কলকাতা, 17 জানুয়ারি: আজ 17 জানুয়ারি । মহানায়িকার দশম প্রয়াণ দিবস । মৃত্যুর অনেক আগে থেকেই নিজেকে ঘরে বন্দি করেছিলেন টলিউডের গ্রেটা গার্বো (সুইডিশ আমেরিকার ব্যক্তিত্বময়ী অভিনেত্রী) সুচিত্রা সেন । নায়িকার ইমেজ ছেড়ে তিনি বেরোতে চাননি কখনও । আজ প্রয়াণ দিবসে তাঁর নায়িকা থেকে মহানায়িকা হওয়ার সফরে জার্নি ফিরে দেখতে চায় ইটিভি ভারত ।
1931 সালের 6 এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনায় জন্ম মহানায়িকার । হিসেব অনুযায়ী 1947 সালে মাত্র 16 বছর বয়সে রমা দাশগুপ্তর বিয়ে হয় দিবানাথ সেনের সঙ্গে । বিবাহিত জীবনের তিন বছর যেতে না যেতেই দিবানাথ সেন তাঁকে নিয়ে আসেন সিনেমাজগতে । দিবানাথ সেনের তখন ওঠাবসা ছিল এই জগতের মানুষদের সঙ্গে । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাংবাদিকের লেখা থেকে জানা যায়, স্ত্রীকে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন দিবানাথ সেন । কিন্তু রমার গলা পছন্দ হয়নি রেকর্ডিং স্টেশনের কর্তাব্যক্তিদের । কারণ তাঁর উচ্চারণে রয়েছে পূর্ববঙ্গীয় টান । দিবানাথ হাল ছাড়েননি সে দিন ।
1950 সালে রমাকে প্রথম দাঁড়াতে হয় মুভি ক্যামেরার সামনে । ছবির নাম 'সংকেত'। পরিচালক অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায় । সেই ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় নির্বাচিত হন রমা সেন । খবরটা তাঁকে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সহকারী পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের উপর । ফোনে রমা সেন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি অভিনয় করবেন না । দিবানাথকেও জানান, সিনেমাজগৎ তাঁর জন্য নয় । সেই ছবির নায়িকা হন প্রীতি ধাড়া ।
এর পর দু-এক বছর দিবানাথকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল স্ত্রীকে সিনেমায় আসার জন্য রাজি করাতে । 1952 সালে 'শেষ কোথায়' বলে একটি ছবিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রমা দাশগুপ্ত রাজি হন অভিনয় করতে । সেটির শুটিং অবশ্য মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় । এর দীর্ঘ 22 বছর পর নানাভাবে পুনর্নির্মাণ করে 'শ্রাবণ সন্ধ্যা' নাম নিয়ে ছবিটি মুক্তি পায় 1974 সালে । তবে, 'শ্রাবণ সন্ধ্যা' মুক্তির অনেক আগে রমা সেন করে ফেলেছেন সুকুমার দাশগুপ্তর 'সাত নম্বর কয়েদি'।
দিবানাথ প্রায়ই স্টুডিয়ো পাড়ায় নিয়ে যেতেন রমাকে । অনেকে ফিরিয়েও দিয়েছেন তাঁকে। কিন্তু সুকুমার দাশগুপ্তর পছন্দ হয় রমাকে। সিনেমার পক্ষে রমা নামটা ভালো লাগেনি পরিচালকের । তিনি রমা সেনের নতুন নামকরণ করেন সুচিত্রা সেন । নামটা পছন্দ হয় মহানায়িকারও । অনেকের মতে, 'সাড়ে চুয়াত্তর' মহানায়িকার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। কিন্তু 'সাড়ে চুয়াত্তর' মুক্তির ঠিক 13 দিন আগে মুক্তি পায় 'সাত নম্বর কয়েদি'। এরপর একের পর এক ছবিতে দেখা মিলত সুচিত্রা সেনের । চাহুনি আর হাসির জাদুতে দর্শকের হৃদয়হরণ করতে বেশি সময় লাগেনি রমা সেনের ।
1954 সাল থেকে উত্তম-সুচিত্রা ম্যাজিকের জন্ম । তবে, তাঁদের একসঙ্গে প্রথম ছবি 'মরণের পরে'। সেখানে দুজনেই পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন । উত্তম-সুচিত্রা জুটির রোম্যান্টিক ম্যাজিক শুরু 'অগ্নিপরীক্ষা' থেকে । এই জুটিকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেওয়ার পিছনে অফুরান অবদান হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠজাদু । বাংলা সিনেমার হরগৌরী হয়ে উঠেছিলেন উত্তম-সুচিত্রা । একসঙ্গে 30টি ছবি করেন উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন । এই জুটির শেষ ছবি 'প্রিয় বান্ধবী'। টানা বাইশ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা । হয়ে উঠেছিলেন বাংলার আইকন । মহানায়ক আর মহানায়িকা হিসেবেই আজও উচ্চারিত হয় তাঁদের নাম ।
যেদিন থেকে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়েছেন, সেদিন থেকে আর নিজের ফেলে আসা সোনার দিনগুলি নিয়ে মাথা ঘামাননি মহানায়িকা । তাঁকে বাঙালির গ্রেটা গার্বো বলা হয় । কিন্তু গ্রেটার জীবনের রহস্য আজ আর লুকায়িত নয় । প্রায় 100টি গবেষণার বই আছে তাঁকে নিয়ে । সুচিত্রা সেনের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা নেই। কেননা নিজের ব্যাপারে কোনওদিনই সেভাবে মুখ খোলেননি তিনি । সবটাই জানা যায় তাঁর সময়ের সাংবাদিদের লেখা এবং তাঁর খুব ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে।
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">
আরও পড়ুন: