নিউইয়র্ক, 12 জুন : আমেরিকায় প্রথম গবেষণামূলককোভিড -19 ভ্যাকসিনেরপরীক্ষা শুরু হবে আগামী মাস থেকে। অন্যদিকে চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ব্রাজিলও শুরুকরছে কোরোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োগ।
সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসকে দমন করতে যে ভ্যাকসিনের আবিষ্কার করার প্রচেষ্টাচলছে, তামানবদেহ পরীক্ষা করতে কতজন স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেনস্বাস্থ্যকর্মীরা।
মর্ডানাইনস্টিটিউটের তরফ থেকে গতকাল জানানো হয়, তারা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথেরসহযোগিতায় যে ভ্যাকসিনটি তৈরি করছেন, তা আমেরিকায় 30000 মানুষের উপর পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগকরা হবে। এরমধ্যে কিছু জনের শরীরে আসল ওষুধ এবং কিছু জনের শরীরে নকল ওষুধ প্রয়োগকরা হবে। গবেষকরা এই দুই দলের মধ্যে তুলনা করে দেখবেন, কোন দল সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
চিনেতুলনামূলকভাবে কোরোনা সংক্রমনের সংখ্যা কম হওয়ায়, সিনোভ্যাক বায়োটেক তাদের আবিষ্কারেরঅন্তিম পরীক্ষার জন্য ব্রাজিলের দ্বারস্থ হয়েছে, যা ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে সর্বোচ্চসংক্রামিত দেশ। সাও পাওলো সরকারের তরফ থেকে বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়, সিনোভ্যাক যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণামূলকভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে, যা আগামীমাস থেকে 9000 ব্রাজিলবাসীদেরউপর প্রয়োগ করা হবে।
সাওপাওলো সরকারের মুখপাত্র জোয়াও ডোরিয়া জানান, যদি এই পরীক্ষা সফল হয় তাহলেলক্ষাধিক ব্রাজিলবাসীকে প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব হবে।
সারাবিশ্বজুড়ে প্রায় এক ডজন কোভিড -19 সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পরীক্ষার প্রাথমিকস্তরে রয়েছে। NIH, অক্সফোর্ডবিশ্ববিদ্যালয় সহ আরও অনেকগুলি গবেষণাকে সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটিও ব্রাজিলের কয়েক হাজারস্বেচ্ছাসেবকের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগগুলি যে সফল হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
NIH-রভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর ডঃ জন মাসকোলা ন্যাশনাল একাডেমি অফ মেডিসিনেরএকটি বৈঠকে বৃহস্পতিবার জানান, যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলে, তাহলে এই বছরের শেষ ভাগের মধ্যে কোনভ্যাকসিন কোরোনা প্রতিরোধে সক্ষম, তার সম্ভাব্য উত্তর পাওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞরাজানিয়েছেন, ভ্যাকসিনমানবদেহে একটি ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দেয়।একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন শটের বিভিন্ন প্রয়োগ প্রয়োজন যাতে কোন প্রক্রিয়াটিকাজ করবে, তাচিহ্নিত করা যায়।
সিনোভ্যাকেরভ্যাকসিনটি একটি ল্যাবে কোরোনাভাইরাস তৈরি করে, তাকে মেরে তৈরি করা হয়েছে।নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে পোলিও, ফ্লু এবং অন্যান্য রোগের প্রতিষেধকআবিষ্কার করা সম্ভব হলেও একটি ল্যাবে একটি ভাইরাস তৈরি করা যথেষ্ট কঠিন এবং এতেল্যাবরেটরিতে বিশেষ সুরক্ষার প্রয়োজন হয়।
NIH এবংমডার্নার উদ্যোগে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনে কোনও আসল ভাইরাস নেই। এটিতে স্পাইক প্রোটিন, যা কোরোনা ভাইরাসের উপরিভাগকে ঘিরেরাখে, তারজেনেটিক কোড ব্যবহার করে ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগেদেহের কোষগুলি জেনেটিক কোড ব্যবহার করে একটি স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে, যার বিরুদ্ধে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কাজ করে। এর ফলে পরবর্তী সময়ে মানব দেহ যদি আসল ভাইরাসের সম্মুখীন হয়, তার বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম হবে। mRNA ভ্যাকসিন তৈরি করা সহজ হলেও এটি একটিনতুন ও অপ্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি।
কোনওকম্পানির তরফ থেকেই প্রাথমিক স্তরে কিভাবে প্রতিষেধক প্রয়োগ, তার কোনও ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াএবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিভিন্ন ডোজে কীভাবে সাড়া দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনও ফলাফল প্রকাশ করাহয়নি।
সম্ভাব্যভ্যাকসিন কাজ করার কোন প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও, বিভিন্ন কম্পানি এবং সরকার লাখ লাখভ্যাকসিন জমা করতে শুরু করেছে, যাতে ফলাফল মিলতেই সাধারণ মানুষের উপর তা প্রয়োগ করা যায়।
আমেরিকাতে' অপারেশনওয়ার্প স্পিড' নামকএকটি প্রোগ্রাম জানুয়ারি মাসের মধ্যে 300 মিলিয়ন ডোজ সংগ্রহ করার লক্ষ্যরেখেছে। সিনোভ্যাকের সঙ্গে ব্রাজিলের চুক্তি অনুযায়ী, ইনস্টিটিউটো বুটাটান এই চাইনিজভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া শিখবে।