কলকাতা, 27 মে: গ্ল্যামার জগতে একের পর এক আত্মহত্যা (Actress death)৷ সুশান্ত সিং রাজপুত, জিয়া খানের মতো সেলিব্রিটিকে অকালেই হারানোর ক্ষত আজও দগদগে বলিউডে ৷ সম্প্রতি সেই প্রবণতা দেখা দিয়েছে টলিপাড়াতেও ৷ পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার (Bidisha De Majumdar death) ও তাঁর বান্ধবী অভিনেত্রী মঞ্জুষা নিয়োগী ৷ গত 12 দিনে পরপর আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন টলিউডের এই তিন উঠতি অভিনেত্রী ৷ তদন্ত প্রক্রিয়া সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে ৷ কেন বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা ? মানসিক অবসাদ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, খ্যাতি চূড়ায় পৌঁছতে না-পারাই কি আত্মহননের পথে ঠেলে দিচ্ছে পল্লবী-বিদিশাদের ? মনোবিদ সন্দীপ্তা সেনের (Psychologist Sandipta on Actress death) থেকে এই সব প্রশ্নেরই উত্তর জানার চেষ্টা চালিয়েছে ইটিভি ভারত (Pallavi Dey)৷
2020-21-এ করোনার আবহে মৃত্যুমিছিলের স্মৃতি এখনও তাজা ৷ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড, ক্রীড়া জগৎ, সাহিত্য জগৎ - করোনার থাবা থেকে রেহাই পায়নি কেউ । একটু বাঁচার চেষ্টায় কী ভীষণ লড়াই, আর্তনাদ । ইষ্টদেবতার কাছে একটাই প্রার্থনা - আমি বাঁচতে চাই, আমার প্রিয়জনদের বাঁচাতে চাই (Sandipta Sen explains reasons of suicide)।
আজ করোনা অনেকটাই পিছু হটেছে মানুষের সাবধানতা, তৎপরতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের সৌকর্যে । আর এই সময়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা সামনে আসছে প্রতিদিন । আত্মহত্যার প্রবণতা একপ্রকার মানসিক ব্যাধি । আর এই ব্যাধি আজ তীব্র আকার ধারণ করেছে । কিন্তু কেন এই প্রবণতা দিন দিন অতিমাত্রায় গ্রাস করছে আজকের প্রজন্মকে ? কাজ কম পাওয়া, ব্রেক আপ, মানসিক অবসাদ আগেও তো ছিল । কিন্তু এই হারে আত্মহত্যার প্রবণতা চোখে পড়ত না । বরং ঘুরে দাঁড়ানো, পেশা বদল এই শব্দগুলোই কাজ করত তখন অধিক পরিমাণে । আজকের সামাজিক মাধ্যমই কি তাহলে 'আত্মসম্মানবোধ', 'ফেস লস'-অর অনুভূতি অতিমাত্রায় বাড়িয়ে দিল ?
আরও পড়ুন: Manjusha Neogi death: মনের মতো কাজ পাচ্ছিলেন না মঞ্জুষা, দাবি পরিবারের
অনেকের মতে, সাম্প্রতিককালে ভাইরাল হওয়ার কিংবা জনপ্রিয় হওয়ার সহজ রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে আত্মহত্যা । তবে, তা মরণোত্তর । শিল্পীর জীবদ্দশায় জানার উপায় নেই, তিনি কতটা বিখ্যাত হয়ে গেলেন আত্মহত্যা করার পর । এ সব অবশ্য বিতর্কিত প্রসঙ্গ । তবে, কেন আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ? তা নিয়ে কী বলছেন মনোবিদ সন্দীপ্তা সেন ? তা জানার চেষ্টা চালিয়েছে ইটিভি ভারত ৷
সন্দীপ্তা সেনের কথায়, "অনেকগুলো কারণ আছে । ঠিক কোন কারণে আত্মহত্যা করেছে তা বলা বেশ মুশকিল । মানুষের মন খুব জটিল একটা জিনিস । কেউ আবেগপ্রবণ হয়ে করে ফেলে । কেউ বা পরিকল্পনামাফিক করে । কেউ বা কয়েক সেকেন্ডের সিদ্ধান্তে করে ফেলে ৷ মূলত দুটি কারণ - আবেগ আর পরিকল্পনা । যে মানুষটা আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছে, তার সঙ্গে কারণটাও চলে গিয়েছে । এই আবেগ আর পরিকল্পনার কারণ হিসেবে কয়েকটা দিকের কথা বলতেই পারি । 2020 সাল থেকে কোভিডের জন্য মানুষের মনে যে ডিপ্রেশন, বিষণ্ণতা, অস্থিরতা, ইনসিকিউরিটি, নেগেটিভ ইমোশনস অবচেতনমনে জায়গা করে নিয়েছে, কেউ সেগুলিকে সামলে উঠতে পারে, কেউ পারে না । না সামলাতে পারলেই সে ডিপ্রেশনে চলে যায় । আর তখন সুইসাইড করে । তা ছাড়াও ধৈর্য, অপেক্ষা আজকের মানুষের জীবন থেকে চলে গিয়েছে বা কমে গিয়েছে । আমাদের আগের জেনারেশনের অনেক বেশি পরিমাণে ধৈর্য ছিল । তারা অপেক্ষা করতে পারত । আমরা পারি না । আগেও ডিভোর্স হত, ব্রেক আপ হত ৷ তখন অ্যাডজাস্টমেন্টও ছিল সম পরিমাণে । আজ কোনওটাই নেই । হতে পারে তা অত্যধিক প্রতিযোগিতা বা ব্যস্ততার কারণে ।"
আরও পড়ুন: ফের অভিনেত্রীর রহস্যমৃত্যু, বিদিশার পর পাটুলিতে উদ্ধার তাঁর বান্ধবীর ঝুলন্ত দেহ
সন্দীপ্তার কথায়, সোশ্যাল মিডিয়া এ ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করে । তাঁর মতে, "কিছুদিন আগেও মানুষ 3 মিনিটের রিল বা ভিডিয়ো ধৈর্য ধরে দেখত । আজ আর দেখে না । 15-20 সেকেন্ডের বেশি দেখে না । অল্পেই ধৈর্য, ভাল লাগা হারিয়ে ফেলে তারা । নিজেকে সেরা প্রমাণ করার ইঁদুর দৌড়ে ছুটছে সবাই ৷ আরেকটা দিকও বলব, কোভিডের পরে অনেকেই বলেছে আর্থিক অনটনে আছি, খারাপ আছি । অথচ রেস্তোরাঁয় কাজের দিনগুলিতেও ভিড় দেখেছি । একই সঙ্গে মানুষ অহরহ মোবাইল ফোন বদলাচ্ছে । এবং সেগুলো বেশ দামিও । আর্থিক অনটনের কথাই যদি বলা হয়, তা হলে তো লোভ সম্বরণ করা উচিত । সেটা কেউ করে না ৷ দামি ফোন কেউ ইএমআই-তে কেনে, কেউ বা নগদ টাকায় । ফলে, মানসিক চাপও বাড়ে । আর্থিক চাপের ফলে অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নেয় । সুতরাং আত্মহত্যার আসল কী কারণ তা যে কাজটা করে সে-ই জানে । আর সেই কারণ তার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলে যায় । তা নিয়ে তদন্ত হয়, রহস্য উন্মোচন হয় বা ধরে নেওয়া হয় যে সে ওই কারণেই আত্মহত্যা করেছে । কিন্তু আসল কারণ কেউ জানে না ।"
আরও পড়ুন: Mysterious death of Actress Pallavi Dey : পল্লবী দে-র রহস্যমৃত্যুতে ধৃত লিভ-ইন পার্টনার সাগ্নিক