ETV Bharat / entertainment

Kishore Kumar-Birendra Krishna Bhadra: আজ বাঙালির দুই প্রিয় কণ্ঠের জন্মদিন! ফিরে দেখা দুই মহাজীবন

আর কটা দিন বাদেই বাঙালির 'দুগ্গো পুজো' ৷ আর দুর্গাপুজো বললেই দু'টি কণ্ঠের কথা মনে পড়ে বাঙালির ৷ তাঁর একটি যদি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের হয় অন্যটি অবশ্যই কিশোর কুমারের ৷ আজ দুই কিংবদন্তির জন্মদিন (Remembering Kishore Kumar And Birendra Krishna Bhadra)৷ আর এটাও বলা যায় আজ বাঙালির কানেরও 'জন্মদিন' ৷

author img

By

Published : Aug 4, 2022, 12:23 PM IST

Updated : Aug 4, 2022, 12:31 PM IST

Etv Bharat
Etv Bharat

কলকাতা, 4 অগস্ট: আর কটা দিন বাদেই বাঙালির 'দুগ্গো পুজো' ৷ রথে টান পড়েছে মানেই পুজোর ঢাকেও কাঠি পড়েছে ৷ খুঁটি পুজোর পাট মিটেছে সেই কবেই ৷ অনেক জায়গায় মন্ডপ তৈরির কাজও এগিয়েছে অনেকটা ৷ কিন্তু একজন মানুষকে যদি বাঙালির দুর্গা পুজোর সমার্থক হিসেবে ধরা হয় তাহলে বলাই বাহুল্য তিনি হবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র ৷ মহালয়ার দিনে দেবীপক্ষের সূচনায় তাঁর কণ্ঠেই ঘুম ভাঙে বাংলার গ্রাম শহরের ৷ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে ছাড়া বাঙালির মহালয়া অসম্পূর্ণ (Two legendary figure born on the same day) ৷

আজ সেই বিশেষ মানুষটির জন্মদিন ৷ আজকের দিনে 1905 সালে আহিরীটোলায় জন্ম বীরেনবাবুর ৷ বাবা ছিলেন পরাধীন ভারতের অন্যতম রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ৷ পেশায় আবার তিনি ভাষাতত্ত্ববিদ ৷ বীরেনবাবুর প্রথম সংস্কৃত শিক্ষা অবশ্য় ঠাকুরমা যোগমায়া দেবীর কাছে ৷ আট বছর বয়স ছোট্ট এই ছেলেটি শুরু করেন চণ্ডীপাঠ ৷ এরপর নানা কর্মকাণ্ড চলেছে ছোটবেলা থেকেই ৷ তবে তাঁর স্মৃতি শক্তি এবং কণ্ঠের তারিফ তিনি শুনতে পেতেন সেই সময় থেকেই ৷

যদিও কর্মজীবনের শুরুটা কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণের রেডিয়োতে হয়নি ৷ বরং রেলওয়ে সদর দফতরেই তাঁর কর্মজীবন শুরু 1928 সালে ৷ তবে রেডিয়োর প্রতি আকর্ষণ তাঁর শুরু থেকেই ছিল ৷ তাই বিকেলে ছুটির পর তাঁকে ঠিক পাওয়া যেত রেডিয়োর বন্ধুদের আড্ডায় ৷ রেডিয়োয় তাঁর কর্মজীবন শুরুর আগেই অবশ্য় পরশুরামের লেখা এবং বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র পরিচালিত নাটক ‘চিকিৎসা সংকট’ সম্প্রচার হয় রেডিয়োয় ৷ সেখান থেকেই ধীরে ধীরে পথ প্রশস্ত হল তাঁর জন্য় ৷ ব্যাস! সেই বছর এমনই এক অগস্টে রেডিয়ো পেল তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠকে ৷ আগে থেকেই ছিলেন বাণী কুমার ভট্টাচার্য, পঙ্কজ কুমার মল্লিকরা ৷ সঙ্গে যুক্ত হলেন আরেক রত্ন ৷ রেডিয়োতে যোগদানের পর দু'ঘণ্টার সঙ্গীত আলেখ্য়ের অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দ্দিনীতে যোগ দেন তিনি ৷

তবে তাঁর যে চণ্ডী পাঠে বাঙালি মাতোয়ারা তা অবশ্য় শুরু হয় আরও বেশ কিছুদিন পরে ৷ আগে নাকি সুরেলা কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের প্রচলন ছিল না ৷ একদিন হঠাৎই সুরেলা কণ্ঠে 'মহিষাসুরমর্দ্দিনী' কথ্য এবং চণ্ডীপাঠ করতে শুরু করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ৷ আসলে মজার ছলেই এমনটা করেছিলেন ৷ আর তাই মাঝপথে থেমেও যান তিনি ৷ কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে ৷ রেকর্ডিং রুম ছেড়ে ছুটে এসেছেন বাণীকুমার ৷ তিনিই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে বলেন, "আরে থামলে কেন! বেশ তো হচ্ছিল ৷ থামলে কেন?..." ব্যাস সেই ইতিহাস তৈরির শুরু ৷ আর ফিরে তাকাতে হয়নি দরাজ কণ্ঠের এই মানুষটিকে ৷ 1991 সালে বাংলা হারিয়েছে তার প্রিয় কন্ঠকে ৷ তারপর অনেক ঝড়ঝাপটা এসেছে ৷ গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল ৷ তবে বাঙালির কাছে রেডিয়ো মানেই হয়ে গিয়েছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ... আজ এই কিংবদন্তির 116তম জন্ম বার্ষিকী ৷

বাঙালির আরেক প্রিয় কণ্ঠেরও জন্মবার্ষিকী আজ ৷ মহালয়া যদি শুরু হয় বীরেন্দ্র কৃষ্ণকে দিয়ে তাহলে পুজোর মণ্ডপের রাজা তিনি ৷ তা সে 'তোমায় পড়েছে মনে'-ই হোক বা 'সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা'৷ আবার মায়ের বিদায় বেলায় যখন সদ্য় সদ্য ভেঙেছে 'পুজোর প্রেম', তখন 'নয়ন সরসী কেন ভরেছে জলে' ছাড়া কি চলে? কিংবা ধরুণ 'আশা ছিল ভালবাসা ছিল' ৷ কিশোর কুমারের আসল নাম আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায় ৷ বাংলা তাঁর এই সুরেলা কণ্ঠটিকে পেয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জন্মের ঠিক 24 বছর পর ৷ 1929 সালের 4 অগস্ট বর্তমান মধ্য়প্রদেশে জন্ম কিশোরের ৷ বাংলা, হিন্দি, মারাঠি মিলিয়ে দশটিরও বেশি ভাষায় শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি ৷ মোট 8 বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে ৷

পাঁচের দশকে তাঁর কণ্ঠে কুন্দন লাল সায়গলের গান শুনেই তাঁকে ছবিতে গাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন শচীন দেববর্মণ ৷ এভাবেই দেবানন্দের গলায় কিশোরের যাত্রা শুরু ৷ তবে তাঁর চরম সাফল্যের দিন এল 1969 সালে ৷ 'আরাধনা' ছবিতে ‘কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা’ এবং 'মেরে সপনো কি রানি' সামনে আসার পর আর ফিরে দেখতে হয়নি কিশোরকে ৷

আরও পড়ুন: হিন্দি ছবির দুরবস্থার জন্য তুমিই দায়ী, আমিরকে তোপ করণের

এহেন কিশোর কুমার যাঁর গান ছাড়া দুর্গা পুজোই ফিকে মনে হয় তিনি প্রথম কবে পুজোর গানে কণ্ঠ দেন জানেন ? সালটা 1967 ৷ মুকুল দত্তের কথায় "একদিন পাখি উড়ে যাবে আকাশে" গানে সুর দিলেন রাহুল দেব বর্মণ ৷ গাইলেন কিশোর ৷ পরে এর হিন্দি ভার্সনও তিনিই গাইলেন 'অনামিকা' ছবিতে ৷ তবে 1969 সালে 'মনে পড়ে রুবি রায়'-ও কিন্তু গাওয়ার কথা ছিল কিশোরেরই ৷ এই গানের বিখ্যাত হিন্দি ভার্সন 'মেরি ভিগি ভিগি সি' গাইলেও বাংলাটি গাইতে রাজি হননি তিনি ৷ এরপরে অবশ্য পুজোর গানে কিশোরকে আর সেভাবে পায়নি বাঙালি ৷

কলকাতা, 4 অগস্ট: আর কটা দিন বাদেই বাঙালির 'দুগ্গো পুজো' ৷ রথে টান পড়েছে মানেই পুজোর ঢাকেও কাঠি পড়েছে ৷ খুঁটি পুজোর পাট মিটেছে সেই কবেই ৷ অনেক জায়গায় মন্ডপ তৈরির কাজও এগিয়েছে অনেকটা ৷ কিন্তু একজন মানুষকে যদি বাঙালির দুর্গা পুজোর সমার্থক হিসেবে ধরা হয় তাহলে বলাই বাহুল্য তিনি হবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র ৷ মহালয়ার দিনে দেবীপক্ষের সূচনায় তাঁর কণ্ঠেই ঘুম ভাঙে বাংলার গ্রাম শহরের ৷ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে ছাড়া বাঙালির মহালয়া অসম্পূর্ণ (Two legendary figure born on the same day) ৷

আজ সেই বিশেষ মানুষটির জন্মদিন ৷ আজকের দিনে 1905 সালে আহিরীটোলায় জন্ম বীরেনবাবুর ৷ বাবা ছিলেন পরাধীন ভারতের অন্যতম রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ৷ পেশায় আবার তিনি ভাষাতত্ত্ববিদ ৷ বীরেনবাবুর প্রথম সংস্কৃত শিক্ষা অবশ্য় ঠাকুরমা যোগমায়া দেবীর কাছে ৷ আট বছর বয়স ছোট্ট এই ছেলেটি শুরু করেন চণ্ডীপাঠ ৷ এরপর নানা কর্মকাণ্ড চলেছে ছোটবেলা থেকেই ৷ তবে তাঁর স্মৃতি শক্তি এবং কণ্ঠের তারিফ তিনি শুনতে পেতেন সেই সময় থেকেই ৷

যদিও কর্মজীবনের শুরুটা কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণের রেডিয়োতে হয়নি ৷ বরং রেলওয়ে সদর দফতরেই তাঁর কর্মজীবন শুরু 1928 সালে ৷ তবে রেডিয়োর প্রতি আকর্ষণ তাঁর শুরু থেকেই ছিল ৷ তাই বিকেলে ছুটির পর তাঁকে ঠিক পাওয়া যেত রেডিয়োর বন্ধুদের আড্ডায় ৷ রেডিয়োয় তাঁর কর্মজীবন শুরুর আগেই অবশ্য় পরশুরামের লেখা এবং বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র পরিচালিত নাটক ‘চিকিৎসা সংকট’ সম্প্রচার হয় রেডিয়োয় ৷ সেখান থেকেই ধীরে ধীরে পথ প্রশস্ত হল তাঁর জন্য় ৷ ব্যাস! সেই বছর এমনই এক অগস্টে রেডিয়ো পেল তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠকে ৷ আগে থেকেই ছিলেন বাণী কুমার ভট্টাচার্য, পঙ্কজ কুমার মল্লিকরা ৷ সঙ্গে যুক্ত হলেন আরেক রত্ন ৷ রেডিয়োতে যোগদানের পর দু'ঘণ্টার সঙ্গীত আলেখ্য়ের অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দ্দিনীতে যোগ দেন তিনি ৷

তবে তাঁর যে চণ্ডী পাঠে বাঙালি মাতোয়ারা তা অবশ্য় শুরু হয় আরও বেশ কিছুদিন পরে ৷ আগে নাকি সুরেলা কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের প্রচলন ছিল না ৷ একদিন হঠাৎই সুরেলা কণ্ঠে 'মহিষাসুরমর্দ্দিনী' কথ্য এবং চণ্ডীপাঠ করতে শুরু করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ৷ আসলে মজার ছলেই এমনটা করেছিলেন ৷ আর তাই মাঝপথে থেমেও যান তিনি ৷ কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে ৷ রেকর্ডিং রুম ছেড়ে ছুটে এসেছেন বাণীকুমার ৷ তিনিই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে বলেন, "আরে থামলে কেন! বেশ তো হচ্ছিল ৷ থামলে কেন?..." ব্যাস সেই ইতিহাস তৈরির শুরু ৷ আর ফিরে তাকাতে হয়নি দরাজ কণ্ঠের এই মানুষটিকে ৷ 1991 সালে বাংলা হারিয়েছে তার প্রিয় কন্ঠকে ৷ তারপর অনেক ঝড়ঝাপটা এসেছে ৷ গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল ৷ তবে বাঙালির কাছে রেডিয়ো মানেই হয়ে গিয়েছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ... আজ এই কিংবদন্তির 116তম জন্ম বার্ষিকী ৷

বাঙালির আরেক প্রিয় কণ্ঠেরও জন্মবার্ষিকী আজ ৷ মহালয়া যদি শুরু হয় বীরেন্দ্র কৃষ্ণকে দিয়ে তাহলে পুজোর মণ্ডপের রাজা তিনি ৷ তা সে 'তোমায় পড়েছে মনে'-ই হোক বা 'সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা'৷ আবার মায়ের বিদায় বেলায় যখন সদ্য় সদ্য ভেঙেছে 'পুজোর প্রেম', তখন 'নয়ন সরসী কেন ভরেছে জলে' ছাড়া কি চলে? কিংবা ধরুণ 'আশা ছিল ভালবাসা ছিল' ৷ কিশোর কুমারের আসল নাম আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায় ৷ বাংলা তাঁর এই সুরেলা কণ্ঠটিকে পেয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জন্মের ঠিক 24 বছর পর ৷ 1929 সালের 4 অগস্ট বর্তমান মধ্য়প্রদেশে জন্ম কিশোরের ৷ বাংলা, হিন্দি, মারাঠি মিলিয়ে দশটিরও বেশি ভাষায় শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি ৷ মোট 8 বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে ৷

পাঁচের দশকে তাঁর কণ্ঠে কুন্দন লাল সায়গলের গান শুনেই তাঁকে ছবিতে গাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন শচীন দেববর্মণ ৷ এভাবেই দেবানন্দের গলায় কিশোরের যাত্রা শুরু ৷ তবে তাঁর চরম সাফল্যের দিন এল 1969 সালে ৷ 'আরাধনা' ছবিতে ‘কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা’ এবং 'মেরে সপনো কি রানি' সামনে আসার পর আর ফিরে দেখতে হয়নি কিশোরকে ৷

আরও পড়ুন: হিন্দি ছবির দুরবস্থার জন্য তুমিই দায়ী, আমিরকে তোপ করণের

এহেন কিশোর কুমার যাঁর গান ছাড়া দুর্গা পুজোই ফিকে মনে হয় তিনি প্রথম কবে পুজোর গানে কণ্ঠ দেন জানেন ? সালটা 1967 ৷ মুকুল দত্তের কথায় "একদিন পাখি উড়ে যাবে আকাশে" গানে সুর দিলেন রাহুল দেব বর্মণ ৷ গাইলেন কিশোর ৷ পরে এর হিন্দি ভার্সনও তিনিই গাইলেন 'অনামিকা' ছবিতে ৷ তবে 1969 সালে 'মনে পড়ে রুবি রায়'-ও কিন্তু গাওয়ার কথা ছিল কিশোরেরই ৷ এই গানের বিখ্যাত হিন্দি ভার্সন 'মেরি ভিগি ভিগি সি' গাইলেও বাংলাটি গাইতে রাজি হননি তিনি ৷ এরপরে অবশ্য পুজোর গানে কিশোরকে আর সেভাবে পায়নি বাঙালি ৷

Last Updated : Aug 4, 2022, 12:31 PM IST

For All Latest Updates

TAGGED:

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.