পাথর দৌড়ায় ৷ বড়সড় পাথরের চাই নিজে থেকে স্থান পরিবর্তন করে ৷ সে যে জায়গা বদল করেছে তার দাগ পর্যন্ত রয়ে যায় ৷ মানুষ সরায় না ৷ অথচ প্রস্তর খণ্ডগুলো কখন সরে তাও বোঝা যায় না ! সব মিলিয়ে ভূতুরে পাথর হয়ে উঠল ওদের নাম ! এ হল অ্যামেরিকার ডেথ ভ্যালির হ্রদ অঞ্চল রেসট্রাক প্লায়ার কথা ৷
ডেথ ভ্যালি আর রেসট্রাক প্লায়া, দুই নামেই রয়েছে রহস্য ৷ ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে ভালোই শীত পড়লেও সে আসলে পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চল ৷ প্রাণহীন উপত্যকা ৷ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাঁচার নূন্যতম রসদও দেয় না মৃত্যু উপত্যকা ৷ আবহাওয়া অফিসের নথি বলছে, এখাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্র 56.7 ডিগ্রি অবধি হতে পারে ৷ বছরের গড় তাপমাত্রা 47 ডিগ্রি ৷ বৃ্ষ্টি হয় না বললেই চলে ৷ এইসব কারণেই এ অঞ্চল বাস্তবিক ডেথ ভ্যালি ৷ অ্যামেরিকার ডেথ ভ্যালির কাছে হার মেনেছে আফ্রিকার সাহারা, কালাহারি, এমনকী মধ্যপ্রাচ্যের সাহারা অবধি ৷ বালি, কাঁকড়, পাথর, ন্যাড়া পাহাড় ছাড়া কিছুই নেই এখানে ৷ সেই পাথরই চলমান ! আর পাথরগুলির বাসস্থানের নাম রেসট্রাক প্লায়া ৷
রেসট্রাক প্লায়া হ্রদ হলেও তা জলহীন ৷ এই জলশূন্য হ্রদের বুকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু পাথর ৷ বিস্ময়করভাবে তারা নিজে থেকে স্থান পরিবর্তন করে ৷
কখনও সরলরেখায়, কখনও বক্রপথে স্থান পরিবর্তন করে পাথরগুলি ৷ এমনও হয়, যে দুটি পাথর সমান্তরাল পথে কিছুদূর গিয়ে দিক পরিবর্তন করল ৷ এমনকী পুরোনো অবস্থানেও ফিরে আসে ! প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়, শুষ্ক হ্রদের বুকে গাড়ির চাকার মতো চলমান পাথরের দাগ ৷ একটি দুটি নয়, শয়ে পাথর এভাবে স্থান পরিবর্তন করে ৷ কিন্তু কেন? কীভাবে?
কেউ বলেন, ভূমিতলে চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে, কারো মতে, রেসট্রাক প্লায়ার নির্জন রাতে আকাশ থেকে নেমে আসে ভিনগ্রহের যান ৷ এলিয়েনরাই এসব কাণ্ড করে ৷ অনেকের মত, এসবই অপদেবতার কাজ ৷ সাধারণ মানুষের এইসব ভাবনার পাশাপাশি ভূবিজ্ঞানীরাও নেমেছিলেন রহস্য উদ্ঘাটনে ৷ একাধিক ব্যাখাও দেন তাঁরা ৷ যদিও সেই ব্যাখ্যাতে বিজ্ঞানীরা নিজেরাও সন্তুষ্ঠ হচ্ছিলেন না ৷ এরইমধ্যে গ্রহবিজ্ঞানী ব়্যালফ লরেন্সও রেসট্রাক প্লায়া নিয়ে গবেষণায় নামেন ৷ এরপর দিনের পর দিনে ডেথ ভ্যালিতে গিয়ে পড়ে থাকেন সমুদ্রবিজ্ঞানী রিচার্ড নরেস ও তাঁর ইঞ্জিনিয়ার ভাই জেমস নরিস ৷
অবশেষে 2013 সালে রিচার্ড ও জেমস অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখেন ৷ দেখেন, মরুভূমির মতো শুষ্ক হ্রদটির তিনভাগের একভাগ জুড়ে রয়েছে বরফের পাতলা চাদর ! প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতেও তাবু খাঁটিয়ে ফেলেন তাঁরা ৷ এভাবেই মত্যু উপত্যকায় কাটতে থাকে দিনের পর দিন ৷
20 ডিসেম্বর, 2013 ৷ সকালে রোদ উঠতেই বরফের পাতলা স্তর ভাঙতে থাকে ৷ রিচার্ড ও জেমস শক্তিশালী বাইনোকুলার দিয়ে দেখেন, বিভিন্ন মাপের পাথরগুলি বরফের প্লেটের ধাক্কায় ধীর ধীর সরতে শুরু করেছে !