিয়ানির সঙ্গে ছিলেন ৷ অবসরের পর যিনি জুলিয়ানির সিকিউরিটি ফার্মের সঙ্গে য়ুক্ত হয়েছিলেন ৷
2003 সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ক্রেরিককে ইরাক যুদ্ধের সময় অন্তবর্তীকালীন আভ্যন্তরীণ মন্ত্রী করেছিলেন ৷ পরে 2004 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধানও হয়েছিলেন ক্রেরিক ৷
জর্জ ডব্লিউ বুশ: 9/11 সন্ত্রাস হামলার সময় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন বুশ ৷ ঘটনার তিনদিন পর গ্রাউন্ড জিরোতে গিয়ে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন 43তম মার্কিন রাষ্ট্রপতি বুশ ৷ এই ঘটনার বিশ্ব থেকে আতঙ্কবাদ ধ্বংস করতে ইরাক ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন বুশ ৷ তিনি দাবি করেছিলেন, তালিবানরা সন্ত্রাসবাদের জন্ম দেয় ৷
রিচার্ড চেনি: এই ঘটনার পর নিরপাত্তার জন্য প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে লুকিয়ে রেখেছিলেন চেনি ৷ সন্ত্রাস হামলার ভয়ে লুইসিয়ানা এবং নেব্রাস্কায় সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ 2012 সালে পাঁচবার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করে সুস্থ হয়ে মেয়ে লিজের সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছেন চেনি ৷
কলিন পাওয়েল : প্রাক্তন যুগ্ম চিফ অফ স্টাফ পাওয়েল 9/11 সন্ত্রাস হামলার পর দেশবাসীকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিলেন ৷ পরে ইরাকে মিলিটারি অ্যাকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি ৷ যার ফলে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে হত্য়া করতে সক্ষম হয়েছিল মার্কিনবাহিনী ৷
পাওয়েল ধারাবাহিকভাবে বুশের সমর্থন রক্ষা করেছেন। 2016 সালে হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করেছিলেন ৷ ২০২০ সালের গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাইডেনের সমর্থনেও কথা বলেছিলেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে রিপাবলিকান পার্টি ত্যাগ করেন।
কনডোলেজা রাইস : জর্জ বুশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন রাইস ৷ পরে কলিন পাওয়েলের উত্তরসূরি হিসেবে সেক্রেটারি অফ স্ট্রেট-এর দায়িত্ব পালন করেন ৷ পরবর্তীতে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভোস্ট, তারপর ফ্যাকাল্টি হিসেবে ফিরে আসেন। ২০১২ সালে অগাস্টা ন্যাশনাল গল্ফ ক্লাবে যোগ দেওয়ার অনুমতিপ্রাপ্ত প্রথম দুই মহিলার একজন ছিলেন রাইস।
জন অ্যাশক্রোফট: রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশের প্রথম টার্মে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন তিনি ৷ 9/11 সন্ত্রাস হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পেট্রিয়ট অ্যাক্ট (PATRIOT Act) প্রণয়ন হয়েছিল, তার অ্যাডভোকেট ছিলেন অ্যাশক্রোফট ৷ 2005 সালে অবসর নেওয়ার পর ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ৷
জন ইয়ো: 9/11 সন্ত্রাস হামলার সময় জার্স্টিট ডিপার্মেন্টের ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট অ্যার্টর্নি জেনারেল ছিলেন তিনি ৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনেক আইনি ভিত্তি প্রদান করেছিলেন ইয়ো ৷
খালিদ শেখ মহম্মদ : আল-কায়েদার প্রধান প্রচারক ছিল খালিদ শেখ মহম্মদ ৷ 9/11 কমিশনের বিচারে খালিদ ছিল 9/11 হামলার প্রধান অর্কিটেক্ট ৷ 2003 সালে সিআইএ এবং পাকিস্তানের সিক্রেট পুলিশ তাকে ধরে ৷ তারপর পোল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের সিআইএ কারাগারে ছিল খালিদ ৷ শেষ পর্যন্ত তাকে গুয়ানতানামোতে পাঠানো হয় ৷ আল-কায়দার প্রতিটি বড় অভিযানে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছিল খালিদ ৷ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমা হামলা এবং সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল আলকায়দার এই প্রচারক ৷
লিসা বিমার: 9/11 হামলার পর লিসা বিমার শোকের মুখ হয়ে ওঠেছিলেন ৷ তারপর থেকে বীরত্বের স্মারক হিসেবে পরিচিত হন তিনি ৷ তাঁর স্বামী টড ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট 93-এর যাত্রী ছিলেন ৷ ছিনতাইকারীদের হাত থেকে যাত্রীদের নিরাপদে ওয়াশিংটনে বিধ্বস্ত হওয়ার আগেই বিমানটিকে নিচে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। অন্যদের বাঁচালেও নিজে মারা যান ৷