কলকাতা, 19 জানুয়ারি: বাংলা গান তথা বাংলা সিনেমার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম অঞ্জন দত্ত ৷ বাঙালির বিনোদনের একটি বড় অংশ হয়ে যেমন রয়েছেন রঞ্জনা, কালো মেম, বেলা বোসরা তেমনই রয়েছে 'বো ব্য়ারাকস ফর এভার', 'ম্যাডলি বাঙালি', 'দ্য বঙ কানেকশন', 'দত্ত ভার্সেস দত্ত'-এর মতো ছবিও ৷ অঞ্জন মানে তাই গান আর ছায়াছবির এক অনবদ্য ককটেল যার স্বাদ কোনওদিন ভোলা যায় না ৷ আজ এই কিংবদন্তির শিল্পীর 69তম জন্মদিন’ (Anjan Dutt 69th Birthday) ৷ আসুন এই দিনে ফিরে দেখি তাঁর শিল্পময় অগোছালো জীবনের খুঁটিনাটি(Remembering Anjan Dutt on His Birthday) ৷
খাদের ধারের রেলিংটা: হ্যাঁ অঞ্জন দত্ত মানেই দার্জিলিং (Journey of Anjan Dutt) ৷ এই শিল্পীর নিজের ছোটবেলাটাও কেটেছে দার্জিলিংয়ের পাহাড় আর কুয়াশা ঘেরা পরিসরেই ৷ সেখানেই সেন্টপলস স্কুলে শুরু তাঁর পড়াশোনা ৷ অঞ্জন দত্তর নিজস্বতার বৃত্তটাই গড়ে ওঠে কুয়াশা মাখা নীল পাহাড়িতে ৷ তাই যে কোনও শুটিংয়ের ডাক এলেই তিনি ফিরে যেতে চান দার্জিলিংয়ের কাছে ৷ একথা বারবার নানা ইন্টারভিউতে নিজেই স্বীকার করেছেন এই মানুষটি ৷
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়: 'আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়', এই গানে যে আকাশের কথা বলেছেন অঞ্জন তা যদি অভিনয়ের আকাশ ধরে নিই তবে সেই আকাশে ডানা মেলার সুযোগ তিনি প্রথম পান সাতের দশকে ৷ 'ওপেন থিয়েটার' নামক একটি নাট্যদলের সঙ্গে তাঁর কাজের শুরু ৷ জঁ পল সাত্রে, ব্রেখট, পিটার ওয়েসিস-এর নাটকের হাত ধরেই প্রথম মরুভূমিতে মরুদ্যানের সন্ধান পান অঞ্জন ৷
এরপর 1981 সাল থেকে তাঁর অভিনয় শুরু সিনেমায় ৷ তাঁর প্রথম ছবির নাম 'চালচিত্র' ৷ পরিচালক মৃণাল সেনের হাত ধরে তাঁর অভিনয় কেরিয়ার শুরু হয় ৷ এই ছবির জন্য় ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ নবাগত শিল্পীর পুরস্কারও লাভ করেন তিনি ৷ তারপর থেকে আজ পর্যন্ত কখনও মৃণাল সেন, কখনও অপর্না সেন, কখনও ঋতুপর্ণ ঘোষ বা কখনও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে অভিনেতা হিসাবে ৷ আজও সমানে তিনি কাজ করে চলেছেন ওয়েব এবং বড় পর্দায় ৷ 'একদিন অচানক', 'যুগান্ত', 'অন্তরীণ', 'মিস্টার এন্ড মিসেস আইয়ার', 'নির্বাক', 'চিত্রাঙ্গদা', 'দেখা', 'উমা'-র মতো ছবিতে নজর কেড়েছেন তিনি ৷
1998 সালে তিনি এসেছিলেন পরিচালনার জগতে ৷ সেখানেও সোনা ফলিয়েছেন তিনি ৷ পরবর্তী সময়ে 'বড়দিন', 'বো ব্য়ারাকস ফর এভার', 'ম্যাডলি বাঙালি', 'দ্য বঙ কানেকশন', 'দত্ত ভার্সেস দত্ত'-এর মতো ছবি তো বটেই তাঁর হাত ধরেই বাঙালি উপহার পেয়েছে দারুণ সফল একটি ব্যোমকেশ সিরিজও ৷
ছেলেটা চান করছে রাস্তায় আমি খুঁজে পাই আমার গান: শুধু অভিনয় নয় গানের জগতেও অঞ্জন এক পরিচিত মুখ ৷ তিনি একাধিকবার স্বীকার করেছেন সুমন যদি গান লিখতে না আসতেন তিনিও গান গাইবার সাহস পেতেন না ৷ আর বাঙালি হারাতো তার চেনা কলকাতা শহরের বাইরের এক কলকাতাকে চেনার সুযোগ ৷ ঠিক যে কারণে রাস্তায় চান করা ছেলেটা, দাসবাবুর কেবিনে বসে গল্প করা কপোত-কপোতী, টলিউডের একস্ট্রার চরিত্র কিংবা স্যাক্সোফোন বাদকের কাহিনি উঠে আসে বাংলা গানে ৷ কিন্তু এসবের যাত্রাটা ঠিক কবে শুরু ৷ 1994 সালে মুক্তি পায় 'শুনতে কি চাও' অ্যালবাম ৷ এরপর 'পুরোনো গিটার', 'অসময়', 'রঙ পেন্সিল'-সহ একাধিক অ্যালবামের জন্ম হয়েছে তাঁর হাত ধরে ৷
আরও পড়ুন: ক্ষিতদা থেকে ফেলুদা, জন্মদিনে ফিরে দেখা 'বঙ্গ জীবনের অঙ্গ' সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে
আজও তাই বাংলা বিনোদনের জগতে এক অনন্য় নাম অঞ্জন ৷ তিনি বাঙালির কথা তুলে ধরেছেন একটু অন্যরকমভাবে ৷ তাঁর গানে ছবিতে বারবার ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির গল্প ৷ শুধু সফলতার গল্প বলে তাঁর গান তা কিন্তু নয় ৷ বরং একইসঙ্গে তুলে ধরে ব্যর্থতার কাহিনিও(HBD Anjan Dutt) ৷