ETV Bharat / international

একনজরে বাইডেনের শপথ-গ্রহণ অনুষ্ঠানসূচি

20 জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 46তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্থলাভিষিক্ত হবেন জো বাইডেন । আমেরিকার নতুন প্রেসডেন্টকে বরণ করে নেওয়া ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে নয়া প্রেসিডেন্টের উদ্বোধনী ভাষণ । এই অনুষ্ঠানটি সেই সময়ে হচ্ছে যার ঠিক দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন কংগ্রেস জো বাইডেনের জয়কে নিশ্চিত করার পর ট্রাম্প সমর্থকদের হিংসাত্মক আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়েছে ক্যাপিটাল ।

আজ বাইডেনের শপথ গ্রহণ
আজ বাইডেনের শপথ গ্রহণ
author img

By

Published : Jan 20, 2021, 8:05 AM IST

চলতি অতিমারীর আবহে এমনিতেই যে কোনও গণ অনুষ্ঠান হওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে । এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্যাপিটালে সাম্প্রতিক রক্তাক্ত হিংসার ঘটনা । এই জটিল পরিস্থিতিতে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে অস্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে হয়ত ইতিহাসে স্থান পেতে চলেছে ।

প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কমিটি অনুসারে এই বছরের অনুষ্ঠানের থিম হতে চলেছে ‘আমেরিকা ইউনাইটেড’ । শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ওই কমিটি ওই অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ 19 জানুয়ারি দেশজুড়ে কোভিড স্মরণ দিবস আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে । তাদের তরফ থেকে শহর এবং শহরতলীর সব বাসিন্দাদের বাড়ি আলো দিয়ে সাজাতে অনুরোধ করা হয়েছে । পাশাপাশি কোরোনা ভাইরাসের আক্রমণে 3 লাখ 85 হাজার মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু এবং জাতীয় একতার কথা মাথায় রেখে গির্জার ঘণ্টা বাজানোরও অনুরোধ করা হয়েছে ।

  • উদ্বোধন দিবস বলতে ঠিক কী বোঝায়?

নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে জিতে গেলেও জো বাইডেন সে দিনই সরকারিভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি । তার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের 20তম সংশোধন অনুযায়ী ঘোষণা করা হয় যে সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স 20 জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন ।

এর আগে আমেরিকায় নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নিতেন 4 মার্চ । 1933 সালের সংশোধনী অনুযায়ী নির্বাচন এবং শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য কমিয়ে করা হয়েছিল দুই মাসের ।

কেন এই সময় দেওয়া হয়েছে?

এই সময় আসলে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে সরল করার উদ্দেশ্যে তৈরি । আমেরিকায় একজন প্রেসিডেন্ট সর্বাধিক দু’টি মেয়াদ ওই পদে থাকতে পারেন । ওই সময়ের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিচালকমণ্ডলীকে জাতীয় নিরাপত্তা ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নথি হস্তান্তর করতে হয় । বিশেষ কিছু প্রশাসনিক কাজ করার জন্য বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে সময় দেওয়ার জন্যও বরাদ্দ থাকে ওই সময় ।

কখন, কোথায় এবং কোন সময় হবে এই অনুষ্ঠান?

সরকারিভাবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট-কে অবশ্যই উদ্বোধনী শপথ নিতে হবে । সেই প্রথা অনুযায়ী জো বাইডেন একটি ছোট অনুষ্ঠানে শপথ নেবেন । অনুষ্ঠানটি হবে আমেরিকার ক্যাপিটাল গ্রাউন্ডে সকাল 11টা ইটি (বিকেল 4টে জিএমটি) সময়ে ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করবেন আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্টস ।

অন্যদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট কমলা হ্যারিসকে আজ শপথ বাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টেরই বিচারপতি সনিয়া সোটোমেয়র । এই ঘটনা অনেক দিক থেকেই ঐতিহাসিক । এই প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ এশিয় মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন প্রথম ল্যাটিনা বিচারপতির কাছ থেকে ।

কমলা হ্যারিস নিজেই বিচারপতি সনিয়া সোটোমেয়রকে এই কাজের জন্য বেছে নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে হবু ভাইস প্রেসিডেন্টের পরিবারের তরফে । শপথ গ্রহণের সময় তিনি দু’টি বাইবেল সঙ্গে রাখবেন বলেও জানা গিয়েছে । এর মধ্যে একটি সুপ্রিম কোর্টের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিচারপতি থারগুড মার্শালের ।

এর ঠিক পরেই, দুপুর 2টো ইটি (সন্ধ্যা 7টা জিএমটি)-তে শুরু হওয়ার কথা উদ্বোধনী প্যারেড ।

রীতি অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার কথা বিদায়ী প্রেসিডেন্টেকেও । যদিও তা কোনও অবস্থাতেই বাধ্যতামূলক নয় ।

ক্যাপিটালের পশ্চিম ফ্রন্টে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাইবেলের অঙ্গীকার অনুসরণ করে একটি প্রার্থনার আয়োজন করা হবে । তারপর আমেরিকার বিখ্যাত পপ তারকা লেডি গাগা সে দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ।

এরপর থাকবে কবিতা পাঠের আসর । তারপর গ্র্যামি জয় জেনিফার লোপেজের গানের অনুষ্ঠান । এরপর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের বেথেল আফ্রিকান মেথডিস্ট এপিসকোপাল গির্জার রেভারেন্ড ডক্টর সিলভেস্টার বিম্যানের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে বিশেষ আশির্বাদের জন্য । ইনি গত 30 বছর ধরে বাইডেনদের পারিবারিক বন্ধু ।

এরপর নতুন প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট একটি সরকারি সাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন । এটিকে নতুন প্রেসিডেন্টের প্রথম সরকারি কাজ হিসাবে দেখা হয় । এর পর 1897 সালের পুরনো রীতি অনুসারে উদ্বোধনী মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন থাকবে ।

এরপর জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস ক্যাপিটলের পূর্ব প্রান্তে গিয়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ প্যারেড পরিদর্শন করবেন । বিভিন্ন নাগরিক মঞ্চ, ব্যান্ডের মাধ্যমে এরপর পেনসিলভ্যানিয়া অ্যাভিনিউ ধরে তাঁরা হোয়াইট হাউজ়ে প্রবেশ করবেন ।

ওই দিন রাতেই অনলাইনে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে হলিউড অভিনেতা জো বাইডেন, সুরকার জন বন জোভি, পপ তারকা ডেমি লোভাটো এবং জাস্টিন টিম্বারলেক একটি ভার্চুয়াল বল বাজাবেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নেটওয়ার্ক এবং কেবল চ্যানেলে 90 মিনিট ধরে এই বিশে, অনুষ্ঠান হবে সাড়ে 8টা ইটি (রাত দেড়টা জিএমটি)-তে ।

নিজেদের সোশাল মিডিয়া চ্যানেলে এই অনুষ্ঠানের লাইভ স্ট্রিম করবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কমিটি । এর সঙ্গে যোগ দেবে আমাজ়ন প্রাইম ভিডিয়ো, মাইক্রোসফট বিং, ফক্সের নিউজনাও, এটি অ্যান্ড টি-র ডাইরেক্টিভি এবং ইউ ভার্স ।

বাইডেনের শপথ গ্রহণের সময়সূচি
বাইডেনের শপথ গ্রহণের সময়সূচি
  • অন্য বারের থেকে এ বার কী বা কতটা আলাদা হতে চলেছে?

ক্ষমতার সুস্থ ও স্বাভাবিক হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে প্রথাগতভাবে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন । কিন্তু এবার সেরকম কিছু হচ্ছে না । নির্বাচনকে প্রতারণার আখ্যা দেওয়া বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার বিষয়ে ইতিমধ্যেই অসম্মত হয়েছেন । বুধবার সকালে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ঠিক আগে ওয়াশিংটন ছেড়ে ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট পরবর্তী পর্যায়ের জীবন শুরু করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ।

এ বারের অনুষ্ঠানে নতুন প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে বিপুল জন সমাগম হওয়ার কোনও রকম সম্ভাবনা নেই । ফলে সেই জনস্রোতে মিছিল করে বাইডেন, হ্যারিসদের হাঁটার সম্ভাবনাও নেই । এই দিন রাতে প্রতি বারের মতো বাইডেন, হ্যারিসরা তাঁদের স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে নাচতেও পারবেন না । তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ।

প্রথমে অবশ্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল সব অনুষ্ঠানই হবে, কিন্তু ছোট পরিসরে কম সময়ের জন্য, কোভিড সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মনীতি মেনে । কিন্তু সব হিসাব গণ্ডগোল করে দিয়েছে 6 জানুয়ারির হিংসার ঘটনা । ওই দিন ক্যাপিটালে উগ্র ট্রাম্প সমর্থকদের রক্তাক্ত হামলার পর পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে ।

ওয়াশিংটন ডিসি-কে ইতিমধ্যেই কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়েছে । জন সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে জাতীয় মল এবং ওয়াশিংটন মনুমেন্ট । 20 তারিখ ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছে 21 হাজার ন্যাশনাল গার্ডকে । এ ছাড়াও ডিসি-তে উপস্থিত থাকবেন সেখানকার পুলিশ এবং একাধিক ফেডারেল এজেন্সির সদস্যরা ।

  • কোন কোন জায়গায় মিল থাকবে ?

পূর্বসূরিদের মতোই জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ে নিজেদের অফিসের বাইরেই শপথ নেবেন । ওই অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি বিশেষ ওয়েবসাইটের মতে সেখানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন । ওই ওয়েবসাইট অনুসারে সেখানে তিনি, ‘অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল, দেশ পুনর্গঠন এবং দেশের ক্ষত মেরামত’ নিয়ে বক্তব্য পেশ করবেন ।

এরপর জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস প্রথামাফিক ‘পাস ইন রিভিউ’ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং সব শাখার সেনাদের নিরীক্ষণ করবেন । এটা আসলে কম্যান্ডার ইন চিফ পদের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মাত্র ।

এর পর জো বাইডেন, ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, কমলা হ্যারিস এবং সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডগলাস এমহোফ আরলিংটন ন্যাশনাল সেমেট্রিতে যাবেন । সেখানে গিয়ে অজানা সেনাদের সমাধিতে শ্রদ্ধা প্রকাশ করবেন তাঁরা । সেখানে তাঁদের সঙ্গ দেবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিন্টন এবং প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, লরা বুশ ও হিলারি ক্লিন্টন ।

  • তা হলে সেখানে ঠিক কী কী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে?

ওয়াশিংটন ডিসি এবং সব প্রদেশের রাজধানীতে এ বারের অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের সশস্ত্র বিক্ষোভ এবং হামলার আগাম সতর্কতা জারি করেছে এফবিআই । জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে ইউএস ক্যাপিটালের বাইরে প্রাচীরের উপর কাঁটাতারের বন্ধন দেওয়া হয়েছে ।

ওয়াশিংটন ডিসি-র মেয়র মারিয়েল বাউজার আগামী 21 জানুয়ারি পর্যন্ত শহরে আপৎকালীন ব্যবস্থা জারি করেছেন । এর ফলে বাসিন্দাদের বাড়ির ভিতরেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । খোলা যাবে না দোকানও । সরকারিভাবে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, ‘ ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও তাঁর সমর্থকদের তাতিয়ে চলেছেন এই কথা বলে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবৈধ ।’

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে সাধারণত ক্যাপিটল থেকে লিঙ্কন মেমোরিয়াল হয়ে ন্যাশনাল মলে পৌঁছয় উৎসাহিত জনতা । কিন্তু এ বার বহু রাস্তা, মনুমেন্ট, সরকারি ভবন সাধারণের জন্য বন্ধ থাকছে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেও ।

ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত 15 হাজার ন্যাশনাল গার্ড ক্যাপিটালে পৌঁছে গিয়েছেন । তবে এত কিছুর পরেও 20 জানুয়ারি এবং তার পরবর্তী সময়ে টেনশন থাকবেই ।

চলতি অতিমারীর আবহে এমনিতেই যে কোনও গণ অনুষ্ঠান হওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে । এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্যাপিটালে সাম্প্রতিক রক্তাক্ত হিংসার ঘটনা । এই জটিল পরিস্থিতিতে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে অস্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে হয়ত ইতিহাসে স্থান পেতে চলেছে ।

প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কমিটি অনুসারে এই বছরের অনুষ্ঠানের থিম হতে চলেছে ‘আমেরিকা ইউনাইটেড’ । শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ওই কমিটি ওই অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ 19 জানুয়ারি দেশজুড়ে কোভিড স্মরণ দিবস আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে । তাদের তরফ থেকে শহর এবং শহরতলীর সব বাসিন্দাদের বাড়ি আলো দিয়ে সাজাতে অনুরোধ করা হয়েছে । পাশাপাশি কোরোনা ভাইরাসের আক্রমণে 3 লাখ 85 হাজার মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু এবং জাতীয় একতার কথা মাথায় রেখে গির্জার ঘণ্টা বাজানোরও অনুরোধ করা হয়েছে ।

  • উদ্বোধন দিবস বলতে ঠিক কী বোঝায়?

নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে জিতে গেলেও জো বাইডেন সে দিনই সরকারিভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি । তার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের 20তম সংশোধন অনুযায়ী ঘোষণা করা হয় যে সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স 20 জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন ।

এর আগে আমেরিকায় নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নিতেন 4 মার্চ । 1933 সালের সংশোধনী অনুযায়ী নির্বাচন এবং শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য কমিয়ে করা হয়েছিল দুই মাসের ।

কেন এই সময় দেওয়া হয়েছে?

এই সময় আসলে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে সরল করার উদ্দেশ্যে তৈরি । আমেরিকায় একজন প্রেসিডেন্ট সর্বাধিক দু’টি মেয়াদ ওই পদে থাকতে পারেন । ওই সময়ের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিচালকমণ্ডলীকে জাতীয় নিরাপত্তা ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নথি হস্তান্তর করতে হয় । বিশেষ কিছু প্রশাসনিক কাজ করার জন্য বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে সময় দেওয়ার জন্যও বরাদ্দ থাকে ওই সময় ।

কখন, কোথায় এবং কোন সময় হবে এই অনুষ্ঠান?

সরকারিভাবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট-কে অবশ্যই উদ্বোধনী শপথ নিতে হবে । সেই প্রথা অনুযায়ী জো বাইডেন একটি ছোট অনুষ্ঠানে শপথ নেবেন । অনুষ্ঠানটি হবে আমেরিকার ক্যাপিটাল গ্রাউন্ডে সকাল 11টা ইটি (বিকেল 4টে জিএমটি) সময়ে ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করবেন আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্টস ।

অন্যদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট কমলা হ্যারিসকে আজ শপথ বাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টেরই বিচারপতি সনিয়া সোটোমেয়র । এই ঘটনা অনেক দিক থেকেই ঐতিহাসিক । এই প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ এশিয় মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন প্রথম ল্যাটিনা বিচারপতির কাছ থেকে ।

কমলা হ্যারিস নিজেই বিচারপতি সনিয়া সোটোমেয়রকে এই কাজের জন্য বেছে নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে হবু ভাইস প্রেসিডেন্টের পরিবারের তরফে । শপথ গ্রহণের সময় তিনি দু’টি বাইবেল সঙ্গে রাখবেন বলেও জানা গিয়েছে । এর মধ্যে একটি সুপ্রিম কোর্টের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিচারপতি থারগুড মার্শালের ।

এর ঠিক পরেই, দুপুর 2টো ইটি (সন্ধ্যা 7টা জিএমটি)-তে শুরু হওয়ার কথা উদ্বোধনী প্যারেড ।

রীতি অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার কথা বিদায়ী প্রেসিডেন্টেকেও । যদিও তা কোনও অবস্থাতেই বাধ্যতামূলক নয় ।

ক্যাপিটালের পশ্চিম ফ্রন্টে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাইবেলের অঙ্গীকার অনুসরণ করে একটি প্রার্থনার আয়োজন করা হবে । তারপর আমেরিকার বিখ্যাত পপ তারকা লেডি গাগা সে দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ।

এরপর থাকবে কবিতা পাঠের আসর । তারপর গ্র্যামি জয় জেনিফার লোপেজের গানের অনুষ্ঠান । এরপর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের বেথেল আফ্রিকান মেথডিস্ট এপিসকোপাল গির্জার রেভারেন্ড ডক্টর সিলভেস্টার বিম্যানের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে বিশেষ আশির্বাদের জন্য । ইনি গত 30 বছর ধরে বাইডেনদের পারিবারিক বন্ধু ।

এরপর নতুন প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট একটি সরকারি সাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন । এটিকে নতুন প্রেসিডেন্টের প্রথম সরকারি কাজ হিসাবে দেখা হয় । এর পর 1897 সালের পুরনো রীতি অনুসারে উদ্বোধনী মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন থাকবে ।

এরপর জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস ক্যাপিটলের পূর্ব প্রান্তে গিয়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ প্যারেড পরিদর্শন করবেন । বিভিন্ন নাগরিক মঞ্চ, ব্যান্ডের মাধ্যমে এরপর পেনসিলভ্যানিয়া অ্যাভিনিউ ধরে তাঁরা হোয়াইট হাউজ়ে প্রবেশ করবেন ।

ওই দিন রাতেই অনলাইনে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে হলিউড অভিনেতা জো বাইডেন, সুরকার জন বন জোভি, পপ তারকা ডেমি লোভাটো এবং জাস্টিন টিম্বারলেক একটি ভার্চুয়াল বল বাজাবেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নেটওয়ার্ক এবং কেবল চ্যানেলে 90 মিনিট ধরে এই বিশে, অনুষ্ঠান হবে সাড়ে 8টা ইটি (রাত দেড়টা জিএমটি)-তে ।

নিজেদের সোশাল মিডিয়া চ্যানেলে এই অনুষ্ঠানের লাইভ স্ট্রিম করবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কমিটি । এর সঙ্গে যোগ দেবে আমাজ়ন প্রাইম ভিডিয়ো, মাইক্রোসফট বিং, ফক্সের নিউজনাও, এটি অ্যান্ড টি-র ডাইরেক্টিভি এবং ইউ ভার্স ।

বাইডেনের শপথ গ্রহণের সময়সূচি
বাইডেনের শপথ গ্রহণের সময়সূচি
  • অন্য বারের থেকে এ বার কী বা কতটা আলাদা হতে চলেছে?

ক্ষমতার সুস্থ ও স্বাভাবিক হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে প্রথাগতভাবে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন । কিন্তু এবার সেরকম কিছু হচ্ছে না । নির্বাচনকে প্রতারণার আখ্যা দেওয়া বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার বিষয়ে ইতিমধ্যেই অসম্মত হয়েছেন । বুধবার সকালে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ঠিক আগে ওয়াশিংটন ছেড়ে ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট পরবর্তী পর্যায়ের জীবন শুরু করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ।

এ বারের অনুষ্ঠানে নতুন প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে বিপুল জন সমাগম হওয়ার কোনও রকম সম্ভাবনা নেই । ফলে সেই জনস্রোতে মিছিল করে বাইডেন, হ্যারিসদের হাঁটার সম্ভাবনাও নেই । এই দিন রাতে প্রতি বারের মতো বাইডেন, হ্যারিসরা তাঁদের স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে নাচতেও পারবেন না । তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ।

প্রথমে অবশ্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল সব অনুষ্ঠানই হবে, কিন্তু ছোট পরিসরে কম সময়ের জন্য, কোভিড সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মনীতি মেনে । কিন্তু সব হিসাব গণ্ডগোল করে দিয়েছে 6 জানুয়ারির হিংসার ঘটনা । ওই দিন ক্যাপিটালে উগ্র ট্রাম্প সমর্থকদের রক্তাক্ত হামলার পর পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে ।

ওয়াশিংটন ডিসি-কে ইতিমধ্যেই কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়েছে । জন সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে জাতীয় মল এবং ওয়াশিংটন মনুমেন্ট । 20 তারিখ ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছে 21 হাজার ন্যাশনাল গার্ডকে । এ ছাড়াও ডিসি-তে উপস্থিত থাকবেন সেখানকার পুলিশ এবং একাধিক ফেডারেল এজেন্সির সদস্যরা ।

  • কোন কোন জায়গায় মিল থাকবে ?

পূর্বসূরিদের মতোই জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ে নিজেদের অফিসের বাইরেই শপথ নেবেন । ওই অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি বিশেষ ওয়েবসাইটের মতে সেখানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন । ওই ওয়েবসাইট অনুসারে সেখানে তিনি, ‘অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল, দেশ পুনর্গঠন এবং দেশের ক্ষত মেরামত’ নিয়ে বক্তব্য পেশ করবেন ।

এরপর জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস প্রথামাফিক ‘পাস ইন রিভিউ’ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং সব শাখার সেনাদের নিরীক্ষণ করবেন । এটা আসলে কম্যান্ডার ইন চিফ পদের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মাত্র ।

এর পর জো বাইডেন, ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, কমলা হ্যারিস এবং সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডগলাস এমহোফ আরলিংটন ন্যাশনাল সেমেট্রিতে যাবেন । সেখানে গিয়ে অজানা সেনাদের সমাধিতে শ্রদ্ধা প্রকাশ করবেন তাঁরা । সেখানে তাঁদের সঙ্গ দেবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিন্টন এবং প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, লরা বুশ ও হিলারি ক্লিন্টন ।

  • তা হলে সেখানে ঠিক কী কী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে?

ওয়াশিংটন ডিসি এবং সব প্রদেশের রাজধানীতে এ বারের অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের সশস্ত্র বিক্ষোভ এবং হামলার আগাম সতর্কতা জারি করেছে এফবিআই । জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে ইউএস ক্যাপিটালের বাইরে প্রাচীরের উপর কাঁটাতারের বন্ধন দেওয়া হয়েছে ।

ওয়াশিংটন ডিসি-র মেয়র মারিয়েল বাউজার আগামী 21 জানুয়ারি পর্যন্ত শহরে আপৎকালীন ব্যবস্থা জারি করেছেন । এর ফলে বাসিন্দাদের বাড়ির ভিতরেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । খোলা যাবে না দোকানও । সরকারিভাবে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, ‘ ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও তাঁর সমর্থকদের তাতিয়ে চলেছেন এই কথা বলে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবৈধ ।’

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে সাধারণত ক্যাপিটল থেকে লিঙ্কন মেমোরিয়াল হয়ে ন্যাশনাল মলে পৌঁছয় উৎসাহিত জনতা । কিন্তু এ বার বহু রাস্তা, মনুমেন্ট, সরকারি ভবন সাধারণের জন্য বন্ধ থাকছে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেও ।

ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত 15 হাজার ন্যাশনাল গার্ড ক্যাপিটালে পৌঁছে গিয়েছেন । তবে এত কিছুর পরেও 20 জানুয়ারি এবং তার পরবর্তী সময়ে টেনশন থাকবেই ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.