কলকাতা, 12 মে: অনেকদিন পর বাংলা বিনোদনের ধারাবাহিকের পর্দায় ধরা দিয়েছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। 'মেয়েবেলা' ধারাবাহিকে পর্দায় বীথিকা মিত্রর চরিত্র অল্পদিনেই সকলের মনে জায়গা করে নিতে পারলেও গল্প ও চিত্রনাট্যের বেশ কিছু জায়গা নিয়ে আপত্তি তুলতে থাকেন রূপা। ফলে নিজের চরিত্র নিয়ে খুশি হতে না-পেরে চুপচাপ সরে গিয়েছেন পর্দার বীথিকা । স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছিল, কেন এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত ? এই ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "আমাকে দিয়ে অন্ন ফেলে দেওয়ার দৃশ্য করতে বলা হয়েছিল, বৌমাকে ধরে মারতে বলা হয়েছিল, সোনার চেন বাথরুমের ড্রেনে ফেলে দিতে বলা হয়েছিল । ড্রেন থেকে চেন পড়ে গেলে তা আর পাওয়া যায় ? কেউ তা ঘেটে খোঁজে ? কিন্তু পাওয়া গেল ? আজকের দিনে কোনও ভদ্র পরিবারে কেউ ছেলের বউকে ধরে মারে ? আমরা এসব দেখালে দর্শকও যদি উদ্বুদ্ধ হয় ? কী বার্তা দিচ্ছি আমরা দর্শককে ?"
অভিনেত্রী আরও বলেন, "আমাকে বলা হয়েছিল আমাকে নাকি ভালো শাশুড়ি মনে হচ্ছে। বীথিকা ভালো নয় । চোখে-মুখে খারাপ ভাব আনতে হবে। চোখ ব্যথা হয়ে যাচ্ছিল আমার । আমি ছেড়ে দেওয়ার পর অনেক মেসেজ পেয়েছি । অনেকেই বীথিকে বা রূপাকে এরকমভাবে মানতে পারেননি। এরপরে হয়ত চরিত্রটা আরেকটু ভালো হবে। অনুশ্রী ভালো করবে। মেয়েবেলার রিংটোনটা আমার ফোনে থেকে যাবে। তবে, অনেক স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। নিজের মতো সেজেছিলাম। প্রোডিউসার, ইউনিট, অভিনেতারা সকলে খুব ভালো ছিল। পরে এদের সঙ্গে নিশ্চয়ই কাজ করব সুযোগ এলে। ভালো হোক মেয়েবেলার ।"
এই বিষয়ে ধারাবাহিকের নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল ইটিভি ভারত । চিত্রনাট্যকার শুভময় বিশ্বাস বলেন, "আমার দিদির উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার আছে । চরিত্রটা নিয়ে দিদি আগেই সবটা জানতেন । তাও এই সিদ্ধান্ত হঠাৎই নিলেন । কিন্তু খুব আনন্দের সঙ্গেই তো আমরা কাজটা করতাম। তবে, মেয়েবেলর মেয়েবেলার মতোই চলছে। আগামীতে আরও ভালো হোক, আপনি অনেক ইন্টারভিউতে বলেছেন। আপনি এই ধারাবাহিকের ভালো চান দেখে আমরা খুশি। আমাদেরও কোনও রাগ নেই আপনার উপরে। কিন্তু খারাপ লাগে যখন বেশ কিছু পোর্টাল তাদের রিচ বাড়ানোর জন্য যা খুশি লিখে আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে । তারা লিখছে, মেয়েবেলার টিআরপি তলানিতে । তারা জানে আমরা এখন কত টিআরপি-তে ? আমরা ভবিষ্যতেও কাজ করতে চাই আপনার সঙ্গে ৷ আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি করানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে কিছু পোর্টালে । এটা বন্ধ হোক আমরা চাই ।"
আরও পড়ুন: 'ঋতাভরী নই, এখন মিস ফাটাফাটি', একান্ত আড্ডায় দাবি নায়িকার
ধারাবাহিকের অন্যতম নারী চরিত্র এলা মিত্র অর্থাৎ সাহানা সেন বলেন, "খুব মিস করছি রূপাদিকে। যেদিন জানতে পারি দিদি আর শ্যুটিং ফ্লোরে আসবেন না, ফোন করেছিলাম । প্রায় আট মিনিট শুধু কেঁদে গিয়েছেন দিদি । রূপাদিকে একটাই কথা বলার, মেয়েবেলা তো আগের মতোই আছে । যেমন বলা হয়েছিল তেমনই আছে । তোমার অসুবিধা মনে হলে আরেকটু সময় দিতে পারতে । হঠাৎ ছেড়ে চলে না গেলেই পারতে । তবে অনুশ্রীদি এসেছে । আমাদের খুব পছন্দের । তাঁকেও আমরা আপন করে নিয়েছি । আবার রূপাদিকেও মিস করছি। আমার বিশ্বাস দিদিও মিস করবে আমাদের।"
ধারাবাহিকের গল্পকার তথা ক্রিয়েটিভ হেড দেবিকা মুখোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে বলেন, "বীথি চরিত্রটা কেমন তা সবটা জেনেই রূপাদি এসেছিলেন চরিত্রটাতে অভিনয় করতে। বীথিকা মিত্র একজন শিক্ষিতা, পজিটিভ মানুষ। সে বাড়ির সবাইকে ভালোবাসে। সকলের প্রতি দায়িত্বশীল। কিন্তু ছেলের বিয়ে যখন চাঁদনির পরিবর্তে মৌয়ের সঙ্গে হয়, যাকে সে সবথেকে বেশি অপছন্দ করে এবং কেন করে তারও একটা শক্তপোক্ত কারণ দেখানো হয়েছে ধারাবাহিকে। এই সবই জানা ছিল রূপা দি'র। তাই এভাবে ছেড়ে দেওয়ার কারণ আমরা জানি না। এই নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। হঠাৎ ছেড়ে দেব বলায় সাময়িক অসুবিধা আমাদের হয়নি বলব না। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম না উনি ছেড়ে দিলেন নাকি, ভাবার সময় নিলেন।"
পাশাপাশি দেবিকা মুখোপাধ্যায় আরও জানান, রিপিট টেলিকাস্ট দেখানো হবে না বলেই টিআরপি'র দিকে না তাকিয়ে চিত্রনাট্য লিখে যাওয়া হয়েছে । তবে, ধারাবাহিক চলছে ধারাবাহিকের ছন্দে। কারোর মধ্যে কোনও মনোমালিন্য নেই। কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই, এইটুকু বলা যেতে পারে।"