কলকাতা, 17 জানুয়ারি: 'আরও কিছুক্ষণ না-হয় রহিতে কাছে...' মহানায়িকার প্রয়াণ দিবসে ঠিক এই কথাই মনে পড়ছে বাঙালির ৷ বাংলা ছবির অনুরাগীদের কাছে তিনি স্বপ্ন সুন্দরী । তাঁর চোখের ভাষায় হারিয়ে গিয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ৷ তাই তো তিনি মহানায়িকা, তিনি সুচিত্রা সেন ৷ 2014 সালের এই দিনে বাঙালিকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন বাংলা ছবির সাম্রাজ্ঞী ৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 82 বছর(Death Anniversary of Suchitra Sen) ৷ তবে সিনেমার পর্দা থেকে তিনি বিদায় নিয়েছিলেন তার বহু আগেই ৷ শেষ ছবি 'প্রণয় পাশা' আর সালটা ছিল 1978(Remembering The Glorious Career of Suchitra Sen) ৷
ঠিক 51 বছর আগে পা রেখেছিলেন সিনেমার জগতে ৷ সুচিত্রার প্রথম ছবি অবশ্য় মুক্তিই পায়নি ৷ ছবির নাম ছিল 'শেষ কোথায়' ৷ তখনও কী কেউ জানত, একদিন এই মানুষটিই উত্তমের সঙ্গে জুটি বেঁধে হয়ে উঠবেন বাঙালির হার্টথ্রব ৷ পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের হাত ধরে ঠিক এর পরের বছর মুক্তি পায় সুচিত্রার প্রথম ছবি 'সাত নম্বর কয়েদী' ৷ আর শুরু হয় এক মহানায়িকার পথ চলা ৷
সুচিত্রাই প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন ৷ অজয় করের 'সাত পাকে বাঁধা' ছবিতে তাঁর অভিনয় তাঁকে এনে দেয় মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের 'সেরা অভিনেত্রী'র সম্মান ৷ এই ছবিতে তাঁর নায়ক ছিলেন প্রয়াত কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায় ৷ সুচিত্রার খ্য়াতির একটি সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে উত্তমের সঙ্গে তাঁর অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি ৷ কবে শুরু হয় এই জুটির যাত্রা? এই জুটির যাত্রা শুরু 1953 সালে ৷ নির্মল দে পরিচালিত সেই বিখ্য়াত ছবির নাম 'সাড়ে চুয়াত্তর' ৷ বাঙালির মন জিতে নেয় এই হাস্য়রসে ঠাসা কাহিনি । আর একইসঙ্গে উত্তম-সুচিত্রা জুটিও জায়গা পেতে শুরু করে বাঙালির মনে ৷
এরপর বসন্ত চৌধুরী, প্রশান্ত কুমার থেকে শুরু করে বিকাশ রায়, অশোক কুমার পর্যন্ত অনেকের সঙ্গেই বিভিন্ন ছবিতে জুটি বেঁধেছেন সুচিত্রা কিন্তু তাঁর নায়ক হিসাবে বাঙালির মনে থেকে গিয়েছেন একজনই ৷ উত্তম কুমারের সঙ্গে 'সপ্তপদী', 'চাওয়া পাওয়া', 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত', 'জীবন তৃষ্ণা', 'পথে হল দেরী', 'হারানো সুর', 'শিল্পী', 'একটি রাত', 'সাগরিকা', 'সবার উপরে', 'শাপমোচন'-এর মতো অসংখ্য জনপ্রিয় ছবিতে নায়িকা হিসেবে কাজ করেছেন সুচিত্রা ।
শুধু বাংলা নয় হিন্দি ছবির জগতেও তিনি পা রেখেছিলেন ৷ বিমল রায়ের হাত ধরে তিনি প্রথম অভিনয় করেন দীলিপ কুমারের বিপরীতে ৷ সে ছবির নাম ছিল 'দেবদাস' ৷ আর সালটা ছিল 1955 ৷ এরপর 'মুসাফির', 'চম্পাকলি', 'মমতা'-র মতো একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি ৷ তিনি যে অন্য ধরনের ছবিতেও সমানভাবে নিজেকে ঢেলে দিতে পারতেন তার প্রমাণও তিনি রেখে গিয়েছেন তাঁর কাজেই ৷ 'হসপিটাল', 'ফরিয়াদ' কিংবা 'দেবী চৌধুরানি'-র মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় নজর কেড়েছিল সমালোচকদেরও ৷ তবে বাঙালির কাছে আজীবন সুচিত্রা সেন থেকে যাবেন মহানায়িকা হয়েই ৷ তিনি বাঙালির রূপোলি পর্দার প্রতি প্রেমের অন্য়তম কারণ ৷ তাঁর জন্য বলতেই হয়, 'আরও কিছু কথা না-হয় বলিতে মোরে...' ৷
আরও পড়ুন: সিক্যুয়ালটা হয়েই যাক অনিন্দ্যদা, ওপেন টি বায়োস্কোপের আট বছর পূর্তিতে অনুরোধ ঋদ্ধির